আর ‘কৃত্রিম’ বিরোধী দল হবে না জাপা

ক্রাইমবার্তা রিপোট:এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) আর ‘কৃত্রিম’ বিরোধী দল হতে চায় না। দলটির লক্ষ্য এবার সরাসরি সরকারের অংশীদার হওয়া। সেই লক্ষ্যে জাপা ২০০৮ সালের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ২২ জুলাই এরশাদ দলের দুই নেতাকে নিয়ে ভারত সফর করেছেন। এই সফরে ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ছাড়াও দেশটির একাধিক রাষ্ট্রীয় ও সরকারি নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। ভারত থেকে দেশে ফিরেই এরশাদ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেনকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। নির্দেশ না মানায় নির্বাচনের দুই দিন আগে (২৭ জুলাই) রাতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। পরদিন সিলেটে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জাপার জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন জানান। এ সময় নেতারা বলেন, জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নির্দেশে তাঁরা এই সমর্থন জানিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে জাপার নেতারা নৌকা প্রতীকের সমর্থনে শহরে প্রচারেও অংশ নেন। এর আগে কেন্দ্রের চাপের রাজশাহীতেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে জাপার প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২২ জুলাই এরশাদ তিন দিনের সফরে দেশটিতে যান। এই সফরে মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ২৫ জুলাই তাঁরা দেশে ফেরেন।

জাতীয় পার্টির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, এই সফরে ভারতের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জাতীয় পার্টিকে দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে। একটি বৈঠকে জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নেওয়া অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। ওই সূত্রের দাবি, চলতি মাসে এরশাদের আবার ভারত সফরে যাওয়ার কথা আছে। ওই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, এবারের ভারত সফরকে জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। এতে বাংলাদেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশটির নীতিনির্ধারকদের মনোভাব সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে, যা ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য জরুরি ছিল।

সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার  বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমাদের দলের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন। তাঁরা চান জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী হোক। ভালোভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিক।’

নির্বাচনের ভালো প্রস্তুতি কী, এই প্রশ্নের জবাবে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনের আগে একটি বৃহত্তর জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ভারত থেকে ফেরার পর জাপার নীতিনির্ধারণী মহলকে খুব চাঙা দেখাচ্ছে। দলের নির্বাচনী কৌশলে পরিবর্তন আনার কথা বলা হচ্ছে। এত দিন জাপার পরিকল্পনা ছিল, বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে আলাদা নির্বাচন করবে। এখন দলের নীতিনির্ধারকেরা সে চিন্তা থেকে সরে এসেছেন। তাঁরা মনস্থির করেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের শরিক হয়েই জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে। এ মুহূর্তে দলটির লক্ষ্য, সরকারের সঙ্গে সখ্য রেখে কীভাবে আসনসংখ্যা আরও বাড়ানো যায়।

অবশ্য এই সফর সম্পর্কে জাপার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হচ্ছে, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত থাকার পক্ষে। তাদের সঙ্গে বৈঠকে, ভারতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চান।

এরশাদের আগে ৫ জুলাই তিন দিনের সফরে দিল্লি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম)। এর আগে জুনে ভারত সফর করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপির তিন নেতা। গত ২২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফর করে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, মহাজোটে থেকে জাপাকে নির্বাচন করতে বলা হয়েছে, এমন তথ্য তাঁর জানা নেই। তবে তিনি  বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর ভারত দৃষ্টি রাখে সে দেশের নিরাপত্তার জন্য। অতীতে ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সুসম্পর্ক ছিল এবং জাতীয় পার্টি তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। তাই জাপার ব্যাপারে তাদেরও আগ্রহ আছে। যতটুকু জেনেছি, ভারত সফরে দুই পক্ষের মধ্যে এসব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে।’

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।