ভুটানকে পাঁচ গোলে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

  ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: 

বাংলাদেশের শক্তিমত্তা জেনে আগে থেকেই রÿনাত্মক কৌশল ভুটান কোচের । কিন্তু বাংলাদেশের শক্তিমত্তার কাছে পাত্তা পায়নি ভুটানের কোরিয়ান কোচের কোনো ট্যাকটিস। শুধু গোল পেতে একটু বিলম্ব হয়েছে এই যা। স্বাগতিক ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে রাল সবুজরা টানা দ্বিতীয বারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব ১৫ সাফ মহিলা ফুটবলের ফাইনালে। আগামী কাল তাদের শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে। কাল আপর সেমিতে ভারত ২-১ এ হারায় নেপালকে।

ভুটানীদের ডিফেন্সিভ কোৗশলে প্রথমে সুবিধা করতে পারছিলনা লাল সবুজরা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে দিতে উপায় ছিল দূরপাল্লা শটে গোল । ১৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেয়া সেই দূরে পাল্লার শটে লিড গোলাম রাব্বানী ছোটনের দলের । ডিফেন্স থেকে উঠে আসা রাইট ব্যাক আনাই মগিনির ডান পায়ের শটে পরাাল্লা ভুটানের শেষ প্রহরী। এই গোলের পর ছন্দ ফিরে পায় আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। বিপরীতে খেই হারিয়ে ফেলা ভুটানের। ২৫ মিনিটে সিনিয়র শাসুন্নাহারের দুর্বল হেড প্রতিপক্ষ কিপার ঠেকালেও ৪৪ মিনিটে এই কিংজাম দেমার ভুলেই তৃতীয় গোল আদায় মারিয়া মান্ডাদের।

২ মিনিটের বড় যমজ বোন এই আসরে গোল পেলেও গোল আসছিল না ছোট বোন আনু চিং মগিনি পা থেকে । কাল এই দুই বোনই গোল পেলেন। ১৯ মিনিটে আনাইয়ের পর ৩৯ মিনিটে আনু চিং। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে তার নেয়া ডান পায়ের ভলি জালে। ৪৪ মিনিটে কিং জাম দেমার হাত ফসকে যাওয়া বলে ক্রস করেন বড় শামসুন্নাহার। এতে পা লাগিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৯তম গোল আদায় করেন তহুরা খাতুন।

৩-০ তে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর ৬৮ মিনিটে লাল সবুজদের স্কোর লাইন ৪-০ করেন অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা। বক্সের বাইরে থেকে নেয়া তার দর্শনীয় বাঁকানো শটে গ্যালারীতে ফের বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগান। ছোট শামসুন্নাহারের সাথে তার গোল মোট চারটি। ভারতের সিল্কি দেবীরও গোল চারটি। ৮২ মিনিটে কালই বাংলাদেশ দলে অভিষেক হওয়া শাহেদা আক্তার রিপা ডান পায়ের প্লেসিংয়ে নিজের প্রথম এবং দলের পঞ্চম গোল করেন। কক্সবাজারের এই মেয়ে পড়েন বিকেএসপিতে। এই ম্যাচে দেখতে কাল মাঠে আসেন ফেস বুক ভিত্তিক সংগঠনের ১৮ বাংলাদেশী মেয়ে।

বাংলাদেশ দল: মাহমুদা. আঁখি, আনাই, বড় শামসুন্নাহার, নাজমা, নীলা, মনিকা ( ছোট শামসুন্নাহার ৫৬ মি.) মারিয়া, আনু চিং, তহুরা ( শাহেদা ৭৭ মি), সাজেদা ( রিতু পূর্না চাকমা ৭৩ মি)।

আরো পড়ুন : আঁখির চোখ জুড়ানো গোল আবার?

