সিলেটের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ৬ মেয়র প্রার্থীর

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:  সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৬ মেয়রপ্রার্থী নগর উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তারা বলেন, বাইরের কেউ নয়, আমাদের পক্ষ থেকেই একজন মেয়র হবেন। এর মধ্যে যে-ই বিজয়ী হোন না কেন আমরা বাকি ৫ জন বিজয়ীকে সহযোগিতা দিয়ে যাব নগরবাসীর সেবা ও নগরীর উন্নয়ণের স্বার্থে।

সোমবার সকালে সিসিক নির্বাচন ২০১৮ সামনে রেখে সিলেটে দৈনিক যুগান্তর আয়োজিত ‘কেমন মেয়র চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রার্থীরা এই অঙ্গীকার করেন।

সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মেয়রপ্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মেয়রপ্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান, সিপিবি-বাম দলের মেয়র প্রার্থী মো. আবু জাফর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের।

যমুনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো চিফ ও দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান রিপনের পরিচালনায় নির্ধারিত আলোচক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। মেয়রপ্রার্থীদের কাছে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ড. জহির বিন আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেট’র সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রক্টর অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সহসভাপতি শামসুল আলম সেলিম ও পরিবেশকর্মী হাসান মুর্শেদ। দৈনিক যুগান্তরের সিলেট ব্যুরো ইনচার্জ সংগ্রাম সিংহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে গোলটেবিলের সমাপ্তি করেন।

গোলটেবিলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সিলেট নগরী নিয়ে আমরা যতটুকু ভাবি তার চেয়ে বেশি ভাবেন নাগরিকরা। আমরা সবাই একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন নগরী চাই। যেখানে কোনো ধরনের জঞ্জাল থাকবে না। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যাশার জবাবে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এই সিলেটের কৃতীসন্তান বঙ্গবীর আতাউল গনি ওসমানী। অথচ সিলেটে কোনো বিজয়স্তম্ভ নেই। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। নির্বাচনের পর সরকারের সঙ্গে আলাপ করে একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণের চেষ্টা করব।

স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনারের দেয়া কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, হযরত শাহজালাল (রহ.), শাহপরান (রহ.) ও বঙ্গবীর ওসমানীর স্মৃতিসহ সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য আমরা এখনও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারিনি। আগামীতে আমরা জাদুঘর স্থাপনের মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা করব।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যশার জবাবে তিনি বলেন, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় নগরীর পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ। বাস্তবায়ন হলেই নগরীর পরিবেশ সুন্দর হবে। তিনি বলেন, সিলেটের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তাই এই শহরে একটা সাংস্কৃতিক একাডেমি খুবই প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে জালালাবাদ পার্ক এলাকায় সাংস্কৃতিক একাডেমি করা হবে।

বাসদ-সিপিবি মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকলেও বিভিন্ন ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন বলেন, আমরা মুখে মুখে না বলে অন্তর থেকে বলি নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করব। আর এটা অনেকটা নির্ভর করে সরকারদলীয় প্রার্থীর ওপর।

স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী এহসানুল হক তাহের বলেন, প্রতিশ্রুতি না দিয়ে একটি শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমি প্রার্থীদের নিজেদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত। তাই একে-অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছি। এই নগরীর মেয়রকে হতে হবে নাগরিকবান্ধব।

গোলটেবিলে নির্ধারিত আলোচকদের মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ড. জহির বিন আলম বলেন, পরিকল্পিত নগর গঠনে সুরমা নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নগরীতে নগর পরিবহনব্যবস্থা চালু না থাকায় কর্মজীবী লোকজনকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন নগরবাসীকে এ ব্যাপারে আরও সচেতন করতে হবে।

সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি, বধ্যভূমি থাকলেও যথাযথভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না। নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। তিনি নগরীতে বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী লোকজনের জন্য সিলেটের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির সংস্কৃতি এখন বিনষ্টের পথে। তিনি এই অবস্থার উত্তরণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন।

সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির অতীতের মতো শান্তিপূর্ণভাবে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা করে বলেন, প্রশাসনের কেউ কেউ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টে সাবোটাজ করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ডের কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক সেটা কারও কাম্য নয়।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি নেতাদের নিরীহ সন্তানদের আটক, দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশি অভিযান চালিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেট এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন। নির্বাচনী কমিশন ও প্রশাসনের মধ্যে দ্বৈতশাসন চলছে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু তাদের এমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সহসভাপতি শামসুল আলম সেলিম বলেন, একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে সংস্কৃতিবান্ধব মেয়র চাই। তিনি সিলেটের লোকসংস্কৃতি রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ ও সিটি কর্পোরেশনের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের আহ্বান জানান।

পরিবেশকর্মী হাসান মুর্শেদ বলেন, সিলেট শুধু আধ্যাত্মিক নগরী নয়, পর্যটন নগরীও। দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটক এখানো আসেন। কিন্তু পর্যটন বিষয়ে কোনো ওয়ানস্টপ ইনফরমেশন সেল, কর্নার নেই। তিনি বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ছাড়াও নগরীতে পর্যটনবিষয়ক তথ্যকেন্দ্র খোলার প্রস্তাব রাখেন।

তার দাবি, এতে সারা বিশ্বে দ্রুত পরিচিতি পাবে সিলেট। সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রক্টর অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন বলেন, জনবান্ধব মেয়র চাই। যার দরজা সবার জন্য খোলা থাকবে। তাছাড়া হকারমুক্ত ফুটপাত নিশ্চিত করতে হবে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।