ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:আওয়ামী লীগের মিশন এবার রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে দলটির হাইকমান্ড। আগামী ৩০ জুলাই একযোগে অনুষ্ঠিতব্য তিন সিটি নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায় ক্ষমতাসীনেরা। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলটি। তৃণমূল নেতাদের সাথে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। কোন এলাকায় কার কি সমস্যা আছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে কিভাবে জয়লাভ করা যায় এবং ভোটাররা কি চায়Ñ এ রকম নানা বিষয় চিহ্নিত করে দলটির হাইকমান্ড থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের নেতারাও একক প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় ভূমিকা রাখছেন। জাতীয় নির্বাচনেও সিটি নির্বাচনের জয়ের ছোঁয়া লাগাতে দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা পুরোদমে কাজ করছেন।
দলটির নেতারা মনে করেন, সিটি নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে কিছুটা হলেও পড়ে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া ২০১৩ সালে যখন সিটি নির্বাচন হয়েছিল তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর এখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এক নয়। বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে যে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, জনগণ সেসব ভুলে যায়নি। ইতোমধ্যে খুলনা ও গাজীপুরে রায় দিয়ে জনগণ বিএনপিকে তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। এরপরই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী পরিবর্তন করেই জয়ের ধারায় ফিরে আসে দলটি। যদিও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কাছে পরাজিত হয়ে চাপের মুখে পড়ে ক্ষমতাসীনরা। এরপরই গত ২৬ জুন খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ।
দলটির একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার বিজয় দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সাথে শরিক দলগুলোর মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা দেশের সব সিটি করপোরেশনে জয় নিশ্চিত করে মাঠপর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল আরো বাড়াতে চায়। নেতাদের মতে, নৌকার বিজয়ের ধারা শুরু হয়েছে। আগামীতে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে এ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবেন। সেখানে কোনো কোন্দল থাকলে তা মেটাবেন। এলাকার জনগণের কাছে এই নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবেন এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরবেন। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের কাছে কেউ টিকতে পারবে না।
নির্বাচিত হওয়ার পরই গাজীপুরের নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গণভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে যান। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের ভোট আগামী নির্বাচনে বিজয়ের পথ দেখাচ্ছে, বিজয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। দলীয় প্রধানের এমন মন্তব্যে নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করে।
তিন সিটির প্রস্তুতি ও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ এমপি নয়া দিগন্তকে বলেন, তিন সিটি জয়ের লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। প্রচণ্ডভাবে আশা করি, বিপুল ভোটে আমাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করবে। তার কারণ হলো, বিএনপির মেয়রদের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। ২০১৩ সালে যখন সিটি নির্বাচন হয়েছিল তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর এখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মানুষ বিএনপির জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতি দেখেছে। জনগণ আর কখনো সে দিকে ফিরে যেতে চায় না। বিএনপি থেকে মানুষ ইতোমধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষ এখন উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আমাদের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেনÑ এটা আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমাদের মেয়রপ্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। কেন্দ্র থেকে দিকনির্দেশনা আসছে। সেগুলো সমন্বয় করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা কাজ করছে। আশা করছি, বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমাদের প্রার্থী জয়লাভ করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা সাধারণত প্রার্থীর ইমেজ দেখে ভোট দেন। আর জাতীয় নির্বাচনে যেহেতু ক্ষমতার পালাবদলের একটি বিষয় থাকে, সেহেতু এখানে পুরোপুরি দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে ভোটাররা ভোট দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়-পরাজয় জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রভাব পড়ে না। তবে কিছুটা প্রভাব পড়ে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …