ক্রাইমবার্তা রিপোট: জাবালে নূর বাসের ধাক্কায় দুই সহপাঠী নিহতের ঘটনায় সকাল থেকেই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দুই শিক্ষার্থী হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে উত্তরায় সড়ক অবরোধে আটকেপড়া বাসের লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
যেসব চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারছেন না, তাদের বাস ভাঙচুর করা হচ্ছে। এতে করে বাসযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কয়েকটি ভাগে দলবদ্ধ হয়ে অবরোধে আটকেপড়া বাসচালকের লাইসেন্স আছে কিনা তা পরীক্ষা করছেন। যেসব চালক লাইসেন্স দেখাতে পারছেন না, আন্দোলনকারীরা তাদের বাস ভাঙচুর করছেন এবং তাদের কেউ কেউ আবার লাইসেন্সবিহীন চালকের ওপর অতর্কিত হামলাও চালাচ্ছেন। যারা লাইসেন্স দেখাচ্ছেন, তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
অবরোধ থেকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক জাবালে নূরের চালকদের দ্রুতবিচার এবং ফাঁসি দাবি ছাড়াও বেশ কয়েকটি দাবি করা হয়েছে।
দাবিগুলো হল- নৌপরিবহনমন্ত্রী সব সংসদীয় কমিটি, মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ, ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারের ন্যায্য দাবি পূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সব দোষীকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সব প্রকার দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, ক্ষতিগ্রস্তদের বাস্তবসম্মত ক্ষতিপূরণ, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করা।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ছাত্র ইকবাল বলেন, আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাসচালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করা একটি অংশ। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া আমরা কাউকে গাড়ি চালাতে দেব না।
এদিকে উত্তরা এয়ারপোর্টের দুই পাশের প্রধান সড়কগুলোতে সকাল থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা রাস্তার ওপর খণ্ড খণ্ডভাবে বিক্ষোভ করে কুর্মিটোলা হোটেল রেডিসনের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন।
———০—————-
তিনি বলেছেন, বেপরোয়া বাসচালকের দ্বারা মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গুলি, টিয়ার গ্যাস ও বেধড়ক লাঠিচার্জে যেভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে, তা কেবল নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকদের দ্বারাই সম্ভব।
বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব শিক্ষার্থীকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সরকারকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যর্থতায় পর্যবসিত। সরকারের প্রশ্রয়ে দুষ্কৃতিকারীদের দাপট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই দেশে এখন মানুষের জীবন-জীবিকা চরমভাবে নিরাপত্তাহীন।
ফরুল বলেন, মানুষের ক্ষোভের আঁচ উপলব্ধি করতে পারে না বলেই সরকার গণবিরোধী বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কোমলমতি কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন ঝরে পড়াটাও দুঃশাসনের ফলশ্রুতি।
তিনি বলেন, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পরে যখন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ বেদনার্ত, শোকাহত ও ক্ষুদ্ধ, তখন নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর হাসি যেন বিদ্রুপের হাসি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান পরিবহন সেক্টরের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার আশকারায় দীর্ঘদিন ধরে এই সেক্টরে অরাজকতা লেগেই আছে।
তিনি অভিযোগ করেন, দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লেও সরকারের বিন্দুমাত্র টনক নড়েনি, যা হঠকারি বাসচালকদের উৎসাহিত করেছে। মঙ্গলবারও একজন শিক্ষার্থী কুমিল্লায় গাড়ী চাপায় নিহত হয়েছেন।
ক্ষমতা কুক্ষিগত করা জবাবদিহিবিহীন সরকার শুধু ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে নির্দয়ভাবে দমন করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বলেই অপরাধীরা প্রকাশ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল।