ক্রাইমবার্তা রিপোট: গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে মিরপুরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ একযোগে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের এই কাপুরুষোচিত নগ্ন হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলা শুধু বর্বরোচিতই নয়, এটি আদিম পশুপ্রবৃত্তির এক কাণ্ডজ্ঞানহীন উন্মত্ততা। অবৈধ সরকারের শাসনকে টিকিয়ে রাখতে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ বিবেক বিসর্জন দিয়ে রক্ত ঝরানোর আনন্দেই মেতে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতাদেরকে বলেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে। কিন্তু বোঝানোর পরিণাম দেশবাসী দেখলো-আজ (গতকাল) বিকেলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের ওপর তাদের হিংস্র আক্রমণ। অর্থাৎ শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দের্শিত হয়েই ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা অস্ত্রহাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আক্রমণ করে রক্ত ঝরায়। এই যৌথ হামলায় আবারো প্রমাণিত হলো- শেখ হাসিনা রক্তাক্ত পথেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মাণই এই অবৈধ সরকারের একমাত্র কর্মসূচি। গণতন্ত্রকে ছুরিকাহত, মানুষের মৌলিক অধিকারকে বিপন্ন ও রক্তপাতই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। ভোটারবিহীন সরকারের একজন মন্ত্রী আলোকপিয়াসী শিশু-কিশোরদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে কিছু বেপরোয়া খুনী চালকদের পক্ষাবলম্বন করে নিষ্ঠুর হাসি হেসেছে। সরকার অনাচারের পক্ষে বলেই শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মুখেও কিছু বাসচালক এখনো বেপরোয়া। তার প্রমাণ আজো (গতকাল) ঢাকা-দোহার সড়কে একজন শিক্ষার্থীর জীবন চলে গেল।
বিবৃতিতে বলা হয়- বাসের ধাক্কায় পিষ্ট হয়ে সতীর্থদের প্রাণ হারানো যে মর্মস্পর্শী শোক তাদেরকে ভারাক্রান্ত করেছে, আর যাতে তাদের কোনো সহপাঠির বেপরোয়া বাসচালক কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয় সেজন্য নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশের মানুষ তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় সমর্থন জানাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকির সামিল। শিক্ষার্থীদের দাবি কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির নয়, তাদের দাবি সার্বজনীন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার পুরনো কৌশলই চেলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কোনো সংগঠন ঢুকে পড়েছে বলে তিনি বলেছেন। সুতরাং অবৈধ ক্ষমতাবিলাসীরা নানা ধরণের প্রতারণার পাশাপাশি এখন নৃশংস আক্রমণ শুরু করে রক্ত ঝরাচ্ছে। যেমন আশ্বাসের মুলা ঝুলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন শেখ হাসিনা নিজেই। আবারো নিরাপদ সড়কের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে সেটিও ধোকাবাজি বলে জনগণ মনে করে। মিরপুরে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের ওপর পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের হিংস্র আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে বিএনপি।
ভিন্ন এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মিরপুরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের ওপর পুলিশসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের আক্রমণ ছিল পৈশাচিক ও অমানবিক বলে অভিহিত করেন।
——————0——————-
নিহত মিমের বাসায় মির্জা ফখরুল
বাসচাপায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের পরিবারকে সান্তনা জানাতে বৃহস্পতিবার রাতে তার বাবার বাসায় গিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাত সাড়ে ৯টায় মহাখালীতে দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর ফকিরের বাসায় গিয়ে তিনি দিয়ার বাবা, মাসহ ভাই-বোনদের সাথে কথা বলেন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শোক ও সমবেদনার কথা তাদেরকে জানান।
বিএনপি মহাসচিব তাদের সান্ত¦না দেন এবং খোঁজ-খবর নেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, তার দল সবসময়ে তাদের পাশে থাকবে। এ সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই মর্মান্তিক নির্মম ঘটনার খবর জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জেল থেকে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই শোকাভুত পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে আমাদেরকে বলেছেন। তাদের পক্ষ থেকে আমরা এই পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না জানাতে এখানে এসেছি। তাদের সাথে কথা বলে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের নিচে চাপা পড়েন ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী দিয়া ও ছাত্র আবদুল করিম। ওই দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। গত দুই দিনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে অনান্য জেলাতেও। এরইমধ্যে গতকাল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার।