ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট” অদ্ভূত কান্ড ঘটেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে। সকাল আটটায় ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরই ঘটে এই ঘটনা। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে খবর পাওয়া যায় যে মেয়র প্রার্থীর ব্যালট বই উধাও! একজন ভোটার মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট দেয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ কেন্দ্রেই মেয়র প্রার্থীর ব্যালট শেষ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরওয়ার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তার বাড়ি সংলগ্ন পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার সৈয়দা মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে কয়েকজন নেতা-কর্মী ছিলেন। তারাও কেন্দ্রের দোতলায় উঠেন এবং দুই তিনজন ভেতরে ঢোকেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও বহিরাগত লোকজন তাদেরকে বের হতে বলে এবং ‘জয় বালা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারাও ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে ঢুকতে পারেননি। এতে করে মজিবর রহমান সরোয়ার কেন্দ্রে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পরেন। ক্ষমতসীন দলের নেতাকর্মীদের স্লোগানে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো বেশ কিছু সদস্য। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ ছিলেন সরোয়ার।
সরেজিমন দেখা যায়, ২৭ নং ওয়ার্ডের কলাডেমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়র প্রার্থীর ব্যালট উধাও হয়ে যায়। নৌকা মার্কার লোকেরা এসে ব্যালট ছিনতাই করে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারে বাক্সে ভর্তি করে। এসময় নৌকার এজেন্টরাও নিজেরাই নৌকায় সিল মারতে থাকেন।
কর্তব্যরত সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন ভোটার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর তিনটি ভোট দিবে। কিন্তু মেয়র প্রার্থীর ব্যালট শেষ। কীভাবে শেষ হলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের লোকজন এসে সব নিয়ে গেছে। একই ঘটনা ২০ নং ওয়ার্ডেও সরকারি বরিশাল বিএম কলেজ কেন্দ্রেও। সেখানে ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলে। কিন্তু ডিসপ্লেতে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য প্রতীক দেখা যায়নি।
১২ নং ওয়ার্ডের ৫০ নং কিশোর মজলিস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। সেখানে ইভিএমে ত্রুটি দেখা দিলে ম্যানুয়ালি ভোট হয়। একপর্র্যায়ে ছাত্রলীগের নগর সভাপতি মো: জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে কিছু যুবক ব্যালট ছিনতাই করে প্রকাশ্যে নৌকা ও ঠ্যালাগাড়ি প্রতীকে সিল মারে। ফলে শেষ হয়ে যায় মেয়র প্রার্থীর ব্যালট বই।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীসহ সদর গার্লস স্কুল কেন্দ্রে যান কয়েকজন। সেখানে তারা জানতে পারেন মেয়র ব্যালট বাদে অন্য ব্যালট দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থী ভেতরে গিয়ে দেখেন মেয়র ব্যালটে আওয়ামী লীগের কর্মীরা সিল দিচ্ছেন। তিনি সাথে সাথে রিটার্নিং অফিসারকে জানান। রিটার্নিং অফিসার দ্রুত চলে আসেন। এ সময় তার সামনেই বাকবিত-ার একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী চড় থাপ্পর মারেন মনিষাকে। এসময় তিনি বাম হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হন।
২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, সোয়া ৮টার মধ্যে তার কেন্দ্রগুলো থেকে বিএনপি এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। ২৪, ২৫ ২৬ নম্বর ওয়ার্ড পুরোপুরি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দখলে। এখানে স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিক ভোট দিতে এসে পড়েন বিড়ম্বনায়। তাকে শুধু কাউন্সিলন প্রার্থীর ব্যালট দেওয়া হয়।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরওয়ার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সৈয়দা মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। তার সঙ্গে কয়েকজন নেতা-কর্মী কেন্দ্রের দোতলায় উঠেন এবং দুই তিনজন ভেতরে ঢোকেন।
তিনি বুথে ঢুকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে বলেন, তিনি তার ভোটার নম্বর জানেন না। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘ভোটার নম্বর ছাড়া ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। নম্বর এখন খুঁজে বের করা যাবে না।’ পরে সরওয়ারের সঙ্গে থাকা লোকেরা বাইরে গিয়ে ভোটার নম্বর নিয়ে আসেন। কেন্দ্রের যে বুথের ভোটার, সেখানে গিয়ে সোয়া ১০টার দিকে গিয়ে ভোট দেন তিনি।
মজিবর রহমান সরওয়ার অপেক্ষা করতে থাকেন তার ভোটার নম্বরের কার্ড আসার জন্য। কিন্তু বাইরে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী অনেকেই ‘জয় বাংলা’, ‘সরওয়ারকে বাইর কর’ স্লোগান দিতে থাকেন। ২০-২৫ জন ভোটকেন্দ্রে ঢোকার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। এ সময় মজিবর রহমান সরওয়ার কেন্দ্রে আটকা পড়েন। বাইরে আরো লোক জড়ো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ এসে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ারকে বের করে আনেন।
বাইরে বেরোলে অপেক্ষারত নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন মজিবর রহমান সরোয়ার ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘিরে ধরেন। তার সঙ্গে থাকা লোকজন আওয়াজ তুলে সরওয়ারকে বের করার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা মজিবর রহমান সরওয়াকে গাড়িতে তুলে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন।
বেলা পৌনে নয়টার দিকে মজিবর রহমান সরওয়ার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, অর্ধশতাধিক কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ভোট হবে না।
Check Also
৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …