ক্রাইমবার্তা রিপোট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা জনগণ চাইলে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান।বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী এ কথা বলেন।গত রোববার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন নৌমন্ত্রী।মন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। এরপর থেকে তারা রাস্তায় টানা বিক্ষোভ করছেন।আজ সচিবালয়ে নৌমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ, ক্ষমা প্রার্থনাসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে যে তিনি পদত্যাগ করেছেন- এটি সত্য কিনা।জবাবে মন্ত্রী বলেন, ছাত্ররা তো আমার পদত্যাগ চায়নি। তারা আমায় ক্ষমা চাইতে বলেছিল। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে তা দেখতে বলেছি।পদ্যতাগ বিএনপির দাবি উল্লেখ করে নৌমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কথায় তো আমি পদত্যাগ করব না। তবে জনগণ চাইলে আমি পদত্যাগ করব।রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন।
এদিকে রোববার দুপুরেই সচিবালয়ে মোংলাবন্দরের জন্য মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে সাংবাদিকরা দুই শিক্ষার্থীর বাসচাপায় নিহত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন।এ সময় মন্ত্রী হাসতে হাসতে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এটির সঙ্গে কি এটি রিলেটেড?’ তার পর বেশ কিছুক্ষণ হেসে বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
তখন সাংবাদিকরা বলেন, ‘চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় সড়কে নিয়মিত প্রাণ ঝরছে। আজও ঢাকার কুর্মিটোলায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে এদের (চালক-হেলপার) আপনিই প্রশ্রয় দেন। আপনার প্রশ্রয়ে তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে।’
জবাবে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে চাই- যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে সেভাবেই শাস্তি পাবে। এ শাস্তি নিয়ে বিরোধিতা করার কারও কোনো সুযোগ নেই।’
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির বিষয়ে যথাযথ বিচার হয় না বা হচ্ছে না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আবারও হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে কিছু দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ যাত্রী মারা গেলেন। সেখানে কেউ কি এ রকম কথা বলে।’
এদিকে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নৌমন্ত্রী হাসতে হাসতে কথা বলায় সামাজিকমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
পরে সোমবার সকাল থেকে দুই সহপাঠী নিহতের প্রতিবাদে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
এদিন শিক্ষার্থীরা দোষী পরিবহনকর্মীদের বিচার এবং নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাসহ ৯ দফা দাবিনামা ঘোষণা করেন।
তবে এদিনই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, পদত্যাগ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। দোষী বাসচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এর পর অভিযুক্ত জাবালে নূর পরিবহনের পাঁচ অভিযুক্ত বাসচালক ও সহকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।সর্বশেষ বুধবার বিকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিনামা মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।এদিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।তবে বৃহস্পতিবারও শিক্ষার্থীরা শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, লালমাটিয়া, আসাদগেট, কলেজগেট, শান্তিনগর, কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, খিলক্ষেত ও উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ হচ্ছে।
এদিনও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দোষী পরিবহনকর্মীদের বিচার ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিয়েছেন।