আবু সাইদ বিশ্বাস:ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাতক্ষীরা: ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে র্যালি, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়ায় প্রতি বছর এ দিনটি পালিত হয়। যদিও বিশ্বে বাঘের সংখ্যার বিচারে ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে পঞ্চম স্থান দখল করে আছে।
২০০০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সমৃদ্ধি ১৩টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য এক ঘোষণা পত্র তৈরি হয়। সেই ঘোষনা পত্রের আলোকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। অথচ সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমেই চলেছে। এদিকে বাঘ রক্ষায় সুন্দরবন বিভাগের উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা, লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে ট্রাংকুলাইজ করে বনে ফেরত পাঠানো, বাঘ-মানুষ দ্বন্ধত কমাতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও নিয়েছে বন বিভাগ। তারপরও দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমছে। এদিকে সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় বাঘশুমারি হলেও তার পদ্ধতিগত দিক নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
এদিকে চলতি বছরে প্রথম বারেরমত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু হয়েছে। শেষ হবে আগামি বছরের জানুয়ারীতে। চলতি বছরের ১৬ জুনুয়ারী সুন্দরবন ব্যাঘ্র্র প্রকল্প দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গের সজনেখালি রেঞ্জ তিন দিন ব্যাপি বাংলাদেশ ভারত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের বন দফতরের ৪ জন ডিএফও, এ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ, ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউশন অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী কামার কুরেশি, ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের ডিএফও তৃপ্তি সা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারী থেকে জঙ্গলে প্রথম পর্যায়ে ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়। তিনটি পর্যায়ে গণনা চলছে। জঙ্গলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ৪০টি দল গঠন করা হয়েছে। নৌকোয় করে বিভিন্ন নদী, খাঁড়ি, জঙ্গলে বাঘের খাদ্য তৃণভোজী প্রাণী হরিণ, বুনো শূয়োর-সহ বিভিন্ন জন্তুর সমীক্ষা করা হবে। বাঘের মল, মূত্র, গাছের গায়ে আঁচড়-সহ অন্যান্য চিহ্ন সংগ্রহ করা হচ্ছে
, জঙ্গলের আশেপাশে বাঘের থাকার উপযোগী হেতাল, গরান, গেঁওয়া গাছের হদিস করা হচ্ছে। এ জন্য তিনটি পর্যায়ে প্রায় ১৪১০টি আধুনিক ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ’’শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটানও একই পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করছে ।
পাঁচ মাসে বাঘশুমারি শেষে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের বন মন্ত্রণালয়। বিগত সময়ে ভারতের তথ্য মতে সুন্দরবনে ১০৩টি বাঘ ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে ১১০ এ দাড়িয়েছে। ভারতের দিকে সুন্দরবনের বনভূমির হার ৪০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ।
বাঘবিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ গড়ে প্রায় ১০-১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিচরণ করে এবং সেখান থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। সে হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে (৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার) ৪০০ বাঘ থাকার কথা। ২০০৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তায় চালিত বাঘশুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। এর মধ্যে পুরুষ বাঘ ১২১টি, বাঘিনী ২৯৮টি এবং বাঘ শাবকের সংখ্যা ছিল
২১টি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই প্রকাশিত ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জ
রিপ অনুয়ায়ী বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১০৯টিতে। অথচ ২০০৪ সালে বন বিভাগ এনএনডিপির সহায়তায় প্রথমবারের মতো বাঘের পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করেছিল ৪৪০টি। দুবছর পর ২০০৬ সালে ক্যামেরা পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করে এর সংখ্যা নির্ধারণ করে ২০০টি। ‘বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র ১০৬টি। বাঘ শুমারির চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ মিলে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা ১৭০টি। বর্তমানে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত তা কমে দাড়িয়েছে ১১০টি। দু’দেশের বনবিভাগ ও বাঘশুমারির রির্পোট পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছে বনবিভাগ। সচেতনতা সৃষ্টির কারণে গত চার বছরে লোকালয় ঢুকলেও জনতা বাঘ হত্যা করেনি।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন“সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার ও আন্তর্জাতিক প্রটোকল অ
নুসারে সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে।”তিনি বলেন, “সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা দিগুণ করার সুযোগ নেই। তবে আন্তর্জাতিক ঘোষণা
অনুসারে সুন্দরবনের বাঘ ও হরিনের সংখ্যা ধারন ক্ষমতার মধ্যে রেখে অবৈধ হরিণ শিকার বন্ধ, আবসনস্থলের উন্নয়ন ও নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
বনকর্মকতৃা আরো জানান, বৈধ পাস পারমিট নিয়ে বনে প্রবেশের পর বাঘের হামলায় নিহত হলে তার পরিবারকে ১ লাখ টাকা এবং আহত হলে চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।
বন বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী, ২০০৮ সালে ১টি, ২০০৯ সালে ১টি, ২০১০ সালে ২টি, ২০১১ সালে ১টি এবং ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত ১টি বাঘ মারা গেছে। বন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে চলতি ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১১টি বাঘ বয়সজনিত কারণে, চোরা শিকারিদের হাতে কিংবা লোকালয়ে প্রবেশের পর গণপিটুনিতে মারা গেছে। একই সময় বাঘের হামলায় ১৪০ জন জেলে, বাওয়ালী, মৌয়াল মারা গেছেন।
সুন্দরবন রক্ষায় বাঘহত্যা বন্ধের দাবী জানিয়েছে । –আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা : ২৭/০৭/১৮
https://youtu.be/6M3vzwNtyyM