ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বিপ্লব দেবের বহু আত্মীয় বাংলাদেশ থাকেন৷ তাহলে তার নাগরিকত্ব কী হবে ? এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার সময়ে বাংলাদেশে থাকা বিপ্লব বাবুর আত্মীয়দের ছবি ও মন্তব্য প্রকাশ করেছিল দুই দেশের সংবাদ মাধ্যম৷ সেই সব মন্তব্য ঘিরেই এখন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হিসেবে কটাক্ষ করে বলে হচ্ছে অবিলম্বে তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি ভারতীয়৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ঘিরে বিভিন্ন মন্তব্য৷ আসামে জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা চলছে। ওই তালিকায় ৪০ লাখ লোককে বাদ দেয়া হয়েছে। এতে করে মরাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশে৷ সেখানকার চট্টগ্রাম বিভাগের কচুয়া উপজেলার সহদেবপুর পূর্ব ইউনিয়নের মেঘদাইর গ্রামেই তার আদিবাড়ি৷ সেখানে থাকেন বিপ্লব দেবের বাংলাদেশি কাকা প্রাণধন দেব৷ ভাইপো মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালের ‘মুক্তিযুদ্ধ’ চলাকালীন বিপ্লব দেবের বাবা-মা ভারতে চলে গিয়েছিলেন৷ ভারতে যাওয়ার পর ত্রিপুরার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লব৷
আসামের নাগরিক পঞ্জীকরণ তথা এনআরসির খসড়ার তালিকা প্রকাশ ঘিরে বিতর্ক প্রবল৷ চল্লিশ লক্ষ মানুষের পরিস্থিতি নিয়ে উত্তাল হয়েছে ভারত৷ তারই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া সরব ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে ৷ উত্তর পূর্বের এই রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আসামের মতো ত্রিপুরাতে নাগরিক পঞ্জীকরণের প্রয়োজন নেই৷ নাগপুরে আরএসএস সদর দফতরে গিয়েছিলেন তিনি৷ বিভিন্ন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে পালটা মন্তব্য৷
এতে বিব্রত হচ্ছে ত্রিপুরা সরকার৷ কারণ বিপ্লববাবু আগেই জানিয়েছেন, অসমের মতো এনআরসি জারি করার পরিস্থিতি নেই ত্রিপুরায়৷ নিজের অবস্থা বুঝতে পেরেই কি আগেভাগে পিছু হটেছেন মুখ্যমন্ত্রী ? সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে এই প্রশ্ন৷
আরো পড়ুন :
বেআইনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে: অমিত শাহ
আসামে বাঙালি খেদাওয়ের নাম করে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চক্রান্ত চলছে। রক্তবন্যা বইয়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এসব মোটেই বরদাস্ত করা হবে না। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এভাবেই তীব্র আক্রমণ করেন মোদি সরকার তথা বিজেপিকে। তিনি বলেন, ওরা কে আসামের মানুষকে দেশ থেকে তাড়ানোর? উদ্বাস্তুদের নতুন করে উদ্বাস্তু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের নাগরিকদেরই অন্যায় এবং অমানবিকভাবে বিদেশি তকমা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার আসাম বিতর্ক নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টের দুই কক্ষে প্রবল হইচই হয়। দফায় দফায় অচল হয়ে পড়ে রাজ্যসভা। সর্বদলীয় বৈঠকের দাবিতে সরকারকে চেপে ধরে বিরোধী জোট। রাজ্যসভায় বিরোধীদের আক্রমণকে প্রতিহত করতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, জাতীয় পঞ্জিকরণ প্রক্রিয়া আমাদের শুরু করা নয়। এটা রাজীব গান্ধী চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের সাহস ছিল না। বাস্তবায়িত করে দেখাতে পারছি আমরাই। বেআইনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলবে। অমিত শাহ মঙ্গলবার পার্লামেন্টের বাইরে প্রশ্ন করেন তৃণমূল কংগ্রেস আগে উত্তর দিক তাদের অবস্থান কী? তারা কি চায় না বেআইনি নাগরিকদের চিহ্নিত করা হোক? অমিত শাহ যে কার্যত মমতাকেই টার্গেট করে এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন, তা স্পষ্ট। তবে এসবের মধ্যেও এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে গিয়ে আসাম নিয়ে সরকারকে মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন মমতা। উত্তরে রাজনাথ তাকে আশ্বাস দেন, অমানবিক কিছু হবে না। দিলীপ ঘোষের উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে রাজনাথ সিংয়ের কাছে মমতা অভিযোগ জানান।
দেড় বছর আগে নোটবাতিল ইস্যুতে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে শোরগোল ওঠার সময় সর্বাগ্রে যেমন তিনিই সরব হয়ে বিরোধী বিক্ষোভের পুরোভাগে চলে এসেছিলেন, ঠিক সেভাবেই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে জাতীয় পঞ্জিকরণ বিতর্কেও বিজেপিবিরোধী অবস্থানের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছেন মমতা। সেই মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো রাজ্যের সরকার বা রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসুক আর না আসুক, আসামের বাসিন্দাদের সঙ্গে এই ষড়যন্ত্র আমি রুখবই। দেখি কে আটকায়। মমতার নির্দেশে সোমবার পার্লামেন্টে তৃণমূল অসম নিয়ে হইচই শুরু করার পর কংগ্রেসসহ অন্য দলও সুর চড়িয়েছে।
মঙ্গলবার মমতা বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে এসব কী হচ্ছে? দলিতদের উপর অত্যাচার। সংখ্যালঘুদের উপর পীড়ন। আদিবাসীদের উপর শোষণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গণপিটুনি চলছে। ক্ষমতায় আছে বলে ওদের যা ইচ্ছে তাই করতে দেব না।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদি বিরোধী জোট শক্তিশালী করতে মমতা প্রথম থেকেই অতিসক্রিয়। চন্দ্রশেখর রাও থেকে ওমর আবদুল্লাহ, বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতৃত্ব কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করছেন। মমতার দিল্লি আগমনও ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনেরই রণকৌশল তৈরির লক্ষ্যে। মঙ্গলবার বিকেলে রাম জেঠমালানির বাসভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। পার্লামেন্টের অধিবেশন চলায় গোটা রাজনৈতিক মহলের মধ্যেও প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে মমতার দিল্লি সফর নিয়ে। দুপুরে বিশপ সম্মেলনের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। সেখানেই মমতা ক্ষোভে ফেটে পড়েন অসম ইস্যুতে।
গতকালই আসামের নাগরিকপঞ্জির খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। ৪০ লক্ষ বাসিন্দার নাম বাদ গিয়েছে। এমনকী ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের নামও সেখানে নেই উল্লেখ করে মমতা বলেন, এ তো চমকে যাওয়ার মতো বিষয়। এসব মেনে নেয়া যায় নাকি। বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসামের বাসিন্দাদের ভোট নেয়ার সময় কোনো আপত্তি ছিল না। আর এখন ৪০ লক্ষ মানুষকে বিদেশি তকমা দেয়া হচ্ছে? এখনই যদি সবাই মিলে প্রতিবাদ গড়ে না তুলি তাহলে আগামীদিনে কিন্তু সবার জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে।