ক্রাইমবার্তা রিপোট :নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পৃথক ১৫ মামলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের আরও ৩২ শিক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন।সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো শিক্ষার্থীদের জামিন মঞ্জুর করেন।এর আগে রোববার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের একাধিক মামলায় ৪২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পৃথক ১০ মামলায় ১৪ আসামির জামিন দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে ১২ জনই শিক্ষার্থী।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- রিসানাতুল ফেরদৌস, বায়েজিদ, আমিনুল এহসান বায়েজিদ, যাবের আহমেদ উল্লাহ, শামীম, জোবাইর হোসেন, গাজী ইমাম বুখারী, সাদ্দাম, মো. ইহসান উদ্দিন ইফাজ, মাহবুবুর রহমান, সাইদুল ইসলাম তৌহিদ, শাহরিয়ার হোসেন, মো. মাহবুবুর রহমান ও সোহেল। এর মধ্যে শেষের দুজন ছাড়া সবাই শিক্ষার্থী।
আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের পৃথক ৫ মামলায় ২০ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
এরা হলেন- মাসুদ আলম ওরফে মাসুদ, আবু সাঈদ ফজলে রাব্বী, রাকিবুল হাসান, রাশেদ খান, সাখাওয়াত হোসেন, আতিকুর রহমান, সাইদুর রহমান, সোহেল ইসলাম, মাসুদ সরকার, জসীম উদ্দিন, আবু সাঈদ, আলী হোসেন, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম, ইউসুফ চৌধুরী, সাইদুল ইসলাম তৌহিদ, আলমগীর হোসেন ও মাহবুবুর রহমান আরমান।
এর মধ্যে প্রথম পাঁচজনের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রত্যেকেই সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের এসব মামালায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় এদিন সকালে ছয় শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন গ্রহণ করেননি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
এরা হলেন- শিক্ষার্থী সোহেল ইসলাম, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম ও রাশেদ খান।
পরবর্তীতে আইনজীবীর মাধ্যমে মহানগর দায়রা জজ আদালতের ওই জামিন আবেদনগুলো প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিন জামিন শুনানি উপলক্ষে সকাল ৯টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় জমাতে শুরু করেন শিক্ষার্থীদের আত্মীয়স্বজন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাধিক মামলার আসামি ঢাবি ছাত্র রাশেদের মা সালেহা বেগম ও তার স্ত্রীকে সকাল থেকেই আদালতের বারান্দায় শুনানির অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
সকালে রাশেদের জামিন আবেদন উচ্চ আদালতে (ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত) শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ থাকায় তা গ্রহণ করেননি আদালত। জামিন আবেদন ফেরতের কথা শুনেই সালেহা বেগমর দুই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে থাকে। পরে বিকালে অদালত রাশেদের জামিন দিলে তিনি আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে শুকরিয়া আদায় করেন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের মামলায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিসানাতুল ফেরদৌসের বাবা তার সন্তানের জামিন আদেশ শুনে খুশি বিজয় চিহ্ন দেখান।
যুগান্তরকে তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। আমার ছেলে কখনো এ কাজ করতে পারে না। এ জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
আদালত সূত্র জানায়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কর্তব্য-কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ৫১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় গ্রেফতার ৯৯ জনের মধ্যে ৫৪ জনই শিক্ষার্থী।
এদিনে জামিন শুনানিতে তাদের আইনজীবীরা বলেন, এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগে নেই। সন্দেহজনকভাবে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা সবাই ছাত্র। জামিন না পেলে তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুনানি শেষে আদালত ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এরপর ঘাতক বাসচালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলনের সময় ভাঙচুর, গুজন ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেয়ার মামলায় ওই ছাত্রদের গ্রেফতার করা হয়।
আর চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উপাচার্যের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এসএম কামরুল আহসান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আর একই সময় অপর চারটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।