ক্রাইমবার্তা রিপোট:: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে। মানুষ এখন ইলেকশন মুডে রয়েছে। তাদের আন্দোলন নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। তাদের রাজনীতি ছদ্মবেশী ও বিদ্বেষপ্রসূত রাজনীতি।
এ ছদ্মবেশী বিদ্বেষপ্রসূত রাজনীতির করে জনসমর্থন পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের মধ্যে ততই পরিবর্তন আসবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আরও বেশি স্পেস পাবে।
নির্বাচন যতই ঘনীভূত হবে জোটকেন্দ্রিক রাজনীতির মেরুকরণ ততই বাড়বে। শেষ সমীকরণ দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি উপলক্ষে যেন কোনো চাঁদাবাজি না হয় সে জন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের শোকের মাসকে সামনে রেখে যেন কেউ চাঁদাবাজি না করতে পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেন। বৈঠকে শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, শোকদিবসের গাম্ভীর্য বজায় রাখার ব্যাপারে বলা হয়েছে। কেউ যেন চাঁদাবাজি করতে না পারে। সবাই যেন এটা মনে রাখে যে, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের স্মরণের নামে যেন কোনো অপকর্ম না হয়। এতে জাতির পিতার আত্মা কষ্ট পাবে। আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে চাঁদা ধরব। এর বাইরে যেন কোনো চাঁদার ঘটনা না ঘটে। ঘটলে, সরাসরি আমাদের অফিসে (আওয়ামী লীগ) ফোন করার জন্য অনুরোধ করব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইলেকশন যতই ঘনিয়ে আসবে ততোই দৃশ্যপটের মধ্যে কিছু কিছু পরিবর্তন আসবে। ইলেকশনের শিডিউল অ্যানাউন্স হয়ে যাবে, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই এ ব্যাপারে পোলারাইজেশন স্বাভাবিক। পোলারাইজেশনটা কীভাবে হবে সেটা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে?
এর কারণ উল্লেখ করে কাদের বলেন, আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িকতা আছে, এখানে ডিভাইসিক পলিটিক্স আছে, এসব বিষয়গুলোর সমীকরণটা একটা পর্যায়ে কোথায় দাঁড়াবে, সেটা এখন বলা যাবে না।
এ সময় তিনি জানান, সরকার জাতীয় নির্বাচন সমানে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও বেশি স্পেস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাদের বলেন, আমরা স্পেস দেব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, নাশকতার শঙ্কা যদি না থাকে তাহলে আমরা স্পেস দেব। এ প্রসঙ্গে তিনি দীর্ঘ আড়াই বছর পর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের উদাহরণ তুলে ধরেন।
একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার দলের যোগাযোগ বাড়ছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, সম্প্রতি তার সঙ্গে অনেক নেতারই ফোনে কথা হয়েছে। অন্তত ফোনালাপটা থাকলেও রাজনীতিতে সৌজন্যতাবোধটা টিকে থাকবে। এর মধ্যে কর্নেল অলি, মেজর মান্নান, আব্দুর রবের সঙ্গে তার ফোনালাপ হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি। এ নেতারা তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশের ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান। তবে, বিএনপির বিষয়টা একটু আলাদা বলেও দাবি করেন কাদের। এর আগে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলামের মায়ের মৃত্যুতে বিবৃতি ও ফোন করে কথা বলার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কখনও আমাকে ফোন করেননি। আমার মা মারা যাওয়ার পর মিডিয়াতে একটি শোকবার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার মা যখন মারা গেলেন আমি শোকবার্তাও দিলাম আবার ফোনেও তার সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা জানালাম। তাদের আর আমাদের মধ্যে এটাই পার্থক্য।
ফোনালাপ তৈরি করা যায় বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, তারা ফোনালাপ তৈরি করতে পারে। আবার অস্বীকারও করতে পারে। বিএনপির এ ধারা পুরাতন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের ভারত সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা এরশাদ সাহেবকেই জিজ্ঞেস করেন।
এ সময় কাদের বলেন, ভারতভীতিটা যাদের এত প্রবল, ইলেকশন আসলে তাদের ভারতপ্রীতি কেন বেড়ে যায়? যারা সারা বছরই ভারতভীতিতে ভোগে ইলেকশন আসলে তারা ঘন ঘন ভারত যায় কেন?
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র নেতাদের সঙ্গে দেখা করাকে ‘অফিসিয়াল আলাপ নয়’ দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা জাস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎ। আমি বাসদের খালেকুজ্জামানের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছি। আমি ফোনে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গেও কথা বলেছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতির অঙ্ক নিয়ে সিপিবির সঙ্গে আলাপ করতে যাইনি। যদি কোন আলাপ করতে যাই তাহলে আমার দলের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে যাব এবং ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে যাব। রাজনীতির কোনো বিষয়ে আলোচনা করলে, কোনো ইকুয়েশন বা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের ব্যাপার, অ্যালায়েন্সের ব্যাপারে আলাপ হলে, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া আমি আলাপ করতে পারি না।
নির্বাচন সামনে জোটের পরিধি বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক জোট থাকলে তার পরিধি বাড়া স্বাভাবিক। সেটা কীভাবে হয় এটা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুরনাহার লাইলী, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনিবাহী সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসারসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।