রাজধানীতে তীব্র যানজট ও গণপরিবহন সংকট জনদুর্গোভ অশেষ

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যান চলাচল বন্ধ থাকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়কে। এতে বিভিন্ন রুটে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে জনভোগান্তি সৃষ্টি হয় প্রায় পুরো নগরেই। এছাড়া যাত্রী নামিয়ে দিয়ে জোর করে গণপরিবহন সমাবেশে নিয়ে আসায়ও যাত্রীদের হয়রানি হতে হয়েছে কোনো কোনো জায়গায়।
যানজটের নগরী ঢাকার রাস্তায় স্থবিরতার চিত্র নতুন নয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে কর্মব্যস্ত বাকি পাঁচ দিনই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার আশা এখন আর কেউ করে না। ধরেই নেওয়া হয়, যানজট ঠেলে আধাঘণ্টার পথ দুই ঘণ্টায়ও পাড়ি দিতে হতে পারে। কিন্তু গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি হয়ে থাকল ব্যতিক্রম। এ দিনের যানজটের তীব্রতা কর্মব্যস্ত অন্য যেকোনো দিনকেও যেন ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে শাহবাগ ও আশপাশ এলাকা হয়ে পড়েছিল স্থবির। একপর্যায়ে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। দুপুরের পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যান আর জনজটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে বারিধারার উদ্দেশে দুপুর সোয়া ২টায় বের হন জামাল হোসেইন। গতকাল শনিবার ছিল ছুটির দিন। তাই পথে এক ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু তিন দফা বাস ও টেম্পো পাল্টে তিনি গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন বিকেল সোয়া ৫টায়। ভুক্তভোগী জামাল বললেন, ‘শ্যামলীর শিশুমেলা থেকে লেগুনায় উঠে সহজেই আগারগাঁও পর্যন্ত পৌঁছে যাই। এর পরের রাস্তাটুকু যেন বহুদূরের পথ। আগারগাঁওয়ে আধাঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গাড়িটি। এর পর কোনো মতে যানজট পার হয়ে বিজয় সরণির কাছাকাছি পৌঁছলে পরে আর গাড়ি নড়ে না। ৪০ মিনিটের মতো বসে থেকে হাঁটা শুরু করি। এরপর মহাখালী এসে আরেকটি গাড়িতে উঠি। কিন্তু এয়ারপোর্ট রোডে কিছুটা যেতেই আবার থেমে থেমে যানজট। দীর্ঘ সময় ব্যয় করে বনানী ওভারপাস পার হওয়ার পর শুরু হয় চূড়ান্ত যানজট। কুড়িল ৩০০ ফুট রাস্তা পর্যন্ত পুরোটাই যানজটে ঠাসা। পরে আবার হেঁটে কুড়িল পার হয়ে আরেক গাড়িতে বারিধারায় আসি।’
রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর থেকে গুলশান-২ নম্বরে যাবেন আসিফ হোসেন। কালশী রোড হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে কোনো যানজট থাকে না বলে তিনি ওই রাস্তাই ধরলেন। মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েও আধাঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে তাঁকে ব্যয় করতে হয় পাক্কা আড়াই ঘণ্টা। বিকেল ৪টায় রওনা দিয়ে তিনি কয়েক রাস্তা ঘুরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গন্তব্যে পৌঁছান।
গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংবর্ধনা স্থলে দুপুরের আগেই ঢল নামে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের। রাজধানী ও রাজধানীর আশপাশের বাইরের জেলাগুলো থেকে শতশত বাস ঢুকতে থাকে শহরে। হাজার হাজার জনতায় জনাকীর্ণ হয়ে পড়ে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ এলাকা। উত্তরায় যাওয়ার জন্য কাকরাইলে প্রায় ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে ছিলেন মাসুদ হাসান নামের এক যুবক। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি কম। যেগুলো আসছে সেগুলোও গেটলক। কোনো গাড়িই থামাচ্ছে না। ফলে বিমানবন্দরে জরুরি প্রয়োজন থাকলেও সময়মতো যেতে পারব কি না সন্দেহ আছে।’
ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ জ্যাম দেখা গেছে বিকেল সাড়ে ৪টার সময়ও।  মিরপুর কিংবা গাবতলী থেকে গুলিস্তানগামী গাড়িগুলোকে বেশ সময় নিয়ে বিকল্পপথে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। কারওয়ান বাজার এলাকায় কথা হয় শাহ আলম নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবাসয়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সমাবেশের কথা তার মাথায় ছিল না। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলেও বাসা শ্যামলীর বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়িতে উঠে তো আর নেমে যেতে পারি না। এদিকে সমাবেশের ভোগান্তির কথা শোনা গেল হাতিরঝিলের চক্রাকার বাসে বসেও। সেখানে মোবাইলে কথা বলছিলেন ফাহাদ নামের এক যুবক। ফোনের অপর প্রান্তে যিনি রয়েছেন তার প্রতি ফাহাদের নির্দেশনা ছিল নীলক্ষেতের যে স্থানে বসে আছে সেখানে অন্তত ঘণ্টাখানের বসতে হবে তাকে। রাস্তার যে অবস্থা তাতে কখন আসতে পারব বলা যাচ্ছে না।
এদিকে সমাবেশস্থলের অপরপাশে রমনাপার্কের মধ্য দিয়ে শাহবাগ হয়ে মৎস্যভবন পর্যন্ত পায়ে হাঁটার ব্যবস্থা থাকলেও সন্ধ্যার বেশ আগে থেকেই চারিদিকে গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে সেখান থেকে জানান নয়ন মুরাদ নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী। এদিকে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সরকার দলীয় কর্মীরা সাধারণ যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে জোর করে বাস নিয়ে সমাবেশে এসেছেন এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে একজন ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মী তার ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন। পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘বাস ছিনতাই, দুপুর ১২.৪৫ মিনিট। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রবরব পরিবহনে উঠলাম, বনানী যাব। মাজার রোডে আসতেই ২০/২২জন যুবক বাসের সামনে এসে দাঁড়ালেন। ভাবলাম তারাও যাবেন। কিন্তু তাদের দলের ২/৪ জন বাসে এসে ঘোষণা দিলেন- যার যা আছে নিয়ে নেমে যান, এ বাস আর যাবে না।’
যাত্রীরা গাইগুই শুরু করলে ড্রাইভার সাহসী হয়ে ওঠেন।  তিনি বলেন, ‘এ যাত্রীরা এখন কেমনে যাইব? একবার চিন্তা করবেন না? তুই তোর চিন্তা কর আমাগো নিবি কি না ক? নিমু না ক্যান।  এরপর আমরা জনতা-যাত্রী বাস থেকে নেমে আসি। কিন্তু একটি বাসেই যে তাদের কাজ হবে তাও নয়। তারা ওই পথে আসা আরও বাস আটকাতে লাগলেন।  ৪টা বাস নিয়ে তারা চলে গেলেন।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই যাত্রী ফেসবুকে জানান, দিনদুপুরে এমনভাবে বাস ছিনতাইয়ের ঘটনা যে আজই প্রথম দেখলাম তাও নয়। তাদের বাস দরকার থাকলে মালিকদের সঙ্গে কথা বলে আগেই নিয়ে নিতে পারে। জনতা যাত্রীকে এভাবে মাঝপথে নামিয়ে দেওয়ার কী মানে? ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও আজ বাস সংকট দেখেছি।  কারণ বোধ হয় একই। গণসংবর্ধনার দিন গণছুটি দিয়ে দিলেই পারে।’ এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তাতে কোন কোন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

Check Also

ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নদীসহ ৪ জন কারাগারে

নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শামসুন্নাহার হল শাখার সাবেক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।