আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরব বাংলাদেশের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

ক্রাইমবার্তা রিপোট: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গুরুত্বের সাথে কাভারেজ পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর।

রোববার দুপুরে আল জাজিরা অনলাইনের প্রধান খবর ছিলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে। খবরের শিরোনাম, ‘বিক্ষোভ তীব্র হচ্ছে, সংঘর্ষ চলছে’। আল জাজিরা বলেছে, ‘বাংলাদেশে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের মধ্য দিয়েই সংঘাত চলছে’। এই আন্দোলনে লাখো শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছে বলে উল্লেখ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমটি।

আল জাজিরা লিখেছে, ‘বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে, তাদের ক্যামেরা কেড়ে নেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্যরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।’

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোকে ২৪ ঘণ্টার জন্য থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হয়েছিলো বলে ঢাকা ট্রিবিউনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আল জাজিরা। শনিবার কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর এই আদেশ দেয়া হয়। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এজন্য কারিগরি ক্রুটিকে দায়ী করেন।

আল জাজিরার রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ‘শহিদুল আলম নামে এক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট আল জাজিরাকে বলেন, নিরাপদ সড়ক ছাড়াও অনেক বড় বড় ইস্যু আন্দোলনকে দানা বাধতে ভুমিকা রেখেছে। তিনি ‘ব্যাংক লুট’, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, ঘুষ ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন। আলম বলেন, আজ পুলিশ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন নিরস্ত্র ছাত্রদের সাথে লড়াই করার জন্য সশস্ত্র গুণ্ডাদের সাহায্য চাইছে। সরকার হিসাবে ভুল করেছে। তারা ভেবেছে ভয় ও নিপীড়ন আন্দোলন থামাতে পারবে; কিন্তু আপনি এভাবে পুরো জাতিকে স্তব্ধ করতে পারবেন না।’

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনলাইনে শনিবার ধানমন্ডির জিগাতলায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম ছিলো ‘ঢাকায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা’। বিবিসি লিখেছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলনের ওপর হামলায় ২৫ জনের মতো আহত হয়েছে।…. কারা এই হামলা করেছে তা স্পষ্ট নয়, তবে স্থানীয় মিডিয়া এই হামলাকার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনকে দায়ী করেছে।

‘সরকার ২৪ ঘণ্টার জন্য কিছু এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে’ বলেও বিবিসির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে আল জাজিরা অনলাইনের খবরেও।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের ক্রেডিট দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন অনলাইন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সড়কের দখল নিয়েছে।

আরেক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম, বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ। আরেক প্রভাবশালী পত্রিক ওয়াশিংটন পোস্ট এ বিষয়ক সংবাদের শিরোনাম করেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্রের মৃত্যুর পর বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের অনেক এলাকা অচল করে দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, গত সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর তাদের সহপাঠিরা বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এরপর লাখো শিক্ষার্থী রাজধানী অনেকটাই অচল করে দেয়। তাদের অনেকেই ছিলো স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত। ছাত্ররা বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তা ও পরিবহন বন্ধ করে দেয়। তারা সড়কে নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবী জানাচ্ছে। দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার লোক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।

আরো পড়ুন : জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে কাঁদানে গ্যাস

ঢাকার জিগাতলার মোড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। রোববার দুপুর একটার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আকবর হোসেন। শনিবার এই এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল।

বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, এদের প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে জিগাতলার দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশের বাধার পর তারা সায়েন্স ল্যাব এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির কাদির কল্লোল জানাচ্ছেন, পুলিশের পরপরই একদল তরুণ লাঠিসোঠা নিয়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে শুরু করে জিগাতলা পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সাংবাদিকরা ছবি তোলার চেষ্টা করলে তারা তাদের ওপরও হামলা করেছে। এরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে অভিযোগ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

গত কয়েকদিনের আরেকটি উত্তাল এলাকা মিরপুরেও অনেক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে বলে গেছে। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছে। সেখানে যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কর্মী সমর্থকদের অবস্থান করতেও দেখা গেছে। তবে উত্তরা, রামপুরা, আসাদ গেট এবং কুড়িলেও শিক্ষার্থীরা আজও অবস্থান নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সকালে গণভবনে একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা কয়েকটি আন্দোলন করেছে। তাদের ইচ্ছামত যা যা করার করছে, আমরা তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের নিয়ে আমি শঙ্কিত, কারণ তাদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়, ঘরের ছেলে মেয়ে ঘরে ফিরে যাবে, লেখাপড়া করবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করা পরিবহন শ্রমিকদের আজ মিরপুরের অনেক রাস্তায় অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে।

গত ২৯শে জুলাই ঢাকার রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।