ক্রাইমবার্তা রিপোট: রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, যেভাবে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার হচ্ছে, সেখানে নিরাপত্তার জন্য একটি আইনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি যেভাবে বর্তমানে আছে, পাস হলে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবই ব্যাহত হবে। তাই খসড়াটির আমূল পরিবর্তন করে আইন করতে হবে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে একমত যে একটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দরকার। কিন্তু বর্তমান খসড়াটি যদি আমূল পরিবর্তন হয়ে না আসে, তাহলে অবশ্যই সেটা মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতা এবং অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাহত করবে। তিনি বলেন, যখনই ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের জগৎ ছোট হয়ে আসে, তখনই কিন্তু গুজব বেশি ছড়ায়
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যখন একটি সমাজ, একটি জনগোষ্ঠী নির্দ্বিধায় ও নিঃসংকোচে মত প্রকাশ করতে পারে, তখনই একটি সমাজ সামগ্রিকভাবে উন্নতি লাভ করে।
অসংখ্য আইনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেন, আইন তখনই করা হয় এবং বাড়ানো হয়, যখন কোনো আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সৃষ্টিশীল লেখকদের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে কবি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমার মনলাইনে যা কিছু আছে, আমি সবকিছু যদি মনখুলে বলে দিই, কখনো কখনো সেটা আরেকজনের মনকে কলুষিত করতে পারে। কাজেই যখন মনলাইন ব্যবহার করব, এমনভাবে করব, যা আর কাউকে আঘাত করতে না পারে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, সবাই একমত যে একটি আইন দরকার। কিন্তু সেই আইন দিয়ে আবার বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়, সেটা হতে পারে না।
একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকনেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন। তাঁর ধারণা, জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনটি হয়তো পাস হবে না। প্রস্তাবিত আইনটি সংসদীয় কমিটিতে থাকায় তিনি এ বিষয়ে স্পিকারের কাছে গিয়ে মতামত তুলে ধরতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন।
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরিশদ অবিলম্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানান।
পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সভাপতি মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন কবি ও সাংসদ কাজী রোজী, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন প্রমুখ। সৈয়দা আইরিন জামানের সঞ্চালনায় আলোচনায় প্রারম্ভিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এম এস সিদ্দিকী।