সিলেটে ভোট শুরুর ১০ মিনিট পর কেন্দ্র দখল-জালভোট:যুগান্তর#১৫ কেন্দ্রে জাল ভোট, বিএনপির দাবি ৪১: প্রথম আলো

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর পর নানা অনিয়ম দেখা দিয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। বিশেষ করে কেন্দ্র দখল, ভোটগ্রহণ বন্ধ, ব্যালট সংকট, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগই বেশি। এসব অভিযোগে শাসক দলের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন বিএনপি-জামায়াত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

সোমবার সকাল ৮টায় সিসিকর ১৮নং ওয়ার্ডের রায়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

তিনি ভোট দেয়ার পর অভিযোগ করেন, রাতে ভোট জালিয়াতির। কিন্তু তার এমন অভিযোগ মিথ্যাচার বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

এর পর আরিফ অভিযোগ করেন, ২১নং ওয়ার্ডের চান্দুশাহ দাখিল মাদ্রাসা এবং এমসি কলেজকেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।

এদিকে নগরীর ৫নং ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী কামাল মিয়া ওরফে গুল্লি কামালের লোকজন বর্তমান কাউন্সিলর স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজওয়ান আহমদের এজেন্টদের ওপর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হামলা চালায়।

তারা খাসদবির ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ল্যাপটপ, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেন। রেজওয়ান আহমদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এমন অভিযোগ করেছেন।

বেলা ১০টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ ও ১১নং ওয়ার্ডের বেশ কটি কেন্দ্রে বিএনপির কোনো এজেন্ট নেই।

সরেজমিন জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে রেডিও প্রতীকের কাউন্সিলরপ্রার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা রিমাদ আহমদ রুবেল ও তার কর্মীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে অন্যান্য কাউন্সিলরপ্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেন।

তারা ভেতরে অবস্থানকালে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা পর বিজিবি সদস্যরা ওখানে গেলে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

এদিকে জামায়াতের অভিযোগ, ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় বের করে দেয়া হয়।

এর মধ্যে কাজিরবাজার, মীরাবাজার জামেয়া, স্কলার্স হোম, নবীনচন্দ্র বিদ্যালয়, হাতিম আলী স্কুল, বাগবাড়ী বর্ণমালা কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য। বের করে দেয়ার পর কেন্দ্রগুলো ছাত্রলীগ দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ জামায়াতের। তা ছাড়া ২১নং ওয়ার্ডের স্কলার্স হোম কেন্দ্রে ভোটারদের শুধু কাউন্সিলারদের ব্যালট দেয়া হচ্ছে কিন্তু মেয়রদের ব্যালট দেয়া হচ্ছে না। যুগান্তর।

——০———–

সিলেট সিটি নির্বাচনে আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ভোটকেন্দ্রের এক বা একাধিক বুথ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুথ দখল করে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

তবে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ৪১টি কেন্দ্র থেকে তাঁদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন।

আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এর পরপরই সেখানে একদল যুবক ঢুকে একটি বুথ দখলের চেষ্টা করে। দখলের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সেখানে গিয়ে বুথ দখলের বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে বলেন, রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকজন যুবক কেন্দ্র ঘিরে আছে। এরপর তিনি নিজেই সেখানে জড়ো হওয়া যুবকদের দিকে এগিয়ে যান। পরে এসব যুবক কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়।

নগরীর খাস দবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে বেলা সোয়া ১১টায় একদল যুবক ঢুকে তিনটি ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। কিছুক্ষণ পর এ কেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তিন যুবক কেন্দ্র থেকে চলে যায়।

নগরীর শাহজালাল জামিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ—এই তিনটি কেন্দ্র। এগুলোর মধ্যে পূর্ব কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২, পশ্চিমে ২ হাজার ৮০৩ এবং দক্ষিণে ১ হাজার ৯৮৬। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইলিয়াস ও জগদীশ চন্দ্র একে অপরের বিরুদ্ধে জাল ভোটের অভিযোগ এনে কেন্দ্র হট্টগোল সৃষ্টি করেন। তাঁরা দুজনই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। তাঁদের সৃষ্ট এই হট্টগোলের সুযোগে একদল যুবক কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে নৌকা মার্কায় সিল মারা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে কেন্দ্র ফাঁকা করে দেয়। এরপর ওই যুবকেরা পর্যায়ক্রমে তিন কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে গিয়ে সিল মারতে থাকে। বেলা দেড়টা পর্যন্ত ওই যুবকেরা কেন্দ্রের ভেতরেই ছিল। বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বাধা দেয়নি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক জামিয়া আলিয়া মাদ্রাসার এই জাল ভোট দেওয়ার দৃশ্য দেখছিলেন। তাঁকে একপর্যায়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। তিনি চলে আসেন।

নগরের টিলাগড় এলাকায় ২০ নম্বর ওয়ার্ডে নবীনচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টা থেকে ভোট নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে বলে জানানো হয়। ফয়সাল আহমেদ নামে এক ভোটার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, তিনি বেলা ১১টা থেকে ভোট দেওয়ার জন্য বুথের সামনে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ভোট দিতে পারছেন না। ওই কেন্দ্রের আটটি বুথে (পুরুষ) গিয়ে দেখা যায়, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তারা অলস বসে আছেন। তাঁদের কাছে কোনো ব্যালট পেপার নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন কোনো কথা না বলে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন। এদিকে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের এমসি কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুপুর ১২টার মধ্যেই ভোট নেওয়া শেষ।

নগরের আরও যেসব কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে আছে মডেল হাইস্কুল, শাহজালাল প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সুরমার কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল হাইস্কুল, টুলটিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বর্ণমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গ্রিনফেয়ার স্কুল, স্কলার হোমস স্কুল, নবীনচন্দ্র হাইস্কুল, হাতেম আলী হাইস্কুল, চান্দু শাহ স্কুল ও কাজী জালালউদ্দিন স্কুল কেন্দ্র।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।