শিক্ষার্থীদের ওপর প্রতিশোধের পথ বেছে নিয়েছে সরকার : রিজভী

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট : 

ঈদের আগেই সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানান। : তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের অন্যায় আর জুলুমের শিকার হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে সকল অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এমননি অসুস্থ দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা না দিয়ে তার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। উন্নতমানের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তার সুচিকিৎসার অধিকারকেও বাধা দেয়া হচ্ছে। বিপুল জনপ্রিয় এই নেত্রী জনসমর্থনহীন সরকার প্রধানের চক্ষুশূল, তাই প্রতিহিংসার জ্বালা মিটাতেই অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে বানোয়াট অসত্য মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। সাজা দিয়ে বন্দি করা হয়েছে দেশনেত্রীকে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। বাংলাদেশ এখন জুলুমের গ্যাসচেম্বারে পরিণত করা হয়েছে। দেশের সর্বত্র রক্ত ঝরছে। সারাদেশে জনপদের পর জনপদে অসংখ্য মিথ্যা মামলা এবং সেই মামলায় হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে আসামি করে গ্রেফতার করা এবং অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি চলমান অরাজনৈতিক শিশু-কিশোরদের আন্দোলকে পৈশাচিক কায়দায় দমন করতে তাদের আসামি করা হয়েছে। অবৈধ সরকার দেশের রাজনীতিকে প্রতিহিংসাপরায়ণ ও সংঘাতময়  করে তুলেছে। আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের দ্বারা সরকার বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে উন্মাদ হয়ে পড়েছে। আমি ঈদের আগেই সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি এবং তার সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অন্যায় সাজা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে জোর দাবি জানাচ্ছি। শিশু-কিশোরদের আন্দোলনে সরকারের বর্বরোতার নিন্দা জানাচ্ছি। তাদের মিথ্যা মামলা ও রিমান্ড প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবি করছি এবং বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশের  রাজবন্দির মুক্তি দাবি করছি। : রিজভী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু-কিশোরদের চলমান আন্দোলনে সামাজিক গণমাধ্যমে উস্কানি ও সহিংসতার মিথ্যা অভিযোগের প্রেেিত বিভিন্ন থানায় ৫১টি মামলায় প্রায় শ’খানেক ছাত্রছাত্রীকে আটক করা হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে ঐ মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে। এই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের আন্দোলন বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তারা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সমাজের অগ্রগণ্য মানুষরাও বিসি¥ত হয়েছে তারা যা পারেনি শিশু-কিশোররা চোখে আঙুল দিয়ে সেটা করে দেখিয়েছে। : প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, শিশু-কিশোররা পথ দেখিয়েছে। কিন্তু এখন আন্দোলনরত শিশু-কিশোররা যে পথ দেখছে তাতে তারা প্রতিদিনই শিহরিত হয়ে উঠছে। তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, রিমান্ডের হাড়-হীম করা অকথ্য নির্যাতন করা হচ্ছে, এরপর পাঠানো হচ্ছে জেলখানায়। মুখে যাই বলুন, সরকার প্রধান শিশু-কিশোরদের সাথে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছেন। অভিভাবকরা বাচ্চাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত, ভীত, শিহরিত। এখন শুধু ছাত্ররাই নয়, ছাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছে না আটক ও জুলুমের করালগ্রাস থেকে। গোয়েন্দা পুলিশ একটার পর একটা ছাত্রী আটকের লোমহর্ষক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সামনে থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তাসনিম ইমিকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে কয়েক ঘন্টা নির্মম প্রহর গুনতে হয়। ইমির আটকের ১২ ঘন্টা পর ইডেন কলেজের কোটা আন্দোলনের আরেক নেত্রী লুৎফুন্নাহার লুমামে সিরাজগঞ্জে বেলকুচি থানার একটি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এই জালিম সরকারের হাত থেকে বাঁচতে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রী ও সমর্থনকারী নারীরাও রেহাই পাচ্ছে না। এই সকল ঘটনায় জাতির সম্ভ্রম ধুলায় লুটিয়ে গেলেও সরকারের চন্ডমূর্তির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের গ্রেফতার করে সভ্যতার শেষ রশ্মিটুকু নিভিয়ে দিল সরকার। তবে শেখ হাসিনা বিশ্বের সকল ফ্যাসিস্ট ও নাৎসী নেতাদের ‘ওভারটেক’ করে গেছেন। : বিএনপির এই নেতা বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন দমাতে সরকার শাসনযন্ত্রের যে দমন মতা কাজে লাগালেন তাতে কিছু বেপরোয়া চালকরাই অনুপ্রাণিত হলেন, উৎসাহিত হলেন। আর সেই উৎসাহের বশবর্তী হয়ে সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া গাড়ি চলা অব্যাহতই আছে এবং মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়ু হচ্ছে। গতকাল সারাদেশে দুর্ঘটনায় ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গতকাল রাজশাহীর মহানগর নওদাপাড়া বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যায় এবং হাসপাতালে মারা যায় একজন। নিহতদের মধ্যে আনিকা নামে একজন স্কুল ছাত্রীও আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, গ্যাস সংকটে কৃষি ও  শিল্প-উৎপাদনে বিপর্যয়, তীব্র মূল্যস্ফীতি, ভয়াবহ যানজট তার ওপর সর্বস্তরের চাঁদাবাজি, জবরদখল, গুম, খুনের ভয়, রক্তপাত, অন্যায় আদায়ের দাপট ও সড়ক দুর্ঘটনায় বেঘোরে জীবনহানি, নিরাপত্তাহীনতায় নাগরিকদের জীবন ওষ্ঠাগত। এমন কোনো দিন নাই যে, মানুষ খুন হচ্ছে না। প্রায় দিনই নারীসহ কোলের শিশুটিও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কি গণবিােভের জোরালো হাওয়া বয়ে যাওয়া ছাড়া নিশ্চয়ই শান্তির মৌসুমি বাতাস বইবে না। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বিনা চিকিৎসায় মরণাপন্ন অবস্থা। খুব দ্রুত পোস্ট্র্রেট গ্ল্যান্ডে অস্ত্রোপচার না হলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কিন্তু বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক কোনো ক্রমেই শিমুল বিশ্বাসকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করছেন না। নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বিএসএমএমইউ-এর কর্তৃপ নির্বিকার। সরকারি হাসপাতালগুলো দলীয় চেতনায় ভরপুর বলে বিরোধী দলের মানুষরা সুচিকিৎসা পাওয়ারও অধিকারকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমি অবিলম্বে শিমুল বিশ্বাসকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।   : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকান্ডের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী শাসনের পাহারাদার হিসেবে যুবলীগের, ছাত্রলীগের মতোই নিত্যকার সহিংস ঘটনায় লিপ্ত রয়েছে। ঢাকা মহানগরী দেিণর সাধারণ সম্পাদক কাজী বাশারের পুরোন ঢাকার ওয়ারী থানার নিজ বাসায় পুলিশ ঢুকে ব্যপকভাবে ভাঙচুর, তছনছ করে। এ সময় তার বাসায় নিরাপত্তায় থাকা সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়ে গেছে। পুলিশ বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পর্র্কে কটূক্তি করলে  কাজী বাশারের স্ত্রী সেটি প্রতিবাদ করলে তাকে নিজ বাসায় না থাকার জন্য হুমকি দেয়। পুলিশের আচরণ সন্ত্রাসীদেরকেও ছেড়ে যাচ্ছে। মতা ধরে রাখতে অবৈধ সরকার পুলিশকে দিয়ে নাৎসীবাদের ধিকৃত পন্থা অনুসরণে মদদ দিচ্ছে। বরিশাল জেলার গৌরনদী পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেন মোহাম্মদ তুষারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঐ জেলার আগৈলঝড়া উপজেলার যুবদল নেতা সালমান হোসেনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তুষার ও সালমানকে মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-দফতর বিষয়ক সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ।   : : :

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা:সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।