ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃসাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য টাকা পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আজ রোববার নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, কিছু তথ্য আমার কাছে এসেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নিন্দিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সম্প্রতি নিউইয়র্ক এসেছিলেন। সেখানে তিনি গোপনে যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেমের ভাই মামুনের সঙ্গে দেখা করেন। আমরা জানতে পেরেছি মামুনের কাছ থেকে তিনি বড় অঙ্কের টাকা পেয়েছেন। টাকাটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। তাদের এ আলাপ দেখেছে ও শুনেছে এমন সাক্ষীও আছেন।
জয় বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র খুবই সাধারণ একটি বিষয়। এ প্রবন্ধটিতে (স্ট্যাটাসে সংযুক্ত প্রবন্ধ) খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের ‘কু-শীল’ সমাজ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন যদি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হতো। ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে অপরিচিত বা অজনপ্রিয় মানুষের ভূমিকা কম। একটি ষড়যন্ত্রকে সফল করতে হলে দরকার হয় উচ্চপর্যায়ের ও ক্ষমতাবান কাউকে। যেমন সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহা বা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।
ছাত্রলীগ মিডিয়া সন্ত্রাসের শিকার: সাধারণ সম্পাদক [ভিডিও]
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের মুখোমুখির ঘটনা ঘটেনি। এটি ষড়যন্ত্র। ছাত্রলীগ কতিপয় মিডিয়া, কলম সন্ত্রাসের শিকার। শুরু থেকেই মিডিয়ার বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়ে আসছে ছাত্রলীগ।
রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যুগান্তরের ফেসবুক পেজ লাইভে এসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও অরাজকতার কথা স্বীকার করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এসবের কারণে আমাদের মাঝেও ক্ষোভ ছিল। একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে কব্জা করেছিল এই পরিবহন খাত। পরিবহন শ্রমিকদের হাতে জিম্মি ছিল সাধারণ জনগণ। এমনকি আমরা নিজেরাও এর শিকার হয়েছি। আমরা যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের। এর ফলে ওই দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই ছাত্রলীগ পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।
গোলাম রাব্বানী বলেন, আপনারা দেখেছেন- আমাদের আপা (শেখ হাসিনা) সব সময় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দেন। শিক্ষার্থীরা ৯টি দাবি করেছিল শেখ হাসিনা ১১টি দাবি পূরণের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, এই দাবি যদি দ্রুত আদায় না হয় তাহলে আমরা মাঠে নেমে আন্দোলন করব। আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করব দাবি আদায় ত্বরান্বিত করতে।
তিনি বলেন, আমারও অনেক প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। আমরা বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে ফোন করেছি। তার সঙ্গে বসেছি। আমরা উনাকে বলেছি, প্রত্যেকটি গাড়ির ফিটনেস থাকতে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে আমরা প্রটেস্ট করব। এবং তিনি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারিও করেছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছিল কিনা, এ প্রশ্নে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অস্বীকার করে বলেন, কখনোই ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেনি।
তাহলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হেলমেট পরিহিত হামলাকারীরা কারা? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি শুরুতেই বলেছি- ছাত্রলীগ মিডিয়ার বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার। মিডিয়া সন্ত্রাসের শিকার। সেটার এক্সাম্পল আমি নিজেই। কারণ ঘটনার দিন ৯ জুলাই আমি ও আমার প্রেসিডেন্ট গণভবন থেকে বের হয়েছি। আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনো এটা করতে পারে না। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী কখনোই একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলা করবে না। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী কখনোই ব্যাগে অস্ত্র-রিভলবার বহন করবে না। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী কখনোই ব্যাগে শিলা পাথর, চাপাতি, দা, রড এগুলো রাখবে না। আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি- ১৫-২০ জনকে শনাক্ত করেছি, যারা সরাসরি ছাত্রশিবিরের পোস্টেড নেতা। এবং অস্ত্রধারী মার্ডার মামলার আসামি। আমি প্রমাণ দিতে পারব, আমার কাছে প্রমাণ আছে।
তিনি আরও বলেন- সুতরাং আমি বলব যে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রে নামে তারা।
গোলাম রাব্বানী বলেন, তারা প্রেস কার্ড বানিয়ে মাঠে নেমেছে। এবং এরাই মূলত এই ছাত্র আন্দোলনকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রূপ দিতে চেয়েছে। যার ফলে তাদের মধ্য (ছাত্র আন্দোলন) থেকেই বিনা উসকানিতে সরাসরি আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাদের ৭২ জন আহত হয়েছে। এবং ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমাদের আপা (শেখ হাসিনা) বলেছেন- সর্বোচ্চ ধৈর্য ধর। যদি তোমরা আহত হও, আঘাতপ্রাপ্ত হও তবুও সংযম, ধৈর্য ধর। আমরা সেটাই করেছি।
একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজসহ আশপাশের কলেজগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে সংগঠনটির সম্পাদক বলেন, আমাদের আগস্ট মাসের প্রোগ্রাম চলছে। আমরা বলেছি, সারা দেশে যত ইউনিটিতে সমস্যা আছে, যত কমিটিতে সমস্যা আছে লিখিত দিতে। যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই দ্রুত আমরা এসবের সমাধান করে ভালো ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করব।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন বেশ কয়েকজন।
এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এর পর তাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে ওই কলেজশিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি বিশেষ বাস দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে নিহত দুজনের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। আর জাবালে নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।