‘ভাই তোমাদের পাঁচ নাম্বার জার্সিধারী ফুটবলার তো দারুণ খেলে। তার শট তো নয় যেন বুলেট। আমার খুব ভালো লেগেছে তার খেলা।’ পরশু চ্যাং ঝি ঝি ফুটবল মাঠ থেকে ফেরার সময় ট্যাক্সি ড্রাইভার দিলীপ কুমার ঘালির মুখে এভাবেই বাংলাদেশের আঁখি খাতুনের প্রশংসা। শুধু এই ট্যাক্সি ওয়ালাই নন, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে ভুটান লিগের দল ফুন সলিং এফসির ফুটবলার প্রেমা ওয়াংচুক, রিজঝুং এফসির খেলোয়াড় দর্জি গেলসেন সহ অনেকের মন জয় করেছেন এই আঁখি খাতুন। ডিফেন্সে যেমন প্রাচীর সম তিনি, তেমনি ওভার ল্যাপ করে উপরে উঠে আসেন চমৎকার পায়ের কাজে ড্রিবলিং করে। কর্নারের সময় হেড করতে আসেন। তার দীর্ঘ দেহটা তখন বড় অস্ত্র। সেই সাথে যুক্ত হয় তার দূর পাল্লার প্রচণ্ড গতির শট। এই দূর পাল্লার শটেই এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে গোল করেছিলেন তিনি। গতবছরের সাফে আজকের প্রতিপক্ষ ভুটানের বিপক্ষে তার ছিল জোড়া গোল। তাই আজও তার কাছে গোল প্রত্যাশা সবার। আঁখি খাতুন জানান, আমার প্রধান দায়িত্ব প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো। এরপর সুযোগ পেলে গোলের চেষ্টা করবো।

এই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে চার গোল আঁখির। ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানের মাটিতে গোল করেছিলেন নেপালের বিপক্ষে। ৯ আগষ্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে তার দর্শনীয় গোলটি ভাইরাল হয়েছে। তবে তিনি এগিয়ে রাখলেন গত বছর ঢাকায় করা ভুটানের বিপক্ষে কর্নার থেকে সাইড হিলে করা গোলটিকে। তখন ভুটানের বিপক্ষে তার অপর গোলটিও কর্নার থেকে। হেডে বল জালে পাঠান তিনি।

লাল-সবুজদেরে নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। হেডে বিপক্ষ দলের ক্রস বা লব ক্লিয়ারে দারুন দক্ষ তিনি। এছাড়া প্রতিপক্ষের থ্রূ পাস গুলো নস্যাৎ করে দেন সময় মতো ছুটে এসে। এরপর কয়েক জনকে কাটিয়ে ঢুকে পড়েন বিপক্ষ সীমানায়। সাথে আছে দূরপাল্লার শট। নেপালের বিপক্ষে তো তার এমন একটি শট অল্পের জন্য জালে যায়নি। মাঠের এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সই দৃষ্টিবন্দী করেছে দর্শকদের‌্য। তার ভক্তও কম নয়।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাটগোলা গ্রামের তাঁতী পরিবারের মেয়ে আঁখি। গ্রামের অন্য আট দশটা মেয়ের মতো তারও হওয়ার কথা ছিল তাঁত শ্রমিক। কিন্তু ২০১৪ সালে শাহজাদপুরের ইব্রাহিম পাইলট স্কুলের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবলের মাধ্যমে তার ফুটবলে আসা। সুযোগ হয় বিকেএসপিতে। ২০১৬ সালে ডাক পান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে। এরপর আর তাঁত নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি তাকে।

আঁখির বাবা আক্তার হোসেন তাঁত শ্রমিক। নিজের কোনো মেশিন নেই। কাজ করেন অন্যের মেশিনে। আঁখির মা নাসিমা বেগম চাইতেন মেয়েও যেন তাঁত শ্রমিকরে কাজ করে সাংসারে বাড়তি উপার্জনে সাহাস্য করে। এখন অবশ্য ফুটবল খেলেই পরিবারকে সাহায্য করছেন। আঁখি জানান , ‘আমি কখনও তাঁত শ্রমিকের কাজ করিনি। তবে মায়ের সাথে সুতা বুনতাম।’ ফুটবলের প্রতি তার টান দেখে স্কুল শিক্ষক মনসুর আহমেদ তাকে বাড়তি ট্রেনিং করাতেন। তার দীর্গ দেহের কারনইে বাফুফের কোচরা তাকে নির্বাচন করে।। সেই সূত্র ধরে আজ তিনি বাংলাদেশ সিনিয়র জাতীয় দলের ভবিষ্যতের তারকা।

 

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।