ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা গোপীনাথ দাস। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় শিক্ষার্থীরা তার ওপর চড়ায় হলে একটি দোকানে ঢুকে তিনি সাটার বন্ধ করে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দুপুরে রাইফেল ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ওই পথ দিয়ে রিকশাযোগে চারাগাছ নিয়ে ফিরছিলেন গোপীনাথ দাস। এ সময় গোপীনাথ দাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কটূক্তি করে বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজাকারের বাচ্চা’। এর প্রতিবাদ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের ধমক দেন।
আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘গোপীনাথ দাস আমাদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা নাকি ফাও আন্দোলন করতেছি। শাহ্জাহান খান হেসেছেন সেটা নাকি দোষের নয়।’
‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে শিক্ষার্থীদের রোষানলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা গোপীনাথ দাস
এমন মন্তব্যে গোপীনাথ দাসকে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ধরে মারমুখী হয়ে উঠলে দ্রুত রিকশা থেকে নেমে একটি দোকানের ভেতর ঢুকে শাটার নামিয়ে দেন। পরে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ওই দোকানের শাটার ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ও আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে রক্ষা করে দোকানের ভেতর থেকে বের করে আনে। এ সময় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন গোপীনাথ দাস।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গোপীনাথ দাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কটূক্তি করেছেন। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন। এর প্রতিবাদ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের ধমক দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা কমান্ডার গোপীনাথের ওপর চড়াও হয় এবং মারমুখী হয়ে ওঠে। পরে গোপীনাথ তার ভুল স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। এরপর শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে গোপীনাথ দাস বলেন, আমি একটা অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলাম। আমার হাতে চারাগাছ ছিল। এ সময় ছাত্ররা আমার রিকশা থামিয়ে ভেতরে যেতে বাধা দেয়। আমি তাদের বেশি কিছু বলিনি।
তাহলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে দোকানে ঢুকে শাটার লাগিয়ে দিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’
—————–0———————
নৌ মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে ছাত্রশিবির
রাজধানীতে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীকে হত্যাকারীদের বিচার, নৌ মন্ত্রীর পদত্যাগ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও পরিবহন শ্রমিকদের হামলার বিচার দাবী করে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, গত রোববার রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত বাসচাপায় মৃত্যু হয় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানমের।
শিক্ষার্থীদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে দেশবাসী যখন শোকে কাতর তখন সাংবাদিকদের সামনে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী হাসি তামাশা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বেপরোয়া খুনিদের আড়াল করতে তিনি ভারতের সড়ক দূর্ঘটনার কথা টেনে এনে বিকৃত মানষিকতার পরিচয় দিয়েছেন। নৌ মন্ত্রীর এমন দায়িত্বহীন, তামাশা ও বিদ্রুপপূর্ণ আচরণের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানানেই।
মানুষের মৃত্যু নিয়ে এমন নিষ্ঠুর বিদ্রুপ কেউ করতে পারেনা। কোন সভ্য দেশের মন্ত্রী হতে পারে না। বরং নৌ মন্ত্রী ভয়ংকর ও নিষ্ঠুরতার প্রতিক। তার এ ঘৃন্য আচরণ নতুন নয়। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সকল অন্যায় নির্মমতার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন নৌ মন্ত্রী। তার এই দায়িত্বহীন মদদেই পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অবলীলায় নানা নির্মম হত্যাকন্ড ঘটাচ্ছে। বুধবার যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গাড়ি চাপা দেয়া হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে বর্বরতার আরেকটি ঘৃন্য নজির সৃষ্টি করেছে। গত তিন দিন যাবত শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরিক্ষা বাদ দিয়ে রাজপথে অবস্থান নিলেও এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দুই শিক্ষার্থীকে বাস চাপায় হত্যা নিছক কোন দূর্ঘটনা নয় বরং দুই বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এগুলো এক প্রকার হত্যাকান্ড। এর আগে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় মেধাবী ছাত্র রাজিবের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যু হয়। জীবন দিতে হয়েছে রাজধানীর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েলকেও। তাদের বেপরোয়া আচরণে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। উল্টো যারা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে তাদের উপরে দায় চাপানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে নৌ মন্ত্রী ও ঘাতকদের ইচ্ছাই প্রতিফলিত হচ্ছে। কোন সভ্য রাষ্ট্রে এ অবস্থা চলতে পারে না।
শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার দাবীতে রাজপথে নেমে এসেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি ও তাদের যৌক্তিক দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। অবিলম্বে নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক জাবালে নূরের চালকদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগ যুবলীগ সন্ত্রাসীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আগামী দেশ গড়ার কারিগড় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুবিদা নিশ্চিত করতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে না বরং দেশের আপামর জনগণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে।