ক্রাইমবার্তা রিপোট: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর মারধরে আহত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াইবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত জহুরা বেগম (৩২) উপজেলার ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী। মৃত জহুরা বেগমের এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে জফিকুল ইসলাম (৯) ও দুই মেয়ে একজনের বয়স ৪ এবং আরেক জনের বয়স ৬ মাস। ঘটনার পর পালিয়ে গেছে মানিক মিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল তিন দিন আগে জহুরা বেগম ও স্বামী মানিক মিয়ার সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্য্যায়ে তাকে(স্ত্রীকে) মারধর করে। ঘটনার দিন ভোররাতে অকারণে আবারো মারধর করে স্বামী মানিক মিয়া। মারধরের পর গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
মৃত জহুরার পুত্র জফিকুল ইসলাম (৯) বলেন, ‘আমার মাকে সাবল দিয়ে আঘাত করছে। তাই মাও (মা) মরে (মারা) গেছে। আমার বাবার বিচার চাই।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ‘এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। তবে কি ভাবে মারার গেছে তা আমার জানা নেই। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।’ এদিকে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে আসেন জহুরার বাবা ছাত্তার আলী।
তিনি বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে আমার মেয়েকে মারা হয়েছে। ঘটনাস্থলে মারার পর আমার মেয়ের স্বামী মানিক মিয়া পালিয়ে গেছে।’
রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল বলেন, ঘটনাস্থল থেকে খবর পেয়ে মৃত জহুরার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহের সুরতহাল করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে ঘাড়ে কামড় এবং তলপেটে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আরো দেখুন: আটকে রেখে দুই শিশু শিক্ষার্থীর উপর বর্বরতা
তেঁতুলিয়ায় স্কুল সংলগ্ন দোকানে মিথ্যা চুরির অপবাধে দু’শিশু শিক্ষার্থীকে ঘরে আটকে রেখে মারপিট করে। সহপাঠি ও শিক্ষরা গুরুত্বর আহত অবস্থায় দু’শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহত দু’ শিশু শিক্ষার্থী তেঁতুলিয়া সদরের খালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।
জানা যায় গত বুধবার (১ লা আগষ্ট/১৮) সকালে গড়িয়াগছ গ্রামের মনির হোসেন এর ছেলে ২য় শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান মারুফ (৯) এবং আলমের ছেলে ৩য় শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের প্রতিদিনের মত স্কুলে যায়। সেদিন দুপুরে টিফিন বিরতির হলে স্কুলের পাশ্ববর্তী ভ্যারাইটিজ দোকানে বিস্কুট কেনার জন্য গেলে দোকানদারকে না পেয়ে ফিরে আসে। এসময় দোকানের মালিক খালপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মামুন (১৮) তাদের ডেকে দোকানে ভিতরে নিয়ে যায়।
পরে আধা ঘন্টা আটকে রেখে মিথ্যা চুরির অপবাধে কারেন্টের মোটা তার দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের এলোপাতারি মারপিট করে। প্রধান শিক্ষক সহপাঠিদের মাধ্যমে জানতে পেরে দেড়গছ দূরে মামুনের দোকান থেকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বিকাল সাড়ে ৪ ঘটিকায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহত শিশু শিক্ষার্থীদের ভর্তি রাখেন।
হাসপাতালের মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের ৯ নং বেডে ভর্তিরত ২য় শ্রেণির ছাত্র মেহেদী হাসান মারুফ আমাদের প্রতিবেদককে জানান- টিফিনের সময় বিস্কুট কেনার জন্য দোকানে যায়। দোকানদারকে তাৎক্ষনিক না পেয়ে সেখান থেকে ফেরার পথে দোকানের মালিক মামুন তাদের ডেকে ঘরের ভিতরে নিয়ে মিথ্যা চুরির অপবাধে আটকে রেখে কারেন্টের কালো তার দিয়ে মারপিট করে। এসময় দোকানের মালামাল ও ক্যাশের টাকা এলোপাতারিভাবে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে আমাদের উদ্ধারের জন্য লোকজন গেলে তাদের সেই সব দেখান।
একই ওয়ার্ডের হাসপাতালের ৫নং বেডে ভর্তি ৩য় শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের বলেন, দোকানদার মামুন আমাদের মিথ্যা চুরির অপবাধ দিয়ে টাকা ও মালামাল এলোপাতারি ফেলে দিয়ে আমাদের পিটে, পাছায় ও গালে চর থাপ্পর দিতে থাকে। এসময় বলে তোরা আর বাঁচতে পারিব না তোদের চুরির জন্য মরতে হবে। কিন্তু আমরা কোন কিছু চুরি করিনি বললে আমাদের কারেন্টের তার দিয়ে বেশি বেশি মারে।
আহত শিশুদের অভিভাবক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ের সভাপতি/প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছে। কিন্তু এরিপোর্ট লিখা পর্যন্ত শালীস বৈঠকের আশ্বাসে থানায় কোন মামলা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টিফিন বিরতির পর সকল শিক্ষক যখন খাওয়া এবং নামাজের জন্য ব্যস্ত ছিল; ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি অন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিশুদের গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আজমল হোসেন এর সংগে এবিষয়ে জানার জন্য অফিসে গেলে তাকে পাইনি। পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তেঁতুলিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু জাফর মো. আজাদ (শিশু বিশেষজ্ঞ) জানান- আহত দু’শিক্ষার্থীদের পিঠে, পায়ের উরু ও কোমরে একাধিক মারপিটের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং শক্ত লাটি বা কারেন্টের তার দিয়ে পেটার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এতে শিশুদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা অপুরনীয়। কারণ শিশুদের কোন ধরণের মারপিট করা আইনত দ্বন্ডনীয় অপরাধ।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার মোঃ জহুরুল ইসলাম জানান- আমি ঘটনাটি শোনেছি এবং শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোন লিখিত অভিযোগ না পায়নি।
গাজীপুরে চালকের গলা কেটে ছিনতাই করা ইজিবাইক উদ্ধার, গ্রেফতার ২
গাজীপুরে চালকের গলা কেটে ছিনতাইকৃত ইজিবাইক উদ্ধার ও দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যাত্রী হিসেবে ভাড়া নিয়ে গত রোববার রাতে নগরীর চাপুলিয়া এলাকায় ওই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে আরজু মিয়া (৩০)।
গুরুতর আহত চালক রুস্তম মল্লিককে (৩০) সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরদ্রুতা গ্রামের আজিজুল মল্লিকের ছেলে। তিনি চাপুলিয়া এলাকায় ভাড়া থেকে গাজীপুর মহানগরীতে ইজিবাইক চালাতেন।
জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, রোববার রাত ১১টার দিকে তিন যুবক শহরের শিববাড়ি থেকে চাপুলিয়া যাওয়ার কথা বলে রুস্তম মল্লিকের ইজিবাইক ভাড়া করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাপুলিয়া টেকপাড়া এলাকার নির্জন স্থানে পৌঁছালে যাত্রীবেশী ছিনতাকারীরা পিছন থেকে চালক রুস্তমের গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ এবং পরে চাকু দিয়ে গলা কেটে দেয়। মৃত ভেবে তারা চালককে ফেলে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে।
এ সময় রুস্তম ডাক-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ও টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জয়দেবপুর থানার এসআই মো: সাদেকুজ্জামান জানান, রাতেই অভিযান চালিয়ে সাইফুল ও আরজুকে গ্রেফতার এবং তাদের দেয়া তথ্যে ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়। অপর ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা চাপুলিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় ভাড়া থেকে নানা অপরাধমূলক কাজ করতো বলে স্বীকার করেছে।