ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মনে হচ্ছে এমন একটি উপায় তৈরি করে নিয়েছে, যেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট বা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই একজন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচিত হন। ইমরান খান মনে হচ্ছে তেমনই একজন। নির্বাচনের অনেক আগেই, দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছিল। এখন হয়তো অনেকে অনুমান করতে পারেন যে সেনাবাহিনী যে রকমটা চেয়েছে, তাতে হয়তো অন্য কাউকে তাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপযুক্ত মনে হয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন সেনাবাহিনী এসে নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি ধ্বংস করে দিচ্ছে? দেখেশুনে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনী আসলে নিজেদের পছন্দের একজনকে সামনে রেখে আসলে নিজেরাই দেশ শাসন করতে চাইছে। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ইমরান খান দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে রয়েছেন, কিন্তু কখনোই নিজেকে সেভাবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেননি।
জেনারেল জিয়াউল হক এবং জেনারেল মোশাররফ দুজনই ছিলেন পুরোপুরি সেনাবাহিনীর মানুষ। তাঁরা সামরিক একনায়কদের মতো করেই দেশ পরিচালনা করেন এবং জনগণের বিরাগভাজন হন। নওয়াজ শরিফ যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন সবখানেই সেনাদের উপস্থিতি ছিল এবং এর প্রধান মন্ত্রিসভার বৈঠকগুলোয় উপস্থিত থাকতেন তাঁর মতো করে বৈঠক পরিচালনা করার জন্য।
গণতান্ত্রিক দেশগুলো খোলাখুলিভাবে বলেছে যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শাসনের অধীনে ছিল। এখন ইমরান খানের প্রশংসাপত্র কি পশ্চিমের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? তার শাসনের পরবর্তী কয়েক মাসে এটা বোঝা যাবে। এটা ইমরান খানের ওপর নির্ভর করবে যে তিনি উভয় শাসক—সেনাবাহিনী ও জনগণকে খুশি করতে পারেন কি না।
পাকিস্তানের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের
ভূমিকা এখন পর্যন্ত দর্শকের। নির্বাচনে জয়লাভের পর দেওয়া এক বক্তৃতায় ইমরান খান বলেছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখবেন। সম্পর্ক
ভালো রাখার জন্য ভারত এক পা এগোলে তিনি দুই পা এগোতে রাজি। ইমরান এও বলেন যে কাশ্মীর এখনো দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা
হয়ে রয়েছে।
কিন্তু কাশ্মীরিরা এখন নিজেদের ইসলামি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র চায়। অন্য কথায়, কাশ্মীরিরা এখন সমর্থন পেতে পাকিস্তানের দিকে তাকায় না। এমনকি ইয়াসিন মালিক ও শাব্বির শাহের মতো মানুষও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য শ্রীনগরে ছিলাম। তখন আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম যখন আমি আবিষ্কার করলাম যে তারা আর পাকিস্তানের পক্ষে নয়। তাদের মতে, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয়ই তাদের নিজেদের মতো করে কাশ্মীর শাসন করছে।
কীভাবে ইমরান এখন তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনবেন? তাঁর মতে, এখানে কেবল দুটি পক্ষই আছে—ভারত ও পাকিস্তান, কাশ্মীরি তরুণেরা কোনো পক্ষ নয়। এখন এই ইস্যুতে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দেশটি জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ না করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ইমরান কি পারবেন কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে? বা এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে?
ইমরান খান এখন এমন দুর্বল অবস্থানে আছেন যে যদি তিনি এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা দিতে চানও, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া ঠিক হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেনাপ্রধান খোলাখুলিভাবে তাঁর অবস্থানকে সমর্থন না করেন। তবে এ মুহূর্তে এ ধরনের কোনো লক্ষণ নেই। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইমরান খান এ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে চাইবেন। বস্তুত ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইমরান প্রমাণ করেছেন যে তিনি রাজনৈতিকভাবে সঠিক এবং এমনকি কূটনৈতিকভাবেও সফল। তবে তার জন্য প্রকৃত পরীক্ষা হবে যে ভারতের সঙ্গে সমীকরণ গড়ে তুলতে সেনাবাহিনী তাঁকে কতটা স্বাধীনতা দেবে।
ভারত হয়তো এমনটা মনে করতে পারে যে ইমরান কাশ্মীরি জঙ্গিদের আরও সহায়তা করবেন। এর একটি কারণ হতে পারে, ইমরান মনে করেন যে কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ হওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, তাঁকে সেনা কমান্ডারদের কাছে এটা প্রমাণ করতে হবে যে তিনি তাঁদের কাজ করে দিচ্ছেন। ভারতকে হয়তো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে যেখানে না আছে যুদ্ধ, না আছে শান্তি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইসলামের প্রতি ইমরানের ঝুঁকে থাকা আলাদা মাত্রা যোগ করবে।
এখন ইমরান খানকে এমন কিছু করতে হবে যাতে প্রমাণ হবে যে তিনি জনগণের সঙ্গে আছেন। বর্তমানে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের কাছে তিনি সেনাবাহিনীর লোক। এটা এমনই একটি ধারণা, যা সহজে মুছে ফেলা যাবে না।
কুলদীপ নায়ার ভারতীয় সাংবাদিক ও কলামিস্ট