ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট: ১৯৯৮ সালে জেলা ট্রাক মালিক সমিতি গঠিত হওয়ার পর থেকে গত ২০ বছরে একদিনও সাধারণ সভা হয়নি, হয়নি কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। খাতা কলমে তথাকথিত কমিটি দেখিয়ে জেডিএল থেকে আর্থিক সুবিধায় পাশ করিয়ে এনে সাধারণ সদস্য ও ট্রাক মালিকদের চুষে খাওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে কোন ট্রাক মালিকের সমস্যায় পাশে পাওয়া যাইনি এই সংগঠনের কোন নেতাদের। নেই আয় ব্যায়ের কোন হিসাব নিকাশ। লুটপাট করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সংগঠনের কোন অনুমোদন ছাড়াই ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের নামে সংগঠনের সভাপতির এলাকায় সংগঠনের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে কথিত ট্রাক টার্মিনাল। যেখানে কোন ট্রাক যায়না। আবার সংগঠনের রক্ষিত ৫টি ট্রাকের ২টি বিক্রি করে খাওয়া হয়ে গেছে। এভাবেই গত ২০ বছরে ট্রাক মালিকদের চুষে খেয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে এই কমিটির সভাপতি আব্দুস সবুর ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। জেলায় অন্তত ২ হাজার ট্রাক মালিক থাকলেও জেডিএল’র হিসেবে সদস্য রয়েছে ২১৭ জন। এদের অনেকেই মৃত আর সমিতির জমাকৃত অর্থ দেখানো হয়েছে মাত্র দুই হাজার টাকা। বাকি টাকা কোথায় গেল তার কোন হিসাব নেই?
শুক্রবার বিকেলে শহর উপকণ্ঠের সিটি কলেজ মোড় এলাকায় অনুষ্ঠিত সাধারণ ট্রাক মালিকদের আলোচনা সভায় এসব বক্তব্য উঠে আসে।
প্রবীন ট্রাক মালিক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তারা এসব অভিযোগ ও ক্ষোভের বহি:প্রকাশ করেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছাইফুল করিম সাবু। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ট্রাক মালিক আব্দুল হান্নান,মনিরুজ্জামান মনির, সাংবাদিক আব্দুল গফুর, তালা উপজেলা অঞ্চলের পক্ষে আব্দুর রব পলাশ, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও এড. আবু সাঈদ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কবিরুল ইসলাম কবির।
সভায় আব্দুল হান্নান বলেন, ৭০ লাখ টাকা খরজ করে মাটি ভরাটের পর ওই ট্রাক টার্মিনালের আমরা কোন লাভ দেখছি না। তথাকথিত কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, যারা মারা গেছে তারাই উক্ত তথাকথিত কমিটির ভোটার। তাদেরকে দিয়ে কমিটি দেখিয়ে জেডিএল এ জমা দেয়া হয়েছে। আমরা সাধারণ ট্রাক মালিকরা ওই কমিটি কখনই মানবো না। সভায় ট্রাক মালিক মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা সাধারণ ট্রাক মালিকরা একত্রিত হয়েছি একটি দু:শাসনের বিরুদ্ধে। ঋণ করে টাকা নিয়ে, কষ্ট করে অর্জিত টাকা খাটিয়ে ব্যবসা করছি। আর ২০ বছর ধরে কথিত সংগঠনকে চাঁদা দিয়ে আসলেও কোন কাজে আসেনি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, রাস্তায় দাড়িয়ে ট্রাক চালককে সংগঠনের নামে চাঁদা দিতে হয় অথচ ট্রাক মালিক সমিতির অফিস কোথায় তা আমরা জানিনা। তাই ট্রাক মলিক সমিতির নেতৃত্ব সঠিক না হলে ট্রাকের বডি টায়ার খুলে দিয়ে আমদেরকে বাড়ি চলে আসতে হবে। সভায় তিনি গত ২০ বছরের হিসাব নিকাশ সঠিকভাবে জানতে চাইলেন।
সাংবাদিক আব্দুল গফুর বলেন, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসা করছি। আজ আমরা পথে বসার উপক্রম হলেও তথাকথিত এই কমিটির নেতারা বেশ লাভবান। জেলায় দুই হাজারের অধিক ট্রাক মালিক থাকলেও গুটি কথক পকেটস্থ লোকজনকে নিয়ে কমিটি গঠন করে রেখেছে। তিনি আরও বলেন, মালিক সমিতির পাচটি ট্রাকের দুটি বিক্রি করে খাওয়া হয়ে গেছে। এখুনি হাল না ধরলে বাকি ৩টি যেকোন সময় হয়ে যাবে। আর ট্রাক কাটতে কাটতে একদিন বডিও থাকবে না। তিনি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ট্রাক ব্যবসা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
তালা উপজেলার ট্রাক মালিক আব্দুর রব পলাশ বলেন, কলারোয়া ও ঝাউডাঙ্গায় ট্রাক মালিকদের মিটিং হয়েছে। মালিকদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় অনেক দুর এগিয়েছি। সঠিক পৌছানো সম্ভব দাবি করে তিনি বলেন, প্রতি ৩বছর অন্তর সাধারণ সভা ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার সকল ট্রাক মালিকরা ফুসে উঠায় আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ ও অস্তিত্বহীন এই কমিটির বিরুদ্ধে আগামী ১২ তারিখে জেডিএল এর তদন্ত সম্পন্ন হলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে এমনটি আশ^াস দেন সাধারণ ট্রাক মালিকদের।
ট্রাক মালিক এড. আবু সাঈদ বলেন, এই সমিতি কোন ট্রাক মালিকদের কাজে আসেনা। পাশে থাকেনা বিপদে আপদে। এটা কোন সমিতি নয় উল্লেখ করে বলেন, এটা হল শুধুমাত্র কালেকশান সমিতি। জেলার কোন স্থান থেকে বাঁশকলে এই সমিতির চাঁদা বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান।
সভায় প্রধান অতিথি ছাইফুল করিম সাবু বলেন, বছরের পর বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে চালানো হয়েছে শুধু লাটপাট আর লুটপাট। এত বছরেও শহরে একটি ট্রাক টার্মিনাল করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ট্রাক মালিক সমিতির দূর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা নিজেরাই এগিয়ে আসুন আমি আপনাদের সাথে আছি। সব ধরণের সহযোগিতা করবো। তিনি আরও বলেন, কখনই এই সমিতি বঙ্গবন্ধুর কোন অনুষ্ঠান পালন করেনি। ১৫ আগস্ট সারা বিশে^ বঙ্গবন্ধুর শোক দিবস পালন হলেও এই সংগঠনের ব্যানারে সেটি হয় না। আগামী ১৫ আগস্ট যদি বঙ্গবন্ধুর শোক দিবস পালন করা না হয় তাহলে ওইদিনই কবর রচনা করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই নতুন সদস্য যুক্ত করা হবে এবং আহবায়ক কমিটি গঠন করেই নেতা নির্বাচিত করে তথাকথিত সংগঠনের রাহু মুক্ত করা হবে সাধারণ ট্রাক মালিকদের।
এদিকে সদস্যদের দেয়া জেডিএল এ অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ১২ তারিখে গত ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের তথাকথিত নির্বাচনের যথাযথ প্রমান ও কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওইদিন জেডিএল এ হাজির না হলে এরপর প্রশাসনের সাথে বসে আলোচনা মাধ্যমে অবৈধ কমিটিকে উৎখাত করা হবে।