ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে গণগ্রেফতার চলছে বলে মন্তব্য করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সরকার ভিন্নমত দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি নির্বিচারে গ্রেফতার বন্ধ, ভিন্নমত প্রকাশের দায়ে আটককৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও শিার্থীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বিবৃতিতে সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিক ও শিার্থীদের মুখ বন্ধ করার জন্য একটি অস্পষ্ট আইনের ব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করে ইতোমধ্যেই কর্তৃপ সরকারের সমালোচনা করার দায়ে কয়েক ডজন মানুষকে আটক করেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা রামদা, লাঠি ও রড দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনায় শেখ হাসিনা সরকার কোনো সমালোচনা সহ্য করছে না।
আন্দোলনকারী শিার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর চালানো সাম্প্রতিক গণগ্রেফতারে আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা বাকস্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ব্র্যাড অ্যাডামস আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এটা মেনে নেয়া যে, সমালোচনা হলো ক্রিয়াশীল ও সুষ্ঠু গণতন্ত্রের একটি অংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবাদী তরুণেরা নিরাপদ সড়ক, প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার দাবি জানান। পরে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটের শিকার হন। মতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা তাদের ওপর সহিংসতা চালায়। আন্দোলনকারী শিার্থীদের ওপর সরকার সমর্থকদের হামলার সময় পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। পরে এই সহিংসতার বিষয়ে যেকোনো ধরনের সমালোচনা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। বিপুল বিশ্ববিদ্যালয় শিার্থী থাকেন, শহরের এমন একটি অঞ্চলে অভিযান চালায় ঢাকার পুলিশ। শিার্থীরা জানিয়েছেন, পুলিশ সব বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা খুঁজতে তারা দ্বারে দ্বারে গিয়ে মোবাইল ফোন চেক করেছে।
আটককৃতদের একজন বিখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমকে ৯ দিন ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশ কাস্টডিতে তাকে মারধর করা হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর দায়ে গত ৪ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের জামিন নামঞ্জুর করে কাস্টডিতে রাখা হয়েছে। প্রায় সব প্রেফতারই করা হয়েছে ৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে।
আরো পড়ুন :
ছাত্র আন্দোলনে উস্কানিতে ৫১ মামলা : গ্রেফতার ৯৭
শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের দুজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা “ নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৯৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ডিএমপি নিউজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএমপি নিউজে বলা হয়, আটককৃতদের মধ্যে দন্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মোট ৪৩ মামলায় ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানির প্রেক্ষিতে রমনা বিভাগে মোট ১৪টি মামলা করা হয় এবং মোট ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা হয় ১০টি। যেখানে গ্রেফতার করা হয় ২০ জনকে এবং ৮৪ জনকে আসামী করে করা ৪টি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ১১ জনকে । ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টির তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং ১টি মামলা তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
লালবাগ বিভাগে ১জন সহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামী করে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ১জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ওয়ারী বিভাগে মোট মামলা হয়েছে ২টি। অজ্ঞাতনামা ৩৫০/৪৫০ জনকে আসামী করে করা দুই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১ জনকে।
এ বিষয়ে মতিঝিল বিভাগে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ৬টি মামলা করা হয়েছে। ৬টি মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তেজগাঁও বিভাগে ৬ জনকে আসামী করে দুটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন এজাহারনামীয় সহ সন্দিগ্ধ আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বি.ইউ.বি.টি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অজ্ঞাতনামা ৫০০/৬০০ জন ছাত্র শিক্ষককে আসামী করে ১টি মামলা, অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামী করে কাফরুল থানায় ১টি মামলা এবং ৯৬ জনকে আসামী করে আরও ৩টি সহ মোট ৫টি মামলা করা হয়েছে।
গুলশান বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২০০০/২৪৫০ জনকে আসামী করে ৭টি মামলা এবং ৩১জনকে আসামী করে আরও ২টি মামলাসহ মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৯টি মামলায় মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামী করে ৩টি মামলা এবং ১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে ১টি মামলাসহ মোট ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়াও তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে ২৯ জনকে আসামী করে দায়ের করা মোট ৮টি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৮টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলা ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ, ১টি ডিবি পুলিশ এবং ১টি থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
এই আন্দোলনে নানাভাবে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও ডিএমপি নিউজ জানায়।