ক্রাইমবার্তা রিপোট;নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’র খসড়া। সর্বোচ্চ ৫ বছরের সাজা ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে সোমবার মন্ত্রিসভায় এই আইনের খসড়া’র অনুমোদন দেওয়া হয়।
নতুন এই আইনে বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা নিহত হলে মামলা হবে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায়। এই ধারায় সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। এর আগে এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান ছিল।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর খসড়া এবার সংসদে পাঠানো হবে। সেখানে পাস হলে আইনটি কার্যকর হবে।
সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
রাজধানীর কুর্মিটোলায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত অনুমোদন পেল আইনটি।
———————-0———————-
ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোটঃ নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার দ্রুত একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই আইনে উল্লেখ আছে, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা নিহত হলে মামলা হবে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায়। এই ধারায় সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। বর্তমানে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে।
সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ নামের এই আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য আজ সোমবার মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের কথা রয়েছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন আইনে শাস্তি অত্যন্ত কম রাখা হয়েছে। আইনটি মন্ত্রিসভায় তোলার আগে আমাদের দেখানোর কথা ছিল, আলোচনা করার কথা ছিল। কিন্তু যা জানলাম, তাতে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই।’ তিনি বলেন, তাঁরা সড়কে নিরাপত্তার জন্য আইন চেয়েছেন। আর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দেওয়া। কিন্তু নতুন আইনে এসব দাবির প্রতিফলন নেই।
আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী তাঁর দায়িত্ব বা সেবা দিতে অবহেলা করলে বা ত্রুটিপূর্ণভাবে পালনের কারণে কোনো দুর্ঘটনা হলে বা কোনো সড়কের ডিজাইন বা নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণজনিত ত্রুটির কারণে সংঘটিত দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা নির্মাণকারী বা তদারককারীর ওপর বর্তাবে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে সড়ক পরিবহন আইনে কোনো অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব, অন্য যেকোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দায়ী হবেন। এ অপরাধের জন্য ব্যক্তিকে দোষী করা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা যাবে।
১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ সংশোধন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে একটি আইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। এরপর গত বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিছু পর্যবেক্ষণসহ আইনটি নীতিগত অনুমোদন পায়। আইনে মন্ত্রণালয়ে সড়ক পরিবহন আইনটি মতামতের জন্য পাঠালে তারা অপরাধ ও দণ্ডের বিধান পর্যালোচনা করে খসড়া আইনটি সংযোজন ও পরিমার্জনের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদন হুবহু রেখে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে নতুন আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে জনসমক্ষে কোনো গাড়ি চালাতে পারবেন না। এ ছাড়া গণপরিবহন চালানোর জন্য আলাদা অনুমতি লাগবে। অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স ১৮ এবং পেশাদার চালকদের লাইসেন্স পেতে বয়স ২১ হতে হবে। চালকের অপরাধের জন্য ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। তাঁর যেকোনো অপরাধের দোষসূচক পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শেষ হলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল হবে। কোনো অপরাধীকে লাইসেন্স দেওয়া হবে না। আর আগে দেওয়া হয়ে থাকলে তা প্রত্যাহার করা হবে। বাসচালকের সহকারী লাইসেন্স ছাড়া গাড়িতে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না। মোটরযানের মালিকানা পরিবর্তিত হলে তা ৩০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
আক্রমণাত্মক আচরণ ও জনরোষ নিয়ন্ত্রণে সড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ির কোনো ক্ষতি না করার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনে। ওই সময় চালক বা সহকারীদের ওপর কোনো আক্রমণাত্মক আচরণ করা যাবে না। দুর্ঘটনায় জড়িত মোটরযান বা মোটরযানের যাত্রী বা ঘটনাস্থলে সমবেত হয়ে জনশৃঙ্খলাপরিপন্থী কোনো ধরনের আচরণ করতে পারবে না। কোনো সংগঠনের ব্যানারেও এসব আচরণ করা যাবে না।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো এলাকায় যেকোনো শ্রেণির মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। টার্মিনালে কোনো গাড়ি প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় বা কোনো সড়কে চলাচলের সময় তার কাছ থেকে কোনো চাঁদা আদায় করা যাবে না।
আইনে সড়কের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠান বা কোনো এলাকার জন্য মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বা সীমা নির্ধারণ করার বিধান রাখা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের যোগ্যতা থাকতে হবে। চালকের সিটবেল্ট বাঁধা, চালকের মুঠোফোন বা অনুরূপ সরঞ্জাম ব্যবহার না করা, বিপরীত দিক থেকে মোটরযান না চালানো এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব মোটরযান প্রবর্তন করার বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া মোটরযানের মালিকদের সুবিধার্থে বিআরটিএর যেকোনো শাখায় রেজিস্ট্রেশন বা নবায়ন দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মোটরযান ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনা করতে পারবে না।
আইনে বলা হয়েছে, কোনো পোশাকধারী পুলিশের সামনে কোনো চালক অপরাধ করলে তিনি পরোয়ানা ছাড়াই ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন এবং জরিমানা করতে পারবেন।
এ আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেছেন, সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন পাসের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ভাওতাবাজি। কারণ, বিদ্যমান আইনগুলোতে ৪-৫ শতাংশ ভুলত্রুটি আছে, ৯৫ শতাংশই ঠিক আছে। সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলে দোষীকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব।প্রথমঅালো।