ক্রাইমবার্তা রিপোট: গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, যে ছয় দফা এগার দফা নিয়ে গণ জাগরণের মাধ্যমে যুদ্ধ হয়েছিল এবং আমরা জয়ীই হয়েছিলাম, মানুষের মধ্যে সে ধরণের একটি গণজাগরণ গড়ে তোলার হাই টাইম চলে এসেছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐকবদ্ধ ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদাদুল্লাহ মধু। সভাপতিত্ব করেন ঐকবদ্ধ ছাত্র সমাজের সভাপতি আজম রূপু।
কোটা সংস্কার,নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন, নিরাপদ সড়ক ও বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের ভবিষ্যত’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, আলাপ আলোচনা হচ্ছে। তিনি প্রস্তাব রাখেন দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলাপ আলোচনা হতে পারে। কেননা ন্যায় নীতির ভিত্তিতে একটা দেশ হবে এটা বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল। থাকবে সহঅবস্থান । কেউ সব কিছু আত্মসাৎ করে নিবে না। মন খুলে আলেচনা কবর এটাই হল গণতন্ত্র।
তিনি বলেন, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে ঐকমত্যে আসা কঠিন না। স্বপ্নের বাংলাদেশ অবশ্যই হবে যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। ঐকবদ্ধ হওয়ার কথা যখন বলি তখন একদলীয় শাসন না।
তিনি বলেন, একভাগ যারা কিছু না দিয়ে পাচার করে ফেলে তাদেরকে আসুন আমরা একঘরে করে ফেলতে পারি। তিনি বলেন, বিশ্বদ্যিালয়গুলিতে যদি দলীয় ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় তা হলে উচ্চ শিক্ষার মান নষ্ট হয়ে যায়। তবে অল্প কয়েক দিনে দেশের তরুণরা যা দেখাল তাতে আমি আশাবাদি। দেশের সামনে অবশ্যই উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আন্দোলনকারীদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না।সবাই ঐকবদ্ধ থাক্ল কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারবে না। তিনি বলেন, সুস্থ রাজনীতি না থাকলে চাটুকারের মুল্য বাড়ে। বেশি চালাকদের ধবংস অনিবার্য। কথায় কথায় যারা নিজেদের বেশি চালাক মনে করে তাদের পরিনতি ভয়াবহ।
এতে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটার বাড়ানোর পাশাপাশি জয়লাভ করার জন্য। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত নির্বাচন হচ্ছে অথচ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের খবর নেই।
সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, কোন কিছু পাওয়ার আশা করে মুক্তিযদ্ধে যাইনি। দেশকে একটি সত্যিকারার্থে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জান বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি।
ডাকসু’র সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন ,ভোট চোরের সরকাওে কাজে জাতি ভালো কিছু আশা করতে পারে না। এত আরো বক্তব্য রাখেন গণফোরাম নেতাদের মধ্যে আওম শফিক উল্লাহ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, ঐক প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ.ব.ম মোস্তফা আমীন। এবং ছাত্র নেতাদের মধ্যে রবিউল ইসলাম রবি, বিনে আমীন মোল্লাহ প্রমুখ।
আরো পড়ুন : কি হচ্ছে, সব জানেন ওবায়দুল কাদের
ওয়ান-ইলেভেনের মতো বাংলাদেশকে আবার অগণতান্ত্রিক পথে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর সরকার সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে বলেও ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, ‘দেশে যখন শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করেছিল, ঠিক সেসময়ে ১/১১ কুশীলবরা আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সরাসরি না বললেও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে সাম্প্রতিক নৈশভোজের দিকে যে ইঙ্গিত করেছেন, তা স্পষ্ট।
ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও ছিলেন। বৈঠক থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়িতে হামলা চালায় এক দল ব্যক্তি, হামলা হয় বদিউল আলমের বাড়িতেও।
কাদের বলেন, ‘কোথায় কী হচ্ছে, সেটা আমরা জানি। দেশে হচ্ছে, বিদেশে হচ্ছে। প্রথম প্রহরে, মধ্য প্রহরে, শেষ প্রহরেও হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। সরকার কিছু জানে না, সেটা ভাবলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সব কিছুই আমরা জানি। সব কিছুই আমাদের নলেজে আছে।’
‘কত ষড়যন্ত্র হয়েছে, শত বৈঠক হয়েছে। ব্যবস্থা নিলে কারও জেলের বাহিরে থাকার কথা ছিল না, কিন্তু আমরা ধৈর্য্য ধরছি,’ বলেন তিনি।
কাদের আবারও বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
‘সারাদেশ থেকে তাদের ক্যাডারদেরকে এনে ঢাকা অচল কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা অচল করে বাংলাদেশ অচল করার পরিকল্পনা তাদের ছিল এবং আছে।’
শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রসঙ্গ ধরে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন দেশে ‘গুণ্ডাতন্ত্র’ রয়েছে বলে যে মন্তব্য করেন, তারও জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘গুণ্ডাতন্ত্র কাকে বলে- তা সবিনয়ে কামাল হোসেনকে জিজ্ঞেস করতে চাই? চোখ উপড়ে ফেলল আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী আরাফাত বাপ্পীর, আমাদের সেই রাজনৈতিক কর্মীর একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে এখন চেন্নাই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আজ তাকে দেখতে যাবেন এবং তার সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।
‘আমাদের আহত কর্মীকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। তা কোনো কোনো গণমাধ্যমেও দেখলাম, এ সংবাদ শুধু দেশে নয়, কিছু কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও করছে।’
অভিযোগের মুখে থাকা ছাত্রলীগের পক্ষে দাঁড়িয়ে কাদের বলেন, ‘সব দোষ আওয়ামী লীগের? ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়েছে। এখনও তারা ভালো করে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এ এলাকায় ছাত্রলীগের (ধানমন্ডি) কোনো কমিটি ছিল না। যারা আহত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রনেতা, বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্যরা। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আহত হয়েছে।
‘আক্রান্ত হলাম আমরা কিন্তু এখন দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমাদেরকে আক্রমণকারী চিহিৃত করে দলের এবং ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।’
উন্নয়ন দিয়েই অপবাদের জবাব দেওয়ার কথা বলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের।
অস্থিরতা সৃষ্টি করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
‘সাংবাদিকদের টার্গেট করে ফায়দা তোলার চেষ্টা এ দেশে অনেকবার হয়েছে। গতকাল আমি সাংবাদিকদের বলেছি, ছাত্রলীগের উপর অপবাদ আসছে, আপনারা আমাকে তালিকা দিন। কারা কারা এতে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে জাতিসংঘ মিশনের বিবৃতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘে জানিয়েছি, এগুলো অপপ্রচার।’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজের ফেইসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের রাজনীতির বাহিরে আছেন। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’
রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় আন্ডারপাস নির্মাণকাজ রোববার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি।
কাদের বলেন, সংসদ ভবন থেকে ন্যাম ভবন পর্যন্ত, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত দুটি আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন।
কয়েকদিন পর দেশে ‘স্বস্তিদায়ক পরিবেশ’ ফিরে আসায় তা ধরে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি উপস্থিত ছিলেন।