ভোটারদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি : রিজভী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:    তিন সিটিতে বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশির নামে পুলিশী হয়রানি ও গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে বিএনপি বলছে- তিন সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আলামত এখনো পর্যন্ত নেই। তবুও ভোটারদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবে ধানের শীষের প্রার্থী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রোববার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শাসকদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নির্বাচন নিয়ে যে অবিমৃশ্যকারিতা করছে তার জবাব তো নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে। তবে আগামীকালের তিন সিটি নির্বাচন দেখার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে খাতে প্রবাহিত হবে, সেটিকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকবে না। জনগণ আর হাত গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকবে না। সাইরেন বাজতে থাকবে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত। মানুষের ক্ষোভের উত্তাল প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনকেও জবাবদিহি করতেই হবে।

সিলেট সিটিতে গ্রেফতার নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সহ-সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে গতরাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ৪/৫ দিন আগে তার ছেলে রুমান রাজ্জাককেও পুলিশ আটক করে। সিলেটে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ৮০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করেছে আওয়ামী লীগ। এখানে ক্ষমতাসীন দল পুলিশকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, ধাওয়া, বাধা ও হুমকি দেয়ানো হচ্ছে। এটির উদ্দেশ্য নৗকা মার্কার প্রার্থীকে একতরফাভাবে বিজয়ী করা। স্থানীয় প্রশাসন নগ্নভাবে নৌকা মার্কার পক্ষে মাঠে নেমেছে। সেখানে নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে, এক্ষেত্রে আজ্ঞাবাহী প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশ নিষ্ঠার সাথে পালন করছে। অর্থাৎ সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকা ভোটের দিন ভোটারশূন্য, বিএনপিশূন্য রাখতে মামলার জালে ফেলে গ্রেফতার, বাসায় বাসায় হানা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের খোঁজা হচ্ছে।

রাজশাহী সিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজশাহী যেন ভুতুড়ে নগরী, শ্বাসরোধকারী গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। নৌকা মার্কার অনুকূলে একতরফা ভোট করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন যৌথভাবে বিবেকশূন্য অনাচারে লিপ্ত রয়েছে। সেখানে আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডারদেরই জয়জয়কার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সাধারণ ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেখানে রাজত্ব কায়েম করেছে। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করে আশেপাশের জেলা-উপজেলায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে পেন্ডিং ও নতুন মামলায় তাদের আসামি করে জেলে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সেখানে ৯টি মামলায় দলের কয়েক শো নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মহানগর জুড়েই ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী বুলবুলের নির্বাচনী প্রচারণা অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ অফিসগুলো লোকে লোকারণ্য ছিল। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার, মামলা এবং ভোটারদের মনে ভীতি ও আতঙ্কের কারণেই এই অবস্থা। ঢাকা থেকে কালো গাড়িতে করে সিল মারা অতিরিক্ত ব্যালট পেপার রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধানের শীষের পুরুষ ও মহিলা এজেন্টরা গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

রিজভী বলেন, সিটি এলাকায় প্রায় ১০টি কালো কাঁচঢাকা গাড়ি ঘোরাফেরা করছে। এই গাড়ির ভেতর কারা সেটা নিয়ে ভোটাররা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠিত। এর ভেতরে কী সাদা পোশাকধারী সরকারী বাহিনীর লোক নাকি বহিরাগত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা? তা নিয়ে স্থানীয় মানুষের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পুরুষ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির মহিলা নেতাকর্মীদেরও গ্রেফতার করছে পুলিশ। রাজশাহীর ভোটারদের আশঙ্কা-তারা নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কি না।

বরিশাল সিটি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, বরিশাল এখন আওয়ামী ক্যাডারদের দখলে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে বহিরাগত ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গোটা সিটি এলাকায় তান্ডব চালাচ্ছে। পুলিশ-র‌্যাব এর ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে। তিনটি থানায় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় আসামি করেছে পুলিশ। প্রশাসনের নির্দেশে অনেক নেতাকর্মীর বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের হুমকি ও পুলিশের লাগাতার গ্রেফতারের খবরে বরিশাল মহানগরে আতঙ্ক আসন গেড়ে বসেছে। পুলিশ ও প্রশাসন বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা জোর করে বন্ধ করেছে। অথচ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনভোগান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে একের পর এক পথসভা করছে, বিশাল শো-ডাউন দিচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রচারণার শেষের দিন ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদেরকে মাঠেই নামতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সারোয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে গেলে পুলিশ সরাসরি বাধা দেয়। পরে বাধ্য হয়ে তিনি দলীয় কার্যালয়ের নীচে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা করেন। বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি আবুল হোসেন খানের বাসায় গতরাতে পুলিশ হানা দিয়ে তল্লাশি চালায় এবং বাসার আসবাপত্র ভাংচুর করে। আমি তিন সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় আসামি করা, নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

তিনি আরো বলেন, শুধু তিন সিটিই নয়, সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযানের ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আশেক এলাহী মোল্লাকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি দলের পক্ষ থেকে আশেক এলাহী মোল্লার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

রিজভী বলেন, গাজীপুর ও খুলনায় নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন কথা দিয়েছিল আগামী নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে। কিন্তু তিন সিটি নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হলে কমিশনের পুরনো চেহারা আবারো ফুটে উঠতে শুরু করে। তারা রাখঢাক না করে মুখোশের শেষ সুতোটুকুও খুলে ফেলেছে। যেভাবে খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর রুপ দেখা যাচ্ছে তিন সিটি এলাকায়। সেখানে আকাশে বাতাসে ভোটারদের মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে ভয় আর গুঞ্জন। গাজীপুর ও খুলনার ভোটের মতো নয়া সিস্টেমের ভোট ডাকাতি প্রত্যক্ষ করবে কী না এই আতঙ্কে আছে তিন সিটির ভোটাররা। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের মন থেকে ভয়ভীতি দূর করে আশঙ্কামুক্ত ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

রিজভী বলেন, আগামী তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকারের দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোটারশুন্য একতরফা নির্বাচনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের নির্বাচন এখন সরকারী সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত। সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলাটাই যেন এখন আওয়ামী লীগের প্রধান এজেন্ডা। গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করেছেন শেখ হাসিনা। সুতরাং বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন এখন স্বপ্নালোকে বিরাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, তিন সিটি নির্বাচনেই অসংখ্য অভিযোগেও মর্মর মনুমেন্টের মতো নিশ্চুপ থেকেছে ইলেকশন কমিশন, প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা করেনি। নির্বাচন কমিশনের মনে-মস্তিস্কে অন্ধকার নেমেছে বলেই যুক্তি সেখানে অবান্তর। মনে হয় সরকারি হুকুমের ভয়ে অসহায় নীরব-নিশ্চল পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের বাড়িঘর, দোকানপাট, বাজার ভেঙ্গে দেয়া, পুড়িয়ে দেয়া, ঘরছাড়া করা, কর্মীশুশ্যূ-নেতাশূন্য সর্বোপরি ভোটারশূন্য করা কোন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষণ?

Check Also

সন্ধ্যায় আবারো সড়ক অবরোধ তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করায় আবারো সড়ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।