বিবিসি : গাজা সীমান্তে গোলাগুলীর ঘটনায় এক ইসরাইলী সৈন্য নিহতের পাল্টায় হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলটির বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় তীব্র আক্রমণ চালিয়েছে তেল আবিব।
কয়েক মাস ধরে গাজা সীমান্তে চলা অস্থিরতায় এবারই প্রথম ইসরাইলী কোনো সেনা নিহত হওয়ার খবর মিলল।
গুলীতে গুরুতর জখম হওয়ার পর শুক্রবার সৈন্যটির মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির সেনাবাহিনীও।
ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ বলছে, তেল আবিবের পাল্টা আক্রমণে হামাসের তিন সদস্যসহ অন্তত চার জন নিহত হয়েছে। সীমান্তে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় ইসরাইলী বাহিনীর গুলীতে চতুর্থ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
শুক্রবারের বিক্ষোভ ও পাল্টা আক্রমণে উভয়পক্ষের ৫ জন নিহতের পর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হামাস। রয়টার্স।
“মিসর ও জাতিসংঘের চেষ্টায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী অংশের মধ্যে শান্তির সময়ে ফিরে আসার সমঝোতা হয়েছে,” রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন হামাসের মুখপাত্র ফাউজি বারহৌম। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইসরাইলের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
গাজা সীমান্তে শুক্রবারের বিক্ষোভের মধ্যেই অন্তত তিনটি রকেট ইসরাইলের ভূখ-ের দিকে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ তেল আবিবের। এরপরই গাজায় নতুন করে অভিযানে নামে তারা। অভিযানে গাজার উত্তরে হামাসের ১৫টি সামরিক ঘাঁটি ও দক্ষিণের খান ইউনিসে আরও ২৫টি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয় বলে জানায় ইসরাইলের সেনাবাহিনী। হামলা অব্যাহত থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় তারা।
এর আগে গত সপ্তাহে হামাসের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ২০০রও বেশি রকেট ও মর্টার হামলা চালিয়েছিল তেল আবিব, যাকে ২০১৪ সালের যুদ্ধের পর ইসরাইলের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।
সীমান্ত বরাবর এ নিয়ে ১৭ সপ্তাহ ধরে টানা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনীরা। এ সময়ের মধ্যে ইসরাইলী বাহিনীর গুলীতে ১৩০ জনের বেশি নিহত এবং ১৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা।
শুক্রবারের বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি হামলার পর উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত বিষয়ক বিশেষ দূত নিকোলাই ম্লাদেনভ।
“সবারই বোঝা উচিত পরিস্থিতি দমাতে না পারলে আমরা দ্রুতই আরেকটি সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাবো। সব অংশ, সব পক্ষের কাছে আমার প্রত্যাশা তারা তাদের সর্বোচ্চটুুকু করবে। আগামী মাসে নয়, আগামী সপ্তাহেও নয়, উত্তেজনা নিরসনে এখনি সেটি করে দেখাতে হবে,” বলেছেন তিনি।
গাজায় শান্তি বজায় রাখতে সম্মত হামাস : ফিলিস্তিনী জাতিমুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন ও গাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হামাস জানিয়েছে, শুক্রবার গাজায় হামলার পর ইসরাইলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে তারা। গতকাল শনিবার হামাসের মুখপাত্র এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে ইসলাইলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এক সেনা নিহতের জের ধরে শুক্রবার গাজায় ইসরাইলী হামলায় চারজন নিহতের পরই হামাসের পক্ষ থেকে এই অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা জানানো হলো।
হামাসের মুখপাত্র ফওজি বারহুম ব্রিটিশ বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, মিসর ও জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী গ্রুপটি শান্ত পরিস্থিতিতে ফিরতে সম্মত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ইসরাইল। তবে এক সেনা মুখপাত্র বলেছেন, শনিবার সকাল থেকে গাজা উপত্যকায় কোনও সামরিক তৎপরতা চালানো হয়নি। ফিলিস্তিনী বাসিন্দারাও বলছেন ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকতা ও অজ্ঞাত এক দেশের অপর এক কূটনীতিক হামাস ও ইসরাইলের সঙ্গে আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখতে যোগাযোগ করেন।
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার অস্ত্রবিরতির খবরটি নিশ্চিত হলে মিসরের মধ্যস্ততায় এটা হবে তৃতীয় চুক্তি। গত শনিবার দিনব্যাপী হামলার পর দ্বিতীয় অস্ত্রবিরতির ঘটনা।