ক্রাইমবার্তা রিপোট:
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে পত্রপত্রিকায় অযাচিত লেখালেখির কারণে কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো প্রকল্পের কাজ না পায়, সেটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় অযাচিতভাবে লেখালেখি হয়। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়। তা ছাড়া কিছু পত্রিকা আছে, যারা একটু খুদ পেলেই উন্মুখ হয়ে বসে থাকে সেগুলো ছাপানোর জন্য। এতে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ অকারণে পিছিয়ে যায়।
গতকাল সকালে প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকা ওয়াসার দাসেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে একই পাইপলাইনে নিয়ে আসতে চীন সরকারের সহযোগিতায় ঢাকা ওয়াসার ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন মহাপ্রকল্পের অংশ হিসেবে খিলগাঁও এলাকার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাসেরকান্দি প্রকল্পটি ছাড়াও ঢাকায় রুট নিয়ে বিতর্কে বহুল আলোচিত মেট্রোরেল প্রকল্প পিছিয়েছে কয়েক বছর। সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে রুটের পরিকল্পনা ঠেকাতে নাগরিক সমাজের একটি অংশ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে। আর কিছু গণমাধ্যম সেগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে।
এসব বিতর্কে বছর তিনেক পেছানোর পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধন হয় মেট্রোরেলের কাজ। ২০২১ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী বহন শুরু হবে। অথচ এ নিয়ে বিতর্ক না হলে এরই মধ্যে কাজ প্রায় শেষ হয়ে যেতে পারত। স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্পও পিছিয়েছে দুর্নীতি চেষ্টার ভুয়া অভিযোগের কারণে। যে সেতু দিয়ে এখন যান চলাচলের কথা, সেটি চালু হতে হতে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় লেগে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হাতিরঝিল, গুলশান, বনানী, বারিধারা, সেনানিবাস এবং সংসদ ভবন এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যার যেমন সমাধান হবে তেমনি বাসিন্দারা একটি উন্নত পয়োনিষ্কাশনের সুবিধা পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো ধরনের প্রকল্পের কাজ করতে গেলে আমাদের নানা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি পাইপে আধা ইঞ্চির সমস্যা নিয়ে আমাদের অনেক দিন সময় নষ্ট হয়ে গেল।
এসব বিতর্ক কেন তোলা হয়, তা বর্ণনা করে সরকারপ্রধান বলেন, কারণটা আমি জানি। কারণটা আর কিছুই না, কাজটা কে পেল না পেল। কেউ যদি না পেল, ওমনি দিল একখানা পত্রিকায় লিখে। আর কিছু পত্রিকা তো উন্মুখ হয়ে বসে থাকে, ওটা লিখবেই। এতে সময় নষ্ট হয়। অথচ হাতিরঝিল করেছি, হাতিরঝিলের পানি প্রায়ই পচে যায়। এই ট্রিটম্যান্ট প্লানটা যদি আমরা না করি, তাহলে হাতিরঝিলকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না, এটা হলো বাস্তবতা।
ঢাকা মহানগরীর আধুনিকায়নে তার সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীর বস্তিগুলো বহুতল ভবনে প্রতিস্থাপিত হবে, যাতে করে নগরবাসী উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে জীবন-যাপন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে কোন বস্তি থাকবে না। এর স্থলে ২০ তলা করে ভবন গড়ে তোলা হবে। এখন যেমন বস্তিবাসীরা ভাড়া দিয়ে থাকেন তেমনি তখন তারা ওসব ভবনেও দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে বসবাস করবেন।
রাজধানীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে রাজধানীতে আরো ৪টি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এতে পাগলায় বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় দুটি এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় রায়েরবাজার এবং উত্তরায় আরো দুটি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। রাজধানীর পাশাপাশি জেলা, উপজেলা শহর এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও পানি ও পয়োসেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হওয়ারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বালু, তুরাগ, ধলেশ্বরী ড্রেজিং করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী ড্রেজিং করলে প্রচুর বালু আমরা উত্তোলন করতে পারি। কোথাও আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন করব, কোথাও আমরা চাষের উপযোগী জমি ব্যবহার করব, কোথাও আমরা শহর গড়ে তুলব।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে তিনি সরকার গঠন করতে পারলে রাজধানীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ বক্সকালভার্টগুলো উন্মুক্ত করে এর ওপর দিয়ে এলিভেটেড ওয়ে নির্মাণ করে দেবেন।
এলজিআরডি এবং সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জি. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুয়ো এবং ওয়াসার ব্যবস্থপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বক্তৃতা করেন।####