এদিকে, ক্ষোভ প্রকাশ করে পার-খাজুরা ও ধানদিয়া থেকে আসা ক্রেতা আজমল ও রায়হান জানান- ‘অন্যবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি।’ তারা আরো জানান, ‘ভারত থেকে গরু না আসায় গরুর ব্যাপারিরা চড়া দামে গরু বিক্রয় করছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ক্রেতারা গরু কিনছেন আবার সাধ্যের মধ্যে না থাকায় কেউ ফিরেও যাচ্ছেন।’ তবে ছাগল বেচাকেনায় দরদামের তর্ক ছিলো কিছুটা সাধ-সাধ্যে মধ্যে। ফলে ক্রেতারা মন্তব্য করেছেন-‘ভারতীয় গরু না আসার অজুহাতে কলারোয়া পশুহাটে গরুতে চড়া, ছাগলে স্থিতিশীল।
এদিকে ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে ঈদের শেষ মুহুর্তে সদর উপজেলার আবাদেরহাট ও কাথ-া হাটে কুরবানী গরু কেনাকাটার ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় পড়েছে। একই সাথে এসব হাট বাজারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে বলে সূত্র জানা গেছে। আবাদের হাটে প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার ২দিন গরু হাট বসে। অপরদিকে কাথ-াহাট প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ১দিন গরু হাট বসে। মঙ্গলবার ঈদের শেষ মুহুর্তে কাথ-াহাটে ও শনিবার আবাদেরহাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের শেষ মুহুর্তে কুরবানী গরু কেনার ধুম পড়েছে। এ হাটে জেলাসহ অন্যান্য জেলা থেকে গরু কিনতে আসেন ক্রেতারা। কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ছোট বড় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার গরু আবাদেরহাটে ও কাথ-া হাটে উঠতে দেখা গেছে। আবাদেরহাটে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু উঠতে দেখা গেছে।
এদিকে আশাশুনির বুধহাটা, দেবহাটার পারুলিয়া, তালার পাটকেলঘাটা, কালিগঞ্জের নলতা ও শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট জমে উঠেছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন অস্থায়ী পশুর হাটেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কুরবানী ঈদের শেষ মুহুর্তে প্রিয় পশু কেনা কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
দেবহাটায় বৃহৎ পশুর জমজমাট হাট
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চালে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার পশুরহাট। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। রবিবার পারুলিয়া বৃহৎ পশুর হাট পরিদর্শন করেনে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনছুর আহম্মেদ, সিনিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী, জেলা পরিষদের সদস্য আল-ফেরদৌস আলফা, সদর ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মান্নান আলী, কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এমাদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নুর-আমীন গাজী। এছাড়া সকাল থেকে এসআই ইয়ামিন আলী, এসআই নিত্যানন্দসহ পুলিশ সদস্য ও গ্রাম পুলিশের সদস্যদের উপস্থিত ও দক্ষ নজরদারিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে, যানজট নিরাসন করে হাটের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করেন। হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা থাকলেও দাম কম ছিল না বড় গরুর। এবার দাম অন্য বছর গুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে এতে সন্তুষ্ট খামারী, গরু ব্যবসায়ীরা ও বিক্রেতারা। যথেষ্ট মূল্য পাওয়াতে লোকসান গুণতে হচ্ছে না তাদের। অন্যদিকে ক্রেতাদের সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে ধর্মীয় কাজটি সমাধান করতে পশু কিনছে ক্রেতারা। তাই বিক্রিতেও রয়েছে প্রতিযোগিতা। তবে এবার হাটে ভারতীয় পশু না থাকায় দেশীয় পশুর আগমন কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় স্বস্থি ফিরেছে। পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র দুই দিন বাকি। এ ঈদের দিনটিতে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আশায় মানুষ কোরবানি দিয়ে থাকেন। এজন্য প্রয়োজন হৃষ্টপুষ্ট পশু। এই চাহিদা পূরণ করতে রবিবার দেবহাটা উপজেলার গরুহাটে গিয়ে দেখা গেছে হাটের হাল চিত্র। হাটে বেচাকেনা জমে উঠেছে। এর মধ্যে দেশি গরুর সংখ্যাই বেশি।
গরুর বেপারিরা জানান, জেলার অন্য পশুরহাট গুলোতে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশি পশু আসছে। তবে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে গরু না আসায় দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে বলে সাধারণের অভিমত। বিশেষ করে গতবছর বাজারে মাংসের কেজি ছিল ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। সেখানে এ বছর মাংসের কেজি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। সেই হিসেবে পশুর দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। এ হাটে গত কয়েকহাটের তুলনায় বিক্রিও বেশি। হাটে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম চাইছে বিক্রেতারা। তবে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকার গরু ও ৬০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া ৩৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা দামের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। ৪০-৫৫ হাজার টাকার মধ্যেও বেশকিছু গরু বিক্রি হয়েছে। খাসি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। দাম ৫ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে ৬-৮ হাজার টাকা দামের ছাগল বেশি বিক্রি হচ্ছে।
হাটের ইজারা গ্রহণকারী ও জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা জানান, ভারতীয় গরু না থাকায় দেশি গরুর সমাগম বেশি। তাছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে কোন প্রকার চুরি, ছিনতাই না ঘটে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দাম থাকায় স্বস্তি ফিরেছে।———–০————–
