ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ নং ওয়ার্ডের নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৫৭৬ জন। এ কেন্দ্রে ২ হাজার ৫০৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। শতকরা হিসাবে কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ৯৭.২০ শতাংশ।
একইভাবে ১ নং ওয়ার্ডের গোলজারবাগ উচ্চবিদ্যালয় (মহিলা) কেন্দ্রে ভোটার ১ হাজার ৭০১ জন। সেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১ হাজার ৬৪৬ জন। শতকরা হিসাবে ৯৬.৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে এই কেন্দ্রটিতে। এ দিকে সর্বনি¤œ ভোট পড়েছে ১৪ নং ওয়ার্ডের উপশহরে রাজশাহী স্যাটেলাইট টাউন হাই স্কুল কেন্দ্রে। এখানে ভোট পড়েছে ৪২.৬৬ শতাংশ। যে কেন্দ্রটির ভোটার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শুধু নগরপাড়া বা গোলজারবাগ নয়Ñ এ দু’টি কেন্দ্রসহ মোট ১১টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশের ওপরে। ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে এমন অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে শতাধিক কেন্দ্রে। ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে ৬৯ কেন্দ্রে। আর ৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে ১১৮ কেন্দ্রে।
ভোটের এ হারকে অস্বাভাবিক বলছেন বিশ্লেষকেরা। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটের এ হার অবশ্যই অস্বাভাবিক। নির্বাচন কেমন হয়েছে সেটা সবাই দেখেছেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে কোন পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে এটা যাচাই করা। সুষ্ঠু পদ্ধতিতে ভোট না হলে নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য হচ্ছে সেটা বাতিল করা। নির্বাচন কমিশন যদি কিছু না দেখে, কিছু না করে তাহলে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা ভেঙে পড়বে।
গত সোমবার সিলেট ও বরিশালের সাথে রাজশাহী সিটিতেও ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটের শুরুতেই বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। এরপর দুপুরের আগেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে মেয়রের ব্যালট শেষ হয়ে যায়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কয়েকটি কেন্দ্র অবরুদ্ধ করে রাখে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। ওই কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের। পুলিশের সহযোগিতায় তাদের চড়-থাপ্পড় মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এলাকার জামায়াত ও বিএনপির চিহ্নিত ভোটারদের। সাধারণ ভোটারেরা কেন্দ্রে প্রবেশ করলেও প্রকাশ্য সিল দিতে বাধ্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। প্রতিবাদ হিসেবে নগরীর ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রের মাঠে অবস্থান নেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। শেষ পর্যন্ত নিজের ভোটটিও দেননি তিনি।
ভোটের চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, আ’লীগের মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট এবং বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। বাতিল ভোট ৩ হাজার ৬৯১ এবং ভোটের হার ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুল ৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন আগের বারের মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা লিটনকে। ওই সময় ভোটের হার ছিল ৭৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। ৫৯ বছর বয়সী লিটন এ নিয়ে তিনবার রাজশাহীর মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। তিনবারই তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বুলবুল। ২০০৮ সালে যুবদলের তখনকার রাজশাহী মহানগর সভাপতি বুলবুলকে ১৩ হাজার ৮১০ ভোটে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন লিটন। ভোটের হার ছিল ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ।
৯০ শতাংশের ওপর ভোট : কাশিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে (৯১.৬৯%), গোলজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ কেন্দ্রে (৯০.৪৬ %), গোলজারবাগ উচ্চবিদ্যালয় (মহিলা) কেন্দ্রে ৯৬.৭৭ শতাংশ, ঠাকুরমারা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে (৯১.১৭ %), নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৭.২০ শতাংশ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয়তলা-মহিলা (৯১.৩১), আলী নওয়াজের অটো গ্যারেজের মাঠ (৯১.১৯%), ছোট বনগ্রাম আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়- দক্ষিণাংশ মহিলা (৯০.৭০%), শাহ মখদুম ডিগ্রি কলেজ (৯১.১১%), ভদ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৯২.৭১%), সায়েরা খাতুন নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়-মহিলা (৯১.৫৮%)।
৮০ শতাংশের ওপরে ভোট : রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ( ৮৪.০৬%), মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.২৭%), রাজশাহী কোর্ট কলেজ (৮১.৪৪%), ডিবি আনোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বি (৮২.১৮%), মীর আইয়ুব আলী বিদ্যানিকেতন (৮৯.৫৬%), রাজশাহী কোর্ট একাডেমি (৮১.৩৬%), রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় (৮১.৪৮%), উদয়ন ডেন্টাল কলেজ (৮১.৩০%), বিরাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৮৩.৩৮%), সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (৮৩.০৪%), হোসেনিগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৭.৫০%), দরগাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৯.১৭%), পাঠানপাড়া কামারুজ্জামান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.৭৯%), রাজশাহী মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়-পুরুষ (৮৬.১৫%), মহিলা (৮৫.৮৭%), সরকারি সিটি কলেজ (৮৯.৩১%), বহুমুখি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় (৮৭.৪৫%), কাদিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৭৫%), মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.০৪%), শহীদ নজমুল হক বালিকা উচ্চবিদ্যালয় (৮২.৫৭%), তার যোগাযোগ প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.২১), আটকোশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরাতনভবন-দ্বিতীয় তলা(৮৫.১৮%), ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়-মহিলা (৮০.৪৬%), শাহ মখদুম হাই স্কুল-পাকা ভবন (৮০.১৩%), টিনশেড (৮২.৩৪%), নওদাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-পূর্ব ভবন (৮৫.৯২%), উত্তর ভবন (৮৪.৯২%), হামিদপুর নওদাপাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় (৮৪.৪৫%), ইউসেফ ছোট বনগ্রাম সিটি করপোরেশন স্কুল (৮০.৯১%), গোল্ডেন টাচ প্রি ক্যাডেট স্কুল (৮৮.০১%), শিরোইল কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-পুরুষ (৮৭.৬১%), মহিলা (৮৬.৯৬%), ছোট বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-পশ্চিমাংশ (৮৭.৩০%), উত্তরাংশ (৮৩.৪৩%), শিরোইল কলোনি উচ্চবিদ্যালয়-পশ্চিমাংশ (৮৭.৩৫%), কৃষ্ণকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০.৪৭%), রানী বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ২য় তলা-পুরুষ (৮০.১৬%), সাবিত্রী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় (৮৬.২৫%), সাবিত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ (৮২.৯২%), সইজুদ্দিন জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৮.১২%), অনন্যা শিশুশিক্ষালয় (৮৮.৮৬%), খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.১৭%), তালাইমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮২.৮৬%), খাদেমুল ইসলাম বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ পুরুষ (৮৪.৪২%), মহিলা ( ৮১.৫৭%), মেহেরচন্ডি উচ্চবিদ্যালয় (৮৮.৭৯%), মাদার বখস গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ (৮১.৯১%), বালিয়াপুকুর বিদ্যানিকেতন পুরুষ(৮০.৬৭%), কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ (৮১.৪৮%), মহিলা (৮০.৩৫%), তালাইমারি দারুল উলুম আলিম মাদরাসা-পুরুষ (৮৯.৭৫%), মহিলা (৮০.৩৯%), ধরমপুর শমসের আলী মোল্ল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৯.৯৯%), ডাশমারি উচ্চবিদ্যালয় মহিলা (৮২.৭১%), দারুসুন্নাহ দাখিল মাদরাসা-(৮৯.১৮%), বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয় (৮৬.৮৬%), ইসলামিয়া কলেজ (৮৫.৪২%), মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৫.৯৪%)।
৫০ শতাংশের নিচে ভোট : হাউজিং এস্টেট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (৪৭.৭৩) এবং রাজশাহী স্যাটেলাইট টাউন হাই স্কুল (৪২.৬৬)।
উল্লেখ্য, রাজশাহীতে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। ১৩৮টি কেন্দ্রে ১০২৬টি ভোটকক্ষে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। একজন মেয়র, ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১০ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট দেন এই ভোটারেরা। একই দিনে অনুষ্ঠিত সিলেট ও বরিশালে ১৫টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলেও রাজশাহীর কোনো কেন্দ্রে স্থগিত হয়নি।
Check Also
৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …