ক্রিকেটপ্রেমী সেনাপ্রধানের ছায়ায়ই থাকতে হবে ইমরানকে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:  পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসেন। পছন্দ ইউকেট কিপিং। এখন ৫৮ বছর বয়সী সেনাপ্রধানের সেই ক্রিকেট প্রেমই ইমরান খানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মধুর করবে কিনা, তা সময়েই বলবে।

তবে দেশটির ভোটের ফলে স্পষ্ট, সাবেক ক্রিকেট ক্যাপ্টেনকে এখন থেকে চলতে হবে একজন ক্রিকেটপ্রেমীর পছন্দ-অপছন্দকে মাথায় রেখে। সরকার চালাতে সেনার চাপকে অস্বীকার করা ইমরানের পক্ষে কঠিন।

পাকিস্তানের ভোটের ফলের পরে ইমরানের সঙ্গে বাজওয়ার সম্পর্ক কেমন হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। কারণ সেনার চোখের মণি হয়েই ভোটে জিতেছেন ইমরান।-খবর আনন্দবাজারপত্রিকা অনলাইনের।

তবে সবচেয়ে বড় দল হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেলেনি। সরকার চালাতে ইমরানকে নির্ভর করতে হবে মুত্তাদিয়া মজলিস-ই আমলের মতো দল ও স্বতন্ত্রদের ওপর। যারা সেনার কথায় ওঠেবসে। সেখানেও সরকারের চাবি হাতে রাখবে সেনা।

পাক সেনাপ্রধানের পদে রাহিল শরিফের অবসরের পর বাজওয়াকে নিয়োগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কারণ তিনি ছিলেন পাকিস্তানের পাঁচজন সিনিয়র জেনারেলের অন্যতম।

বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণরেখা ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সেনার নেতৃত্ব দেওয়ায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান বিক্রম সিংহের নেতৃত্বে একসময়ে কঙ্গোয় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করেছিলেন বাজওয়া।

পাক সেনাপ্রধান হওয়ার পরে তার অসাধারণ পেশাদারিত্বের প্রশংসায়ও করেছিলেন বিক্রম সিংহ।

আর পাক সেনাপ্রধানের দুই ছেলে আলি ও সাদ জানিয়েছেন, ভারতকে নিয়ে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে তাদের বাবার। নিজের লাইব্রেরিতে রেখেছেন ভারত সংক্রান্ত বইপত্র। ভারতকে নিয়ে তার সামরিক রণকৌশলের কারণেই সেনাপ্রধান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল বাজওয়াকে। কূটনীতিকরা মনে করছেন, আগামী দিনে ইমরানের ভারতনীতিতে ছায়া ফেলবেন সেনাপ্রধান।

সন্দেহের পেছনে কারণও রয়েছে। ইমরানকে প্রধানমন্ত্রী করার চেষ্টায় সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবার খোলাখুলি মাঠে নেমেছিল।

অনেকেই বলছেন, অতীতে কখনও বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও কখনও নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগের পাশে থেকে কাজ করেছে সেনা ও আইএসআই।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেনাকর্তারা বুঝেছেন, এই দলগুলোকে সব সময়ে বশ করে রাখা সম্ভব নয়। আর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে শরিফ পরিবার ফেঁসে যাওয়ার পর ইমরানের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নেতাকে দেখতে পায় সেনা। সেই মতোই এগিয়েছে ছক। ফলও মিলেছে প্রত্যাশিত পথেই।

বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট রিপোর্ট-২০১৮’ বলছে- জিডিপি ৫.৮ শতাংশ থেকেও পরের বছর কমতে পারে। বাড়ছে চীনের ঋণ। আয়কর দেন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। সার্কের রিপোর্ট, দেশটির দুই কোটি ২৬ লাখ শিশু স্কুলে যায় না।

সাড়ে তিন দশক ধরে সামরিক শাসনে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার বদল এ নিয়ে দ্বিতীয় বার। সরকারে জোরালো প্রভাব সেনা ও আইএসআইয়ের।

এদিকে সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে মার্কিন আর্থিক সাহায্যে কাটছাঁট। আমেরিকার চাপে ‘গ্লোবাল টেররিজম ফাইন্যান্সিং মনিটরিং লিস্ট’এ। হাফিজ সাঈদ, মাসুদ আজহারেরা অবশ্য খুবই সক্রিয়। জঙ্গি সন্ত্রাসের শিকার পাকিস্তানের মানুষও।

প্রশাসনে দুর্নীতির অভিযোগ যথেষ্ট। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষায়, পাকিস্তানে দুর্নীতি কেমন, বহির্বিশ্বে তার ধারণা অনুযায়ী পাকিস্তানের স্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১১৭।

তবে পাকিস্তানের অতীত বলছে, দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। সেনাই নিয়ন্ত্রণ করেছে শাসনক্ষমতা। সেনার আজকের ‘চোখের মণি’ ইমরানের ভবিষ্যৎ কী হবে, সময়ই তা বলবে।

Check Also

ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।