সাতক্ষীরায় ৭৮ হাজার কুরবানির পশু প্রস্তুত
আবু সাইদ বিশ্বাস (সাতক্ষীরা) : মুসলমানদের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় ৭৮ হাজার ৬৮৬ টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলাতে আট লক্ষ ৪৬ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণ করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা।
কুরবানির ঈদের বাজার ধরতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় নিজেদের গচ্ছিত স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগ করে কুরবানির বাজার ধরার জন্য গবাদিপ্রাণী পালন করছেন। আর প্রাণীম্পদ অধিদপ্তর সুস্থ সবল গরু পালনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা কার্যালয় এবং খামারিদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। খামারিদের দাবি ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করলে তারা ন্যার্য মূল্য পাবে।
কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের মন আকর্ষণ করতে এবং বেশি লাভের আশায় জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ক্ষতিকারক স্টেরয়েট ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে বাজারজাত করণের মিশন হাতে নিয়েছে মওসুমী ব্যবসায়ী ও খামারী বলে জানা গেছে। তবে প্রালিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী খামারীরা ক্ষতিকর পদার্থ কুরবানীর পশুকে খাওয়াচ্ছেন না। প্রশিক্ষণ লব্ধজ্ঞান দিয়েই তাঁরা স্বাস্থ্য সম্মতভাবে স্বাভাবিক নিয়মে গরু মোটাতাজা করছেন। তবে প্রাণিজ¤পদ অধিদপ্তর সূত্র স্বীকার করছে এক শ্রেণীর মওসুমী ব্যবসায়ীরা গরুকে মোটাতাজা করতে স্টেরয়েট জাতীয় ওষুধ খাওয়াচ্ছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, কুরবানীর পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কয়েক হাজার গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় সরকারি পশু চিকিৎকদের সহযোগিতায় এবছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ৭৮ হাজার ৬৮৬টি গরু, ছাগল ও মহিশ কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কুরবানিতে দেশী জাতের ও শংকর জাতের গরু চাহিদা বেশি থাকায় খামারীরা এ ধরনের গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করে প্রায় এক বছর ধরে। এসব গরুর বাজার মূল্য প্রায় দুইশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে কুরবানিকৃত পশুর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৩৬৯২টি, কলারোয়াতে ৯৬০৭টি, তালাতে ১৩ হাজার ৪৩৯টি, আশাশুনিতে ১৯৭৫টি, দেবহাটায় ১৪৬৭টি, কালিগঞ্জে ৪৩১০টি এবং শ্যামনগরে ৪৯৭৫টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বেসরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কুরবানিকৃত পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যা ৩৯ হাজার ১৯৮টি, ছাগল ২৫২২৭টি এবং ভেড়া ৫৫০১টি।
গত কয়েক বছর ধরে মাংসের দাম বেশি হওয়াতে জেলার গ্রাম গঞ্জে পশু পালনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। গ্রামের বেশির ভাগ চাষীদের বাড়িতে সারা বছরই গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন করা হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে জেলাতে ১০ হাজারের মত খামারি রয়েছে। সরকারী হিসাব মতে জেলাতে ১০ হাজার ৫৫২জন খামারি রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১৯৩৮ জন, কলারোয়াতে ১৫৬১ জন, তালাতে ৩৪২৪ জন,আশাশুনিতে ১৩৬৭ জন, দেবহাটায় ৪৫৫ জন, কালিগঞ্জে ১০৮৭ জন এবং শ্যামনগরে ৭২০ জন খামারি রয়েছে। তবে বেসরকারী হিসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি।
এসব খামারিরা বর্তমানে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ১১৪টি গবাদি পশু, ৫৮৪৩ টি মহিষ, ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮১৯টি ছাগল এবং ৩৮ হাজার ৪১২টি ভেড়া পালন করছে।
তালা সদর উপজেলার জিয়ালা নলতা গ্রামের খামারী রবিউল জানান, গত বছর তিনি ১২টি গরু পালন করেছিলেন। সে সময় তার বেশ লাভ হয়েছিল। এ বছর তিনি ১৫টি গরু পালন করছেন। এ বছরও লাভ হবে বলে আশাবাদ তাঁর। খামারী আব্দুস সামাদ বলেন, রোজার ঈদের পর থেকেই তিনি ৬টি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেছেন। নিয়মিত খইল, কুঁড়া ও ভূষি খাওয়াচ্ছেন কুরবানির বাজার ধরার জন্য।
ইতোমধ্যে স্থানীয় বেপারীরা বাড়িবাড়ি যেয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। তবে পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর পালন করতে এবার খরচও হয়েছে অনেক বেশি।
ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধ আর পশু খাদ্যের দাম কমানোর দাবী খামার মালিক ও বেপারিদের।
গরু খামার করে আবার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে অনেকেই। সচ্ছলতা এনেছে অনেক সংসারে। এ জেলার উন্নত মানের পশু একদিকে যেমন দারিদ্র্যবিমোচনে বেকার সমস্যায় ভূমিকা পালন করছে। অপরদিকে গোশতের চাহিদাপূরণে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে।
কালিগঞ্জ কৃষিকর্মকর্তা ডা. মনজিত কুমার মন্ডল জানান, মোট আমিষের ৭৬ ভাগ আসে প্রাণীজ সম্পদ থেকে।
জেলার পশু পলন থেকে সেই চাহিদা পুরণ করে। তিনি আরো জানান,জেলাতে উৎপাদিত পশু কুরবানীর চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করলে জেলার খামারিরা লাভবান হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সাতক্ষীরায় চাষীরা দিন দিন গো-পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
আসন্ন ঈদে জেলার চাষীরা পশু বিক্রয় করে ভাল মুনাফা পাবে আশা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার।