‘মোর আব্বারে আইন্যা দেন, মোর আর কিছুই লাগবে না’

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:‘ও ভাই মোর স্বামী-পোলায় সাগরে গ্যাছে, হুনছি বইন্যায় সাগরে ডুইব্যা গ্যাছে। চারদিন ধইরা (ধরে) খোঁজ নাই হ্যাগো, মোর স্বামী-পোলারে আইন্যা দ্যান।’ এভাবেই কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো উঠানে মর্ছা যাচ্ছেন নিখোঁজ জেলে তোতা মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম। স্বামী আর ছেলের কথা বলতে বলতে বেহুঁশ হয়ে পড়েন তিনি।

একই পরিবার থেকে মো: তোতা মিয়া, তার ছেলে মো: কবির হোসেন ও ভাতিজা মো: রিপন নিখোঁজ রয়েছে। শুধু আমেনা বেগমই নয়, এই গ্রামের আঠারোটি জেলের পরিবারেই চলছে এরকম আহাজারি। সাগরে নিখোঁজ জেলে মো: তোতা মিয়ার বাড়িসহ নিখোঁজ অন্য জেলেদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত আসছে তাদের প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরা।

অন্যদিকে একই পাড়ার নিখোঁজ মো: রিপনের পনের বছরের কন্যা তানিয়া বিলাপ করে বলছেন, মোর আব্বারে আইন্যা দেন, মোর আর কিছুই লাগবে না। মোরে কেডা স্কুলে নিয়া যাইবে’। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই স্বজনদের দীর্ঘশ্বাস বেড়ে চলছে।

অপরদিকে তোতা মিয়ার প্রতিবেশী হিরু মিয়ার মা আনোয়ারা বেগম একমাত্র ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কখনো কখনো আনোয়ারা বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। স্ত্রী শারমিন বেগম ৮ মাসের কন্যা সন্তান আয়শাকে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাদুরতলা গ্রামের আঠারো জন জেলে গত ১৯ জুলাই, ‍বৃহস্পতিবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যায়। শনিবার (২১ জুলাই) সকালে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে । এরপর আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে কথা হয়া বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হোসেন ফরাজীর সাথে। তিনি বলেন, আমরা নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে ঘটনার পরই কয়েকটি ট্রলার সাগরে পাঠিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করছি।

পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো: শাকিল আহম্মেদ শিবু বলেন, আমার ইউনিয়নের একই গ্রামের ১৮ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ যৌথভাবে নিখোঁজ জেলেদের তালিকা করছি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ জেলে ও তাদের স্বজনদের খোঁজ করে নিচ্ছি। আর ফিরে আসা জেলেদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। যদি কোন জেলে মারা যায় তাহলে তাকে জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

 

আরো পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ফের ট্রলার ডুবি, ১৯ জেলে নিখোঁজ

পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা ২২ জুলাই ২০১৮

বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ফেয়ার বয়ার নিকটে ঝড়ের কবলে পড়ে ১৯ জেলে নিয়ে এফবি অর্ক নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: দুলাল মাঝি ট্রলারডুবির ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

নিখোঁজ মানিক মিয়া (৩০), মিন্টু মিয়া (৩৫), সোলায়মান (৪০), আইয়ুব আলী (৪০), নাসির (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩০), দুলাল মিয়া (৫০), রুবেল হোসেন (২৫), রাহাত (২০), মনির (২৫), হাকিম (৩২), কাশেম (৩৮) ও মোতালেব (৪০) জেলের নাম জানা গেছে। নিখোঁজ সবাই বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

ট্রলার মালিক আশুতোষ সরকার জানান, ১৮ জুলাই বরগুনা থেকে গভীর সমুদ্রে ১৯ জন জেলে নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এফবি অর্ক ট্রলারটি। পরে বঙ্গোপসাগরের চালনা বয়া থেকে বিশ বাম দক্ষিণে মাছ শিকারের জন্য জাল ফেলে। হঠাৎ সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় তীরে ফিরে আসার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে তারা নিখোঁজ হয়। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ট্রলার মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে।

দুলাল মাঝি জানান, বরগুনা সদর উপজেলা আশুতোষ সরকারের মালিকানাধীন এফবি অর্ক ট্রলারটি ১৯ জন জেলে নিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খোজ পাওয়া যায়নি। পাথরঘাটা থেকে একটি ট্রলার নিয়ে জেলেদের উদ্ধারে সমুদ্রে রওনা হয়েছে।

এর আগে গতকাল শনিবার সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় ১৭ জেলেকে নিয়ে এফবি তারেক-১ নামের একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। পরে অন্য ট্রলারের সহযোগিতায় ডুবে যাওয়া ১৬ জেলেকে উদ্ধার করা হলেও আমির হোসেন নামের এক জেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আহতদের পাথরঘাটা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।