ক্রাইমবার্তারিপোট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাজধানী রূপ নেয় মিছিলের নগরীতে। রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায় রাস্তাঘাট, মোড়, উড়াল সেতুসহ সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লাল-সবুজ টি-শার্ট, ক্যাপ, শাড়ি পরে; হাতে নৌকা, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে, নেচে-গেয়ে জনতার স্রোত নামে রাজপথে। মিছিলের পর মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসংবর্ধনাস্থলে মিলিত হতে থাকে।
কিন্তু বিকাল তিনটার আগেই বন্ধ হয়ে যায় সংবর্ধনার মাঠের সব ক’টি ফটক। কারণ ভেতরে জায়গা নেই। তাই বাইরেই থমকে দাঁড়াতে হয় মিছিলগুলোকে। এরপর রাস্তায় শোডাউন করে তৃপ্ত থাকতে হয় তাদের।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন, অস্ট্রেলিয়ায় ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি অর্জনসহ উন্নয়ন ও অর্জনে অসাধারণ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
কয়েকদিন ধরে যেখানে প্রখর তাপদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস সেখানে শনিবার ছিল রোদ-মেঘের মিতালী। এক পশলা স্বস্তিদায়ক বৃষ্টিও ছিল। বিকালে হালকা তাপ বেশ মানিয়ে নিয়ে দল দলে সংবর্ধনাস্থলে হাজির হয়েছিল ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা।
দুপুর বারোটার মধ্যে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, নারায়াণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও সম্ভাব্য এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন।
বেলা এগারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসার সামনের গোলচত্বরে অবস্থান নেন মানিকগঞ্জের এমপি নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের লোকজন। এখান থেকে মিছিল নিয়ে দুপুর বারোটার মধ্যে তারা মূল সংবর্ধনাস্থলে প্রবেশ করেন।
সকাল থেকেই শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা। বাদ্যের তালে তালে মিছিল নিয়ে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বিকাল সাড়ে তিনটায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে সামনে এগোলেও শেষ পর্যন্ত সংবর্ধনাস্থলে প্রবেশ করতে পারেননি।
একই অবস্থা হয় ঢাকার নেতাদের। দুপুরের পর ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীদের ঢল নামতে শুরু করে। কিন্তু তার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
ফলে ঢাকার বংশাল, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, খিলগাঁও, কদমতলীসহ বেশ কিছু থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সংবর্ধনাস্থলে প্রবেশ করতে পারেননি।
নেতাদের নির্বাচনী শোডাউন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা হলেও অনুষ্ঠানস্থল ও এর আশপাশে ছিল নেতাদের নির্বাচনী শোডাউন। ব্যানার-ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির বাইরে কারও ছবি ব্যবহারে দলীয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শোডাউনে মানা হয়নি সে নির্দেশনা।
মিছিল দেখা গেছে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের বিশালাকৃতির ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই স্লোগান দিয়েছেন।
বেলা এগারোটায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কয়েক হাজার নেতাকর্মী টি-শার্ট পরে দোয়েল চত্বর হয়ে বাদ্যের তালে তালে মিছিল নিয়ে বাংলা একাডেমির সামনের গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। মিছিল থেকে সরকারের উন্নয়ন স্লোগানের পাশাপাশি ঢাকা-২ আসনের কামরুল ইসলামকে আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চাই স্লোগান দেয়া হয়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের একটি বিশাল শোডাউন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের পাশ দিয়ে টিএসসি অতিক্রম করে। শেষ পর্যন্ত মিছিলটি সংবর্ধনাস্থলে প্রবেশ করতে পারেনি।
সকাল থেকেই সবুজ রঙের টি-শার্ট আর ক্যাপ পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে যুবলীগ দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। মিছিলে আগত নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুনে লেখা ছিল ঢাকা-৮ আসনে নৌকা মার্কায় সম্রাট ভাইকে দেখতে চাই।
রাজধানীর ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃত্বে একটি মিছিল বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে দোয়েল চত্বর হয়ে সংবর্ধনাস্থলে যায়।
চাঁদপুর-৩ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী রেদওয়ান খান বোরহান একটি মিছিল নিয়ে সংবর্ধনাস্থলে প্রবেশ করেন। ঢাকঢোলের তালে তালে জয় বাংলা, বাংলার জয়; নৌকা, নৌকা; ভোট দিন ভোট দিন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আবারও নৌকায় ভোট দিন স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলেন তারা।
দুপুরের দিকে মিছিল নিয়ে সংবর্ধনাস্থলে প্রবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু ও আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সভাপতি হুমায়ন কবির। এছাড়া বিশাল মিছিল নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কয়েকজন উঠতি নেতা।
ঢাবিতে ছিল বহিরাগতদের উপচে পড়া ভিড় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি এদিন। গণসংবর্ধনায় আসা হাজার হাজার মানুষ এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসার মূল ফটকের সামনে, গোলচত্বরে, টিএসটি ও এর আশপাশ, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
পরে এসব স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা হন নেতাকর্মীরা। এছাড়া গণসংবর্ধনা উপলক্ষে শনিবার সারাদিনই ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো।
কোথাও যেন ঠাঁই নেই : বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর চারপাশ বন্ধ হয়ে আসে। শাহবাগ. মৎস্যভবন, হাইকোর্ট মোড়ে জনস্রোত নামে। বিকাল তিনটার দিকে আর যেন কিছুই চলছে না। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে স্থির হয়ে যায়। কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। হাঁটার পথও বন্ধ।
সুসজ্জিত ঢাকা : মৎস্যভবন মোড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের পাশের সড়ক দিয়ে শিশুপার্ক পর্যন্ত কয়েক ফিটের ব্যবধান রেখে স্থাপন করা হয় অনেক তোরণ। কারওয়ান বাজারে স্থাপন করা হয় মেট্রোরেলের প্রতিকৃতি।
উদ্যান এলাকার পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের সাজসজ্জা করা হয়। জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে নৌকার প্রতিকৃতি।
‘মাদার অব হিউম্যানিটি’, ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’, ‘অনন্য প্রধানমন্ত্রী’সহ শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রশংসাসূচক বাক্য লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার শোভা পায় সড়কজুড়ে।
বিভিন্ন সময় পাওয়া পুরস্কারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বাণী লেখা প্ল্যাকার্ডও দেখা যায়। তিনটি স্টলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের লেখা বিভিন্ন বই বিক্রি হয়।