ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। বদ্ধ জলাশয়ে চতুর্থ। ২০২২ সালে মাছ চাষে বিশ্বে সাফল্যের শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মঙ্গলবারসঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন। তিনি বলেন, মাছ উৎপাদনে বর্তমান সরকার যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২০-২১ সাল নাগাদ ৪৫ লাখ ৫২ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ নিয়েও পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু ঘাতকেরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। ফলে সে পরিকল্পনাগুলোও আর বাস্তবায়িত হয়নি। একসময় দেশে মাছের উৎপাদন অনেকটা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখান থেকে দেশকে মৎস্যবিপ্লবের দুয়ারে নিয়ে আসেন। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আমরা মাছ উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ দেশে রূপান্তরিত হয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ভাতে-মাছে বাঙালি’ মানে মাছ আমাদের জাতিসত্তার অংশ। দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ শুধু মাছ থেকেই মেটানো হচ্ছে।
দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ মৎস্য চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর পৃথিবীর ৬০ শতাংশ ইলিশের উৎপাদন বাংলাদেশে হচ্ছে। এ উৎপাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা। ২২ জুলাই শুরু হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ।
২৮ জুলাই গণভবনের লেকে মাছের পোনা অবমুক্তকরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্য সপ্তাহের সমাপনী ঘোষণা করবেন। মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আজ ব্রিফিং করবেন মন্ত্রী। করা হবে র্যালিও। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ সালে মাছ উৎপাদন লক্ষ্য ছিল সাড়ে ৪০ লাখ মেট্রিক টন।
এর বিপরীতে ওই অর্থ বছরে ৪১ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। মাছ দ্রুত উৎপাদন বাড়ায় দেশে মাছ খাওয়ার পরিমাণও ১০ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে।
আর মাছ রফতানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৪০ গুণ। বর্তমান সরকারের সময়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারিত হয়। এতে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মৎস্য আহরণে আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিশাল এলাকায় মাছ সংরক্ষণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে আহরণে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে ১৩৩টি ট্রলারে ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম ডিভাইস সংযোগ দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় জেলেদের মাঝে জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীসহ মাছ ধরার জন্য ১১৮টি অত্যাধুনিক নৌকা বিতরণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে, তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
এর পরই আছে থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। প্রথম স্থানটি অর্জনে এরই মধ্যে দেশি প্রজাতির ছোট মাছের সংরক্ষণ, প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য ৩৮ জেলার ৭৫ উপজেলার ১৩৬টি প্রাকৃতিক জলাশয় পুনঃখনন করা হয়েছে।
এসব জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। ৫৭টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে দেশি প্রজাতির ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ছয় হাজার ৪৬৬ জন চাষীকে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রতিবেশ ব্যবস্থা মিঠা পানির মাছ চাষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। দেশের প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতে জীবিকা নির্বাহ করে। বছরে প্রায় ছয় লাখ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে এই সেক্টরে।
বিবিএসের সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, দেশে গড়ে মাছের বার্ষিক উৎপাদন সাড়ে ৩৫ লাখ টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চাষ করা মাছের পরিমাণই প্রায় ২০ লাখ টন। জাটকা সংরক্ষণের ফলে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে এখন সাড়ে ৩ লাখ টন। দেশের প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে সামাজিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩৫ হাজার মেট্রিক টনের চিংড়ি উৎপাদিত হয়। সঠিকভাবে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব হলে দেশের প্রায় দুই লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ টন চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।
কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে ইলিশের উৎপাদন। এর পেছনে জাটকা নিধন কমিয়ে আনাসহ ইলিশ সংরক্ষণের কৌশলগুলো সুফল পাচ্ছে। গবেষকদের মতে, ২০১৬ সালে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন হয়েছে।