ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:কথা ছিল আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করলে বিএনপিও কেন্দ্র দখল করবে। সে জন্য আজ নেতা কর্মীদের মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে মাঠে নামার কথা। আরও কথা ছিল ভোট সুষ্ঠু না হলে বিএনপির নেতা কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের ইট বালি খুলে নেবেন, থানা ঘেরাও করবেন।
এসব কথার সবই ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের।
সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট হয়েছে। বুলবুলের সারা দিনের কর্ম চিত্র দেখার পর বলতে হয়, সবই ছিল ফাঁকা আওয়াজ। বাস্তবে বুলবুলের পাশে কোনো কর্মীবাহিনী তো দূরের কথা, দু-চার জন্য কর্মীকেও দেখা যায়নি। বলতে গেলে একাই তিনি সারা দিন এই কেন্দ্র ওই কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কল্পনার এই ঘোড়সওয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামিয়া কলেজ মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর বসে পড়ে রণে ভঙ্গ দেন। হতাশার ভাঙন এমনটাই নিদারুণ ছিল যে, আজকের নির্বাচনে বুলবুল নিজের ভোটটিও দেননি, যা হতে পারত চিত্রে ধারণ করে রাখার মতো।
কথা ছিল সকাল আটটায় নগরের উপশহর স্যাটেলাইট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। লিটন সাড়ে আটটায় ভোট দিলেন।
তখনো গণমাধ্যমকর্মীরা অধীর অপেক্ষায়, বুলবুল আসবেন। দশটার দিকে জানা গেল কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট নেই, কিংবা থাকলেও তাদের প্রতিপক্ষ ‘নৌকা’ প্রতীকের সমর্থকেরা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। যে কারণে বুলবুল নিজের ভোট দেওয়া বাদ দিয়ে ছুটে যান ওই সব কেন্দ্রে।
সাড়ে দশটার দিকে বুলবুল ছুটে যান করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিরোইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। কারণ ভোটের পাল্লায় কেন্দ্রটি বেশ ভারী, নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৪ হাজার ৪৪২ ভোট। সেখানে তাঁর এজেন্টদের কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত বুলবুল নিজে উপস্থিত থেকে পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দেন।
শহীদ মইজউদ্দিন জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও দু-চারটি কেন্দ্রে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। বুলবুল ছুটে গিয়ে সেগুলোরও সুরাহা করেন।
সাড়ে এগারোটার দিকে বুলবুল খবর পান, ইসলামীয়া কলেজ কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নাকি শেষ হয়ে গেছে। শোনা মাত্র তিনি ছুটে যান সেখানে। গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চান। এ সময় বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, প্রিসাইডিং অফিসার তাঁর কথার জবাব দেননি।
এরপর বুলবুল ওই কেন্দ্রের মাঠে সবুজ ঘাসের ওপর বসে পড়েন। বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসে ছিলেন। তাঁর পাশে চেয়ারে বসে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে মিনু ও তোফাজ্জল হোসেন ছুটে গিয়ে স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে আগে থেকেই পাতা বেঞ্চের ওপর বসেন। তাঁরা বুলবুলকেও অনুরোধ করেন মাঠ ছেড়ে বারান্দায় এসে বসার। কিন্তু বুলবুল অগ্রজ দুই নেতার কথায় কর্ণপাত করলেন না। মাঠে বসেই বৃষ্টিতে ভিজতে থাকেন। অথচ বুলবুলের মাথায় ছাতা ধরার মতো কোনো কর্মী আশপাশে ছিল না।
মাঠে অবস্থানের সময় বুলবুলকে অবসাদগ্রস্ত দেখালেও তিনি পুরোপুরি বিষণ্ন ছিলেন না। একই সময়ে নির্বাচনের ফল কী হতে যাচ্ছে, সেই চিত্রও পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। গণমাধ্যমকর্মীদের কেউ কেউ তাঁকে প্রশ্ন করেন, ভোট দিতে যাবেন না?
বুলবুলের জবাব, ‘আমার এক দিয়ে কী আর হবে?’প্রথমআলো।