ক্রাইমবার্তা রিপোট: জেলায় চলছে ট্রাফিক সেবা সপ্তাহ। জেলার বিভিন্ন সড়কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ। অবৈধ যানবাহন ও লাইসেন্স বিহীন চালকদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে রীতিমত চিরুনী অভিযান। শিক্ষার্থীরাও রয়েছে মাঠে। তারাও প্রশাসনকে এ অভিযানে নিরন্তর সহযোগিতা করছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এমন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষকে তারা সচেতন করছেন। কীভাবে রাস্তা পার হতে হয়, কীভাবে রাস্তায় চলতে হয় এসব নানা বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছে। সোমবার জেলার বিভিন্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে তাতে সহযোগিতা করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সড়কে দাঁড়িয়ে যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে পেশ করছে। আদালত কাগজপত্র দেখে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এতেই সাড়া পড়েছে সর্বসাধারণের মধ্যে। বিএনসিসি, স্কাউট ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও সচেতনতামূলক কথা বলেছেন। সোমবার (৬আগস্ট) সাতক্ষীরা শহরের বিনেরপোতা এলাকায় মোটরযান অধ্যাদেশ আইন ১৯৮৩ মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান চলে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার ও স্বজন মোল্যা, র্যাব ৬ এর ডিস্ট্রিক এডিশনাল ডাইরেক্টর শফিকুল ইসলাম, বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী ও সাতক্ষীরা ট্রফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. মোমীন হোসেন প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের এ অভিযানে ১০টি মোটরযানে মামলা এবং ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন যানবাহনে চেকিং করতে দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব ৬ এর ৭সদস্য বিশিষ্ট একটি দল, বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের কর্মকর্তাগণ এবং জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টরসহ সঙ্গীয় ফোর্স। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে কিছুক্ষণ পর তারা সড়ক থেকে সরে যায়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আন্দোলনরত সকল শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। এখন থেকেই তাদের সকল দাবি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। সুতরাং তারা স্কুলে ফিরে যাক আমরা তাদের দাবী বাস্তবায়নে কাজ করবো।’
এরআগে শনিবারে বিক্ষোভ মিছিল ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলি সুপার উপস্থিত হয়ে তাদের আশ্বাস দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সড়কে গাড়ী চালাতে হলে থাকতে হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইন্সুরেন্সসহ গাড়ির নানা কাগজপত্র। চাওয়া মাত্র সেগুলো ট্রাফিক সার্জেন্ট বা সংশি¬ষ্টদের দেখাতে হয়। অপারগ হলে বা ত্রুটি থাকলে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা গুণতে হয়। গাড়িটিও চলে যেতে পারে থানায় বা ডাম্পিংয়ে। সাতক্ষীরায় রয়েছে অনেক ফিটনেসবিহীন গাড়ী দ্রুত এগুলো বাজেয়াপ্ত বা সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া অবশ্যই নিতে হবে।’
এসময় শিক্ষার্থীরা মোটরযান আইন ১৯৮৩ সম্পর্কে গাড়ীর চালক ও পথচারীদের সচেতনতামূলক প্রচারণা চালায়। শিক্ষার্থীরা শুধু যানবাহনের নিবন্ধনপত্র ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সই পরীক্ষা করছে না, যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করছে অত্যন্ত সুচারুভাবে, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে। তারা আপাতত রাস্তায় ‘জাস্টিস’ বা ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের চূড়ান্ত দাবি নিরাপদ সড়ক। নিরাপদ সড়কের দাবি দীর্ঘদিনের জনদাবিই বটে। তাই তাদের এই আন্দোলনের প্রতি পুরো জাতির সমর্থন রয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।