ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ আব্দুস সামাদ: সাতক্ষীরায় মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিনামূল্যে বিতরণের পরিবহনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্ব স্ব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সাল থেকে বিনামূল্যে বই বিতরণ করার জন্য বই প্রতি পরিবহণ খরচ দেয়া হয় ১৫ পঁয়সা। চলতি বছরে বই পরিবহনের জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কাগজে-কলমে এ টাকা বিতরণ দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন স্ব স্ব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ও সহকারী পরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, জেলায় সরকারি, বে-সরকারি, দাখিল মাদ্রাসা ও ভোকেশনালসহ ৬৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ করা হয়েছে। এ পাঠ্য বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌছাতেও সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখেরও বেশি বই বিতরণ করা হয়েছে। যার বরাদ্দ ছিল প্রায় এক লাখ ৩০হাজার টাকা। তালা উপজেলায় একশ ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার লাখ ৭২ হাজার নয়শটি বই বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ২৫৩ টাকা। কলারোয়া উপজেলায় ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন লাখ ৫৫ হাজার ৬১০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ৩৩৩ টাকা। দেবহাটা উপজেলায় ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই লাখ নয় হাজার ১৫০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ১৪৭ টাকা। শ্যামনগর উপজেলায় একশ দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৬৯০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ ছিল ৭৫ হাজার ৭২০ টাকা। আশাশুনি উপজেলায় ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার লাখ ৬০ হাজার ৮০০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ ছিল ৬৯ হাজার ২৮৫ টাকা। কালিগঞ্জ উপজেলায় ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার লাখ ২৩ হাজার একশ ৬০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে কালিগঞ্জ উপজেলা কোন বরাদ্দ আসেনি বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্ধৃতি দিয়ে তথ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা বরাদ্দের প্রায় সব টাকাই খরচ দেখানো হয়েছে বলে ও তিনি নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার বিনা মূল্যে বই দিয়ে থেকে। এসব বই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নিতে বই প্রতি বরাদ্দ দেয়া সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় প্রতি বছরই। বিগত সালে বরাদ্দের এ টাকার চেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আসতো। তিনি উক্ত টাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিতরনের জন্য বলে দিতের। কিš’ চলতি বছরের সরকাসরি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর এসেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা বরাদ্দের এ টাকা কাগজে-কলমে বিতরণ দেখিয়ে টাকা কয়েক বছর ধরে আত্মসাৎ করে আসছে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে কথা বলে ঘটনার সতত্যা পাওয়া যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, তারা আজও পর্যন্ত কোন দিন বই পরিবহনের টাকা পাননি। বই পরিবহনের জন্য বরাদ্দ আছে তাও তারা জানতো না। তাই স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উক্ত পরিবহন ব্যয় করা হয় বলে তারা জানায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ঝাউডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২শ’ শিক্ষার্থী আছে। আজ পর্যন্ত এদের বই আনার জন্য কোন পরিবহন খরচ পাইনি। বরাদ্দ আছে কি না তা সঠিকভাবে আমরা বলতেও পারি না। প্রতি বছর বই পরিবহনের জন্য স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা দেয়া হয় বলেও তিনি জানান।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি খাদিজাতুল কোবরা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে বই পা”িছ। বর্তমানে আমার এখানে তিনশত ছাত্রী আছে। তাদের বই পরিবহনের জন্য আজ পর্যন্ত কোন টাকা পাইনি। বরাদ্দ আছে কিনা তাও জানতাম না। এ বছর শুনছি বরাদ্দ আছে বই প্রতি ১৫ পয়সা। তবে সে টাকা আমাদের পর্যন্ত আসেনি।
২০১৬ সালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন মো. জাহিদুর রহমান। যোগাদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত পাঠ্য বই পরিবহনের কোন টাকা বিরতণ করেননি তিনি। কাগজে-কলমে এ টাকা বিতরণ দেখিয়ে উল্টো দোষ চাপা”েছন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপর। তার ভাষ্য এ টাকা আসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট। তিনি এ খবর ভাল বলতে পারবেন।
এ বছর তো আপনি রবাদ্দ পেয়েছেন এমন এক প্রশ্নে জাবাবে তিনি বলেন, সময় মত টাকা পৌছে যাবে। তবে, আপনাকে কে বলেছে আগে তা আমার জানা দরকার।
তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিা অফিসার মো. আতিয়ার রহমান নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বই সমন্বয় করতে হলে অনেক সময় টাকা থাকেনা। তারপর অফিসে খরচ আছে। সব খরচ করে যদি টাকা থাকে তবেই বিতরণ করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তহমিনা খাতুন বলেন, এরকম কোন বরাদ্দের কথা এ মুহূর্তে আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখবো।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাঠ্য বই বিতরণের জন্য টাকা বরাদ্দ আছে আমি এটা জানি। তবে বরাদ্দের টাকা সরাসরি উপজেলায় আসে। উপজেলায় একটি কমিটি আছে যার প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি অনুমোদন দিয়ে এ টাকা খরচ করান। এ বছর কার নামে টাকা এসেছে সেটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে বরাদ্দের এ টাকা যদি বিতরণ না করে কেউ আত্মসাৎ করে এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যব¯’া গ্রহণ করা হবে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …