ক্রাইমবার্তা রিপোট: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন এরশাদ বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন আরও কঠোর করে বেপরোয়া গাড়ি চলানোয় দুর্ঘটনায় হত্যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আমরা আইন করেছিলাম। পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে সে আইনটি বাতিল করে যাবজ্জীবন করতে হয়েছে। তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে ‘যৌক্তিক’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
কুর্মিটোলায় বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের বাসায় তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ শুক্রবার সকালে কলেজছাত্রী দিয়ার মহাখালীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি গণমাধ্যমের কাছে এসব কথা বলেন। এ সময় এরশাদ দিয়ার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরে তিনি সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, এস এম ফয়সল চিশতী, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, ফখরুল আহসান শাহজাদা, আব্দুল হামিদ ভাসানী, মো. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা এমএ রাজ্জাক খান, গোলাম মোস্তফা, কাজী আবুল খায়ের, মিজানুর রহমান দুলাল, আব্দুর রাজ্জাক, জহিরুল ইসলাম জহির, ফয়সল দীপু ও জিয়াউর রহমান বিপুল উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে দিয়ার বাসায় আসেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল গণি খান ও শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ নূর নাহার ইয়াসমিন। তারা কলেজের পক্ষে দিয়ার পরিবারের হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দিয়াসহ দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এরপর দেশব্যাপী বিক্ষোভ করছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা যে নয় দফা দাবি তুলেছে, তা মেনে নিয়েছে সরকার।
ছাত্রদের রাজপথে আন্দোলন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, যারা আন্দোলন করছে এরা সবাই নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। তাদের এ চাওয়া বাঁচার দাবি। এদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। তারা আমাদের জন্যই রাস্তায় নেমেছে। নিজেদের কোনো দাবি নেই। আমার ছেলে আজ গাড়িতে করে স্কুলে যায়। যদি সে বাসে করে স্কুলে যেত তাহলে আমি সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতাম যে, সে ফিরে আসবে কিনা। আর এমন কোনো খবর পেলে আমি আত্মহত্যা করতাম। আমি মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না।
রাস্তায় যেসব বাস চলছে এগুলোর চারটি চাকা ছাড়া আর কিছুই নেই। ১৪ বছরের বাচ্চারা গাড়ি চালাচ্ছে। এই অনিয়ম আর কতদিন চলতে পারে। আমরা এ আন্দোলনকে সমর্থন করি। সরকারেরও দাবিগুলো মেনে নেওয়া উচিত।
ছাত্রদের চলমান আন্দোলনে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে এরশাদ বলেন, এদের সব দাবি যৌক্তিক, এরা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। এদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনও নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক। তিনি শিশুদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের সমালোচনা করেন এবং নিন্দা জানান।
গণপরিবহনে নৈরাজ্য প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, এখন ১০/১২ বছরের শিশুরাও গাড়ি চালায়। লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস যেনো দরকারই নেই। শিশুদের এই আন্দোলনে পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো যেনো সহিংস আচরণ না করে সেজন্যও তিনি সবাইকে সহনশীল থাকার আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ২০ লাখ টাকা কোনো টাকাই নয়। ইচ্ছা করলে প্রধানমন্ত্রী আরো বেশি দিতে পারতেন। তবুও তিনি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌমন্ত্রী ও পরিবহণ শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনাও করেন এরশাদ। তিনি বলেন, শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সাথে। এই যদি তার প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে। এ সময় তিনি ফোন করে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের অরাজকতা সৃষ্টি থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেন।