ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ পাঁচ বছর আগের কথা। ট্যানারি মালিকেরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন ৯০ টাকা। পাঁচ বছর পর বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হলেও অর্ধেকে নেমে এসেছে চামড়ার দাম। গরিব-মিসকিনের অধিকার চামড়ার মূল্যের এই নি¤œমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল কয়েক বছর থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ও ট্যানারি মালিকেরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারের সহযোগিতায় পারস্পরিক যোগসাজশে গরিব-মিসকিনদের ঠকাতে একাট্টা হয়েছে স্বার্থবাদী সব পক্ষ। এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রখ্যাত আলেম অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, মহান আল্লাহ পাক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করেছেন। এর মাধ্যমে গরিব-ইয়াতিম-মিসকিনদের স্বার্থটিও তিনি রক্ষা করেছেন। হাজার বছরের ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা কোরবানির পশুর চামড়া কিংবা চামড়ার বিক্রিলব্ধ টাকা গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করি। দেশের অসংখ্য মক্তব, মাদরাসা, এতিমখানার আয়ের অন্যতম উৎস এই কোরবানির চামড়ার লব্ধ আয়।
এসব অসহায় মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের পক্ষে কথা বলার মতো কোনো প্লাটফর্ম নেই। সরকারের সহযোগিতা নিয়ে ফড়িয়ারা নামমাত্র মূল্যে গরিবের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে। ধনীরা কোরবানি দিয়ে গোশত খাচ্ছেন আর গরিবের হক চামড়াগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন পানির দরে। এতে করে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের অনেক ফকির-মিসকিন। এরা এমনিতেই দুর্বল। তাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন আর দরিদ্ররা ক্রমেই গরিব হচ্ছে। ঈদের আগেই চামড়ার দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
তবে চামড়ার দাম কম দিয়ে গরিব মানুষকে ঠকানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্যানার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, চামড়ার দাম তো আমরা নির্ধারণ করি না। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সরকার নিজেই দাম নির্ধারণ করে দেয়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে চামড়ার দাম অর্ধেকে নেমে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, গত বছর কেনা চামড়ার ৪০ শতাংশ এখনো মজুদ আছে, যার গুণগত মান অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক আমাদের যে ঋণ দিয়েছে তা-ও অনিশ্চিত। কারণ গত বছর পাওয়া ঋণ আমরা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি।
জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে পাঁচ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল; কিন্তু সরকার উল্টো পাঁচ টাকা করে কমিয়ে দিয়েছে। এ বছর গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা শহরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম হবে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত বকরির চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছিল সর্বনি¤œ ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। একইভাবে কোরবানির খাসির চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে কমেছে দুই টাকা করে। গত বছর এর দর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। অন্য দিকে কোরবানির বকরির চামড়াতেও এবার প্রতি বর্গফুটে দুই টাকা করে দাম কমিয়েছে সরকার। গত বছর এই দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
গত বছরের চেয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, মূলত দু’টি কারণে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমানো হয়েছে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। দ্বিতীয়ত, সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপিত হলেও এখন পর্যন্ত তা পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি। নানা ধরনের ত্রুটি রয়েছে সেখানে। ফলে সেখানে এখনো ঠিকভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকার চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল বলেন, ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার অর্থ জিম্মি হওয়া নয়। দেশের এই ব্যাপক উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা ব্যবসায়ীদের বন্ধু। সবাই দেশকে ভালোবাসি। তাই ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতেই দর কম করে নির্ধারণ করে দিয়েছি। চামড়ার দাম গত বছরের চেয়েও কমানোর কারণে চোরাচালানের মাধ্যমে তা দেশের বাইরে চলে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।