ঝাল-মুড়ি বিক্রি করে স্বাবলম্বী যশোরের জোনাব আলী

তরিকুল ইসলাম : যশোর এম এম কলেজ : ঝাল মুড়ি কিক্রি করে স্বাবলম্বী যশোরের জোনাব আলী। পাঁচ সদস্য নিয়ে এখন তার সুখের সংসার। দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে অনেকে জোনাব ভাইয়ের ঝাল-মুড়ি খেতে এবং ঝালমুড়ি বানানোর মশলা কিনতে ভিড় করে করছে প্রতিনিয়ত।

চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। হই চই, আড্ডা, গান আর পড়াশোনা চলছে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে সবার মুখে জোনাব ভাইয়ের কথা। আড্ডা, গান, আনন্দঘন মুহুর্ত আর পথের অপেক্ষায় রসদ যুগিয়ে যাচ্ছে তিনি। জোনাব ভাই, কোন ছাত্র বা শিক্ষক নন। তিনি হলেন একজন ঝাল-মুড়ি বিক্রেতা।
তার সাথে কথা বলে জানাযায় তিনি এক জন এক আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন আত্নপ্রয়তি।  তার মনের মাধূরি দিয়ে চানাচুর,মুড়ি,কাঁচা মরিচ,পেঁয়াজ,ছোলা, ক্ষিরা সহ বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে অত্যন্ত মুখরোচকভাবে মুড়ি মাখিয়ে গ্রাহকদের মণ আকৃষ্ট করে চলেছে। ঝালমুড়ি বিক্রি করেই আজ তিনি স্বাবলম্বী।
বর্তমানে তিনি যশোর সদরের খোড়কি গ্রামে ক্ষুদ্র একটি বাড়িতে সুখের সংসার গড়েছেন। শত কর্মব্যস্ততার পরও মানুষটির মুখে যেন সার্বক্ষণিক আনন্দের ছাপ। তার আদি নিবাস সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ধূলবাড়ি ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে। পিতা জিন্নাত আলী শেখ।
আর্থিক সংকটের কারণে ১৯৯২ সালে যশোরে চলে যান। তারপর জীবন- জীবিকার তাগিদে রিক্সা চালানো,দিনমজুরী,রাজমিস্ত্রি সহ বেশ কিছু পেশায় কাজ করেন। অবশেষে তিনি ২০১২ সালে ঝালমুড়ি বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে আর তাকে পিছুন ফিরে তাকাতে হয়নি।
বর্তমানে তার সংসারে পড়ে পাঁচ জন সদস্য। তিনি সকালে সরকারি এম এম কলেজ,যশোর ক্যাম্পাসে এবং সন্ধ্যায় খড়কি জেবিন মোড়ে ঝাল মুড়ি বিক্রি করেন। এতে তার আড়াই থেতে তিন হাজার টাকা বেচা -কেনা হয়। খরচ বাদে ছয় থেকে সাতশ টাকা তার লাভ হয় । সেই আয়ের দ্বারা তিনি সংসার চালান। বর্তমানে তার মেঝ মেয়ে দশম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া শুনা করেন। এতেই তিনি বেজায় খুশি।
ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণ তার জোনাব আলীর ঝালমুড়ি বিক্রি বিষয়ে জানালেন ,জোনাব মামা একজন রসিক মানুষ। তার সুরেলা কন্ঠে গান,মাঝে মধ্যে ইংলিশ বলা এবং সকলের প্রতি ভালোবাসা সহ তার ঝালমুড়ির এক অসাধারন গুন রয়েছে। মামার হাতের ঝালমুড়ি না খেলে যেন ছাত্র ছাত্রীদের দিন কাটে না।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো দোকান খোলা থেকেই যেন সিরিয়াল দেয়া শুরু হয় আর মাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিরিয়াল থাকে। অনেক সময় দেখা যায় মাল শেষ হয়ে গেছে অথচ দোকানের সামনে অপেক্ষদের সিরিয়াল রয়ে গেছে। তাদেরকে হাসিমুখে বলে ভাই আপনারা কাল আসেন।’
এই বিষয়ে জোনাব আলীর সাথে কথা হয়। তিনি জানান,আমি যতদিন আছি ততদিন সকলের কাছ থেকে এই ভালোবাসা এবং মামা ডাক শুনে মনের ভেতরে আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।
দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। সবার প্রিয় ব্যক্তি জোনাব ভাইয়ের ঝাল-মুড়ি এখনও যাদের খাওয়া হয়নি তারা হয়তো এখন আফসোস করছেন। আর দেরি নয়, একবার হলেও চলে আসুন কলেজ ক্যাম্পাসে জোনাব ভাইয়ের ঝাল-মুড়ি খাওয়ার জন্য। ক্রাইমবার্তা নিউজ।

Check Also

ব্যাংকার’স এসোসিয়েশন সাতক্ষীরার বর্ষপূর্তি উদযাপন ও কমিটি গঠন 

সভাপতি মোঃ আব্দুর রহিম (জনতা ব্যাংক), সম্পাদক কবির উদ্দিন (আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক) আব্দুল্লাহ আল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।