শরীয়তপুর পৌরসভার বাঘিয়া এলাকায় হাফেজি মাদরাসার এক শিশু ছাত্রকে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব নান্নু মুন্সির বাড়ী নিয়ে পাষবিক নির্যাতন (বলাৎকার) করেছেন বলে অভিযোগ করেছে ঐ শিক্ষার্থী ও তার পরিবার। এ সময় ফয়সালের পায়ুপথ রক্তাক্ত হয়। রোববার রাতে অসুস্থ ফয়সালকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নান্নু মুন্সী পলাতক রয়েছে।পালং থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদরাসার হুজুর ও অভিযুক্তের ভাই চুন্নু মুন্সীকে থানায় নিয়ে আসেপালং থানা ও ফয়সালের পারিবারিক সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার গ্রামচিকন্দী গ্রামের ফরিদ মৃধার ছেলে ফয়সাল। ফরিদ মৃধা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নড়িয়া উপজেলার চান্দনী গ্রামের রফিজদ্দি মাদবরের বাড়ি থেকে ব্যবসা করে। ছেলেকে কোরআনে হাফেজ করতে শরীয়তপুর পৌরসভার বাঘিয়া এলাকায় মাহমুদিয়া হাফেজি মাদরাসায় ভর্তি করে। গত ৯ আগস্ট মাদরাসার হুজুর হাফেজ ইয়াছিনকে নান্নু মুন্সি জানায়, তার পরিবার ঢাকায় যাওয়ায় সে একা ঘরে থাকতে ভয় পায়।
এ সময় নান্নু মুন্সি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে তার সাথে বাড়ীতে থাকার জন্য দুইজন ছাত্র পাঠাতে বলে। নান্নু মুন্সি ওই মাদ্রাসার জমি দাতার ছেলে হওয়ার সুবাদে রাতে মাদ্রাসা ছুটির পরে ফয়সালসহ দুইজন ছাত্রকে পাঠায় নান্নু মুন্সির বাড়ীতে। দুই দিন যাওয়ার পর ১১ আগস্ট রাতে নান্নু মুন্সি ১০ বছর বয়সী ছাত্র ফয়সালকে হাত-প বেধে জোরপূর্বক পায়ুপথ দিয়ে পাষবিক নির্যাতন (বলাৎকার) করে। এতে ফয়সালের পায়ুপথ ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়। বিষয়টি মাদরাসার হুজুর জানার পর মাদ্রসা সভাপতিসহ স্থানীয় কয়েকজনকে অবগিত করেন।এর পর রোববার বিকালে ফয়সালের বাবা-মা বিষয়টি জানতে পারে। পরবর্তীতে রাত ৯টার দিকে আহত ফয়সালকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ থানায় কোন মামলা হয়নি।
আহত ফয়সাল বলে, তিন দিন যাবৎ ইয়াছিন হুজুরে আমাকে নান্নু মুন্সীর বাসায় পাঠায়। গত শনিবার রাতে নান্নু মুন্সী আমার হাত-পা বেঁধে পায়ুপথ দিয়ে খারাপ কাজ করেছে। এতে আমার পায়ুপথ রক্তাক্ত হয়ে যায়। আমি সকালে মাদরাসায় এসে ঘটনা হুজুরকে জানাই। তখন হুজুর বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করে।
ফয়সালের বাবা ফরিদ মৃধা বলেন, আমার নাবালক ছেলের সাথে খুব খারাপ কাজ করেছে। আমি আইনের কাছে বিচার চাই।
মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ ইয়াছিন বলেন, গত তিন দিন পূর্বে নান্নু মুন্সীর পরিবার ঢাকায় গেছে বলে সে জানায়। নান্নু মুন্সি বাড়িতে একা থাকতে ভয় পায় জানিয়ে প্রথমে মাদরাসার সহকারী শিক্ষককে রাতে বাসায় থাকার প্রস্তাব করে। আবাসিক মাদরাসা হিসেবে ছাত্রদের দুইকক্ষ আমরা দুজনে দেখাশোনা করি। পরে তিনি দুজন ছাত্র পাঠাতে বলে। তিনি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে হওয়ায় ফয়সালসহ দুইজন ছাত্রকে বাসায় পাঠাই। পরে ফয়সালের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর নান্নু মুন্সীকে জিজ্ঞেস করি। সে জানায় হুজুর বিষয়টি ভুল হয়েগেছে। আপনি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে মাদরাসার সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস ছালাম বেপারী ও ফয়সালের মা-বাবাকে জানাই। এর মধ্যে ফয়সাল আমাকে না বলে বাড়ি চলে যায়।মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস ছালাম বেপারী বলেন, আমি কয়েদিন যাবৎ অসুস্থ। তবে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক।জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনে নিজেই মর্মাহত। কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এটা মারাত্মক অন্যায়।
পালং মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযুক্তকে কব্জায় নেয়ার চেষ্টা চলছে। ভিকটিমের পক্ষে অভিযোগ পেলে মামলা নেয়া হবে।