ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু ঈদের আনন্দ কী সবার কাছে সমান? অনেকের কাছেই হয়তো তা ভিন্ন। এখন সে রকমই একজন হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চতুর্থবারের মতো এবারো কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠেই ঈদ করতে হচ্ছে ৭৪ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। এর আগে গত ঈদুল ফিতরও জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত কারাগারেই কেটেছে তার। এমনকি গত ১৫ আগস্ট ৭৪তম জন্ম দিনটিও সেখানেই পার করেন বেগম খালেদা জিয়া। বিগত ১/১১’র সরকারের সময় রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদও কেটেছিল তার সংসদ ভবন এলাকার সাব জেলে। এ বছর রোজা ও কোরবানির ঈদ কাটছে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে। জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো কারাবন্দী হয়ে চতুর্থ ঈদ পার করছেন তিনি। একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কারান্তরীণ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ এই বন্দিকালীন সময়ে পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও দলের নেতারা দেখা করেছেন তার সাথে। সর্বশেষ গত শনিবার বিকেলে দেখা করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে গ্রেফতারের পর সোজা নিয়ে যাওয়া হয় সিএমএম আদালতে। সেখানে তার জামিন নামঞ্জুর হলে তাকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সাব জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মুক্তি পান। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম কারাগারে পালিত হয় তার রোজার ঈদ। ওই দিন তার বড় ছেলে তারেক রহমান, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তাদের সন্তানেরা দেখা করতে পারলেও এবার সেটা হচ্ছে না। কারণ তারেক রহমান (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) স্ত্রী ও মেয়েসহ লন্ডনে অবস্থান করছেন। তবে মরহুম কোকোর স্ত্রী ও দুই কন্যা দেশে রয়েছেন। ২০০৭ সালের কোরবানির ঈদও ওই সাব জেলেই পালন করেন তিনি। তবে এবারই প্রথম সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ঈদ পালন করছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও কারাগারে ঈদ কাটাবেন। তিনিও গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। ওইদিনই তাকে আদালত থেকে সরাসরি নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দী হিসেবে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দী আছেন ৭৪ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনাসভা এবং প্রতিবাদ মিছিল। তবে ঢাকায় একটি জনসভার জন্য চারবার অনুমতি চেয়েও তা পায়নি বিএনপি। অবশ্য গত ২০ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করতে পেরেছে দলটি।
জানা যায়, গত ছয় মাসে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে কারাগারে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবিও জানিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ৫ জুন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে হঠাৎ ঘুরে মাটিতে পড়ে যান খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার এখনো তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এ জন্য পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কারাগারে এটাই চেয়ারপারসনের প্রথম ঈদ নয়। এর আগেও তিনি সংসদ ভবন এলাকার সাব জেলে দুটি ঈদ পালন করেছেন। ওইসময় তার পরিবারের সদস্যরা ঈদের দিন তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। জীবনে দ্বিতীয়বার কারাবন্দী হয়ে চতুর্থবার কারাগারে ঈদ করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, শুধু সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়ায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জালনথির ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার বন্দী রেখেছে। বারবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও নতুন নতুন মামলা ও অজুহাত দেখিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসা না দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলার খড়গ ঝুলছে। কারাবন্দী আছেন হাজারো নেতাকর্মী। প্রতিনিয়ত চলছে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার নির্যাতন। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদ নিয়ে মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো স্বস্তি।
ঈদের দিন বিএনপির কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে রিজভী বলেন, ঈদের নামাজ পরে দলের সিনিয়র নেতারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার জন্য কোনো কর্মসূচি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এ ধরনের কোনো কর্মসূচির খবর আমার কাছে নেই।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখা করতে যাবেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতারা ঈদের নামাজের পর কারাগারে চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছেন। অনুমতি পেলে সাক্ষাৎ করবেন। এ দিকে বিএনপির বহু নেতাকর্মীর ঈদ এবারো কাটবে কারাগারে। দলীয় সূত্রমতে, সারা দেশে দলটির অন্তত দুই হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর ঈদ হবে কারাগারে।নয়া দিগন্ত
Check Also
সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন
ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …