ক্রাইমবার্তা রিপোট: শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ঘাতক বাসচালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত কয়েকদিন থেকে অচল রয়েছে ঢাকা। তবে বৃহস্পতিবার সকালে ফাঁকা সড়কে দুএকটি গাড়ি চলতে দেখা গেছে। সেগুলোতেও উঠতে হচ্ছে অনেক কষ্ট করে। ফলে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সকালে মিরপুর যাত্রাবাড়ী দনিয়া থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে দুএকটি গাড়ি চলছে। সেগুলোতে অনেক ঠেলাঠেলি করে অফিসগামীদের উঠতে হচ্ছে চরম ভোগান্তির মধ্যে। তবে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সকালে সড়কে কোনো স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি।
মুকুল রেজা মিরপুর ১২ নম্বরের বাসা থেকে সকাল ৮টায় দিকে বের হয়েছেন। গুলিস্তান যাবেন। সড়কে বাস কম। যেগুলো চলছে তাতেও লোক ঠাসা।
মোহাম্মদপুরের রাবেয়া জানান, তিনি আবদুল্লাহপুর যাবেন। বাসস্টান্ডে গাড়ির ভিড়ে ঠেলাঠেলি দেখে তিনি উঠতে পারছেন না। এমন আরও অনেকের, কর্মস্থল বা গন্তব্যে যেতে বাসের অপেক্ষায় সময় গুনছেন। এতে সবার ভোগান্তী যেন কমছেই না।
রোববার জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর পর থেকে শিক্ষার্র্থীরা আন্দোলনে নামে। বুধবার চতুর্থ দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাকার পর চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বুধবার বিকালে এ তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।
এদিন যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকায় উল্টোপথে আসা দ্রুতগতির একটি পিকআপ (মাঝারি ট্রাক) ফয়সাল নামে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আহতাবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এদিকে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরাও সকাল থেকে ৬ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন। সেখানে রাস্তায় স্কুলছাত্রদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে।
এ অবস্থার মধ্যেই সচিবালয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পরে তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ঘাতক বাস জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়া ঘাতক বাসের চালক মাসুম বিল্লাহকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বুধবার সকাল থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, বনশ্রী, রামপুরা, খিলক্ষেত, ভাটারা, বাড্ডা, উত্তরা, কাকরাইল, বেইলি রোড, শান্তিনগর, ফার্মগেট যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কগুলোতে অবস্থান নেয়। সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, ধানমণ্ডি আইডিয়াল, উইলস ফ্লাওয়ার, নটরডেম কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশরী গালর্স কলেজ, হাবিবুল্লা বাহার কলেজ, উত্তরা ও মিরপুর এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। তবে এদিন শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীদের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে ঢাকার রাজপথ।
সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। ভয়ে বেশিরভাগ সড়কে তেমন বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। গণপরিবহন না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে বিকাল ৪টার দিকে বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিবার দুর্ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেয়া হয়। সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না। তাই আশ্বাস নয়, তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা বলেন, নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে হুশিয়ার করে দেন। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ না করে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি সামলাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গিয়ে স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করছেন পুলিশ।যুগান্তর।