ক্রাইমবার্তা রিপোট: গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য শতকরা ৫ শতাংশ সুদ হার নির্ধারণ করে দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের অনুসারে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। এ ঋণের মোট সদুহার ১০ শতাংশ হবে। তবে এ ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে এবং বাকি ৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবে। ছয় মাস(ফ্লাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে) থেকে এক বছরের(বাড়ি নির্মাণ) গ্রেস পিরিয়ডসহ (এই সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা লাগবে না) ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
তবে কোনো সরকারি চাকুরেরে বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা বা দুর্নীতির মামলা থাকলে সেই মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই এই ঋণ পাবেন না। গতকাল অর্থ বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরেই প্রশাসনের উপ-সচিব পদে কর্মকর্তা সরকারের পক্ষ থেকে ৪৫ লাখ টাকা করে গাড়ি কেনার ঋণও অনুমোদন করা হয়। এই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য তারা মাসে পাচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, সাধারণ জনগণ যদি গৃহ নির্মাণের জন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেন তাবে তাকে সুদ গুণতে হয় ১০ শতাংশের ওপরে।
জানা গেছে, বর্তমানে ১০ শতাংশ সুদহারে একজন সরকারি কর্মচারী সর্বোচ্চ ঋণ পান এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা, জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্তরা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারবেন। সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ ঋণ নিতে পারবেন। একজন সরকারি চাকরিজীবী তার সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত এ ঋণ নিতে পারবেন।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সরকার অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বা¯Íবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতন কাঠামোর পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
বেতন কাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা।
সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণে ঋণের মাধ্যমে অর্থের জোগান দিতে এ নীতিমালা করা হলেও সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারীরাও এ সুবিধা পাবেন। সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন না। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে এ ধরনের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এ হিসাবে সরকারের প্রায় ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পাবেন। তারা এককভাবে এ ঋণ নিতে পারবেন। আবাসিক বাড়ি করার জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণও নেওয়া যাবে। ফ্ল্যাট কেনার জন্যও এ ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে ফ্ল্যাট হতে হবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত অর্থাৎ রেডি ফ্ল্যাট। অবশ্য সরকারি সংস্থার নির্মাণ করা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রেডি ফ্ল্যাটের শর্ত শিথিল করা যাবে।
তবে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যান্ত এ নীতিমালার আওতায় ঋণ গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খন্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারী এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী ঋণ নেওয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশিøষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এরপরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।
ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেতন স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে সিলিং সরকার নির্ধারণ করে দেবে, সেটিও বা¯Íবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ ঋণ সুবিধা নির্ধারণ করবে তার মধ্যে যেটি কম সে পরিমাণ ঋণ পাবেন। ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য ডেট ইক্যুইটি রেশিও (অনুপাত) হবে ৯০:১০। অর্থাৎ ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য কেউ নিজস্ব উদ্যোগে ১০ টাকা খরচ করলে তিনি ৯০ টাকা ঋণ পাবেন।
ঋণের সুদ সম্পর্কে নীতিমালার ৭(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এটি হবে সরল সুদ এবং সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা হবে না। ঋণগ্রহীতা কর্মচারী ব্যাংক রেটের সমহারে (বর্তমানে যা ৫ শতাংশ) সুদ পরিশোধ করবেন। সুদের অবশিষ্ট অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদানকরবে।’
নীতিমালার ৪ ধারায় ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, এ নীতিমালার আওতায় একজন সরকারি কর্মচারী দেশের যেকোনো এলাকায় গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ভবনের নকশা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত হতে হবে। যে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা হবে, তা সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে। ঋণদানকারী ব্যাংক বা বা¯Íবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ব্যাংকে আবেদনকারীর একটি হিসাব থাকবে। ওই হিসাবের মাধ্যমে সংশিøষ্ট কর্মচারীর বেতন-ভাতা, পেনশন ও গৃহনির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রেডি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের পুরো অর্থ এক কি¯িÍত ছাড় করবে ব্যাংক। গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণের টাকা চার কিস্তিতে ছাড় করা যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার আগে যে সম্পত্তিতে ঋণ দেয়া হবে, তা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বরাবর রেজিস্টার্ড দলিলমূলে বন্ধক রাখতে হবে। বাস্তুভিটায় বাড়ি করার ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার মালিকানাধীন অন্য কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখা যাবে। এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ২০ বছর।
গৃহনির্মাণের প্রথম কিস্তি ঋণের অর্থ পাওয়ার এক বছর পর, ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ পাওয়ার ছয় মাস পর থেকে ঋণগ্রহীতা মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ শুরু করবেন। কোনো কারণে মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে বিলম্বের জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তির সঙ্গে যুক্ত হবে। যে ব্যাংক ঋণ দেবে, সেই ব্যাংকে তার মাসিক বেতনের হিসাব খুলতে হবে। তার বেতন-ভাতা ওই হিসাবে জমা হবে।
ব্যাংক সেখান থেকে প্রথমে মাসিক ভিত্তিতে কিস্তির টাকা কেটে নেবে। পরে ঋণগ্রহীতা বেতন-ভাতার বাকি অর্থ হিসাব থেকে তুলতে পারবেন। ঋণগ্রহীতা অন্যত্র বদলি হলে তার হিসাবও সেখানে একই ব্যাংকের কোনো শাখায় স্থানান্তর করে নেবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উলেøখ করা হয়েছে
সরকারী শিক্ষকরা ব্যাংক ঋণ সুবিধা পেলেও বেসরকারী ক্ষিকরদের ব্যাপারে কিছুই বলা নেই প্রজ্ঞাপনে।