ক্রাইমবার্তা রিপোট: ঢাকা: রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের লাঠিপেটা করেছে। এসময় লাঠিহাতে যোগ দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হাজার খানেক নেতাকর্মী। এতে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হবার খবর পাওয়া গেছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। মিছিলে স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া কিছু শিক্ষার্থীকেও দেখা গেছে। তবে তাদের চেয়ে বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই ছিল বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এ ঘটনার বিষয়ে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, ঢাকার জিগাতলার মোড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
রবিবার দুপুর একটার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আকবর হোসেন।
শনিবার এই এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল।
বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এদের প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে জিগাতলার দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশের বাধার পর তারা সায়েন্স ল্যাব এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন।
ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির কাদির কল্লোল জানাচ্ছেন, পুলিশের পরপরই একদল তরুণ লাঠিসোঠা নিয়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে শুরু করে জিগাতলা পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সাংবাদিকরা ছবি তোলার চেষ্টা করলে তারা তাদের ওপরও হামলা করছে।
গত কয়েকদিনের আরেকটি উত্তাল এলাকা মিরপুরেও অনেক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে বলে গেছে। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছে। সেখানে যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কর্মী সমর্থকদের অবস্থান করতেও দেখা গেছে।
তবে উত্তরা, রামপুরা, আসাদ গেট এবং কুড়িলেও শিক্ষার্থীরা আজও অবস্থান নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সকালে গণভবনে একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা কয়েকটি আন্দোলন করেছে। তাদের ইচ্ছামত যা যা করার করছে, আমরা তা মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন তাদের নিয়ে আমি শঙ্কিত, কারণ তাদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়, ঘরের ছেলে মেয়ে ঘরে ফিরে যাবে, লেখাপড়া করবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করা পরিবহন শ্রমিকদের আজ মিরপুরের অনেক রাস্তায় অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে হামলা চালায় কিছু যুবক। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী আহত হন। বার্তা সংস্থা এপির ফটো সাংবাদিক এম এন আহাদিএবং ডেইলিস্টারের চার সাংবাদিক আহত হন। তাদেরকে ল্যাবএইডসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
দুপুর একটার দিকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান তুলে জিগাতলার দিকে মিছিল নিয়ে যায়। ওই সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে অবস্থান নেওয়া পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা শুরু করে। ২৫-৩০টি কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে অনেক শিক্ষার্থী লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাড়ে দাঁড়িয়ে ওই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ও ঢিল ছোড়ে। কয়েকজনকে পানি থেকে টেনে তোলে পুলিশ। ওই সময় তিন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ ছাড়া জিগাতলায় সীমান্ত স্কয়ারের দিকে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। অনেকে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে আশ্রয় নেয়। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখন সীমান্ত স্কয়ারের দিকে অবস্থান করছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এই মিছিলটি আজ বেলা ১১ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে জিগাতলায় আসে।
নিরাপদ সড়ক, শনিবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ- এই তিন দাবি নিয়ে পূর্ব ঘোষণা অনুসারে মিছিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী ও ব্যবসায় অনুষদভুক্ত কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্য ও অপরাজেয় বাংলায় মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। পরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর সেই মিছিল সাড়ে ১১ টার দিকে শাহবাগে গিয়ে জড়ো হয়। এই মিছিলটি সায়েন্স ল্যাব হয়ে জিগাতলার দিকে যায়।
এই মিছিলের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন জানান, জিগাতলায় তাদের অবস্থানের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তারা জিগাতলা থেকে ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন। জিগাতলায় মিছিল থেকে একটি অংশ পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল। ওই সময় জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিলটি ইউ টার্ন নেওয়ার সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়া শুরু করে।
জিগাতলা ও ধানমন্ডির গলিতে গলিতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ের আশপাশের গলিতে যেসব শিক্ষার্থীরা ছুটোছুটি করছিল, তাদের লাঠি হাতে ধাওয়া করতে দেখা যায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জিগাতলা এখন পুলিশ ও লাঠি হাতে যুবকদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গেটের সামনে শ খানিক বিজিবি সদস্য অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে ধানমন্ডি ২ নম্বরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে জমায়েত হওয়ার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। তারা সেখানে জড়ো হলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এতে জমায়েতটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে সীমান্ত স্কয়ারের সামনে থেকে একটি মিছিল ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়।
বেলা দুই টা আট মিনিটের দিকে ধানমন্ডি ১ নম্বরে শিক্ষার্থীদের মিছিলে হেলমেট পরে ও লাঠি হাতে নিয়ে যুবকেরা হামলা চালায়। এতে ছাত্রীসহ তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বলে জানান।
এখন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এখন রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। বেশ কিছু নেতা কর্মী কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছেন।
পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, মিছিলকারীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাচ্ছিল। তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা শোনেনি। তিনি বলেন, সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।