সতীর্থের ক্রস কিংবা কর্নার ভেসে আসল বক্সে। লাফিয়ে তা হেডে জালে পাঠালেন আরেক সতীর্থ। ফুটবলে এ খুবই পরিচিত দৃশ্য। হেড থেকে গোল। মাথা দিয়ে গোলের এই দক্ষতাটুকু শুরু থেকেই ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যদি বলা হয়, ফুটবলে হেড বাতিল করা উচিত, খেলোয়াড়দের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর। তাহলে!
বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? সত্যি সত্যিই এমন দাবি উঠেছে। সেটিও যেন-তেন কেউ নন আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের রোগ ক্রনিক ট্রমাটিক সেফালোপ্যাথির (সিটিই) আবিষ্কারক ড. বেনেট ওমালু। ফুটবলে হেড বাতিলের দাবিটা তিনিই তুলেছেন। তা না হলে হেডের ক্ষেত্রে অন্তত কিছু সীমারেখা টেনে দেওয়ার কথা বলেছেন এ চিকিৎসক। আর অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে হেড পুরোপুরি বাতিলের কথাও বলেছেন তিনি।
ফুটবলারদের মস্তিষ্কের সমস্যার জন্য হেডকে দায়ী করেছেন ওমালু। অবসর নেওয়ার পর অনেক খেলোয়াড়ই মস্তিষ্কের নানা সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর কারণ হিসেবে খেলোয়াড়ি জীবনে ক্রমাগত হেডকে দায়ী করেছেন তিনি। হেড বাতিলের আবেদন করে ওমালু বলেন, ‘প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসা কোনো কিছু মাথা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটি অর্থহীন। অন্তত পেশাদার ফুটবলে হেড নিষিদ্ধ করা উচিত। এটা বিপজ্জনক।’
বিবিসি রেডিও ফাইভ-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন ওমালু। নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের এই চিকিৎসক খুদে ফুটবলারদের জন্য হেড নিষিদ্ধ করার দাবিও তুলেছেন, ‘আঠারো বছরের নিচে কারও হেড করা উচিত নয়। অনূর্ধ্ব-১২ কিংবা অনূর্ধ্ব-১৪ বছর বয়সীদের জন্য এমন ফুটবল খেলা উচিত যা শারীরিকভাবে কম সংঘাতপূর্ণ। এটা আমাদেরই তৈরি করতে হবে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ফুটবল খেলতে পারে তবে হেড করা যাবে না।’
ফুটবলে হঠাৎ করে হেড বাতিল হওয়াটা কেমন অদ্ভুতুড়ে না? এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি-তর্ক হবে, চলবে বিতর্ক। ওমালু তা বুঝতে পেরেই একটি ব্যাপার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘মানুষের জন্য ব্যাপারটা (হেড বাতিল) মেনে নেওয়া কঠিন হবে কিন্তু এভাবেই বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্টাই। সমাজও বদলে যায়। তাই কিছু পথ পাল্টানোর সময়টা এখনই।’
ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের সাবেক ফুটবলার জেফ অ্যাস্টলের মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটিত হওয়ার পর হেড নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। টানা ১০ বছর আলঝেইমার রোগে ভোগার পর ২০০৪ সালে মারা যান অ্যাষ্টল। পরে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, মস্তিষ্কে ক্রমাগত আঘাতের (সিটিই) জন্যই আসলে মারা গেছেন অ্যাস্টল। যার পেছনে দায়ী মূলত চামড়ার ভারী ফুটবল। তা ছাড়া মস্তিষ্কে ক্রমাগত আঘাত আলঝেইমার রোগের জন্যও দায়ী। মুষ্টিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এমন রোগে ভোগার প্রবণতা বেশি।