৫০ভাগ চামড়া পাচারের শঙ্কাঃসাতক্ষীরাসহ সীমান্তে রেড এর্লাটঃসিন্ডিকেটের কবলে চামড়াঃ পানির দামে চামড়া বিক্রি

অাবু সাইদ বিশ্বাসঃ ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ    দাম কম নির্ধারণ করায় চামড়া পাচারের অাশঙ্কা করা হচ্ছে। গত তিন দিনে সীমান্ত অঞ্চল সমূহে অচেনা মানুষের অানাগোনা দেখা যাচ্ছে। সাতক্ষীরা ও যশোরের ৩শ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন বাসা বাড়ি,মসজিদ,হেফজোখানায় চামড়া লবন জাত করতে দেখা গেছে। ফলে যে কোন মুহূর্তে তা পার্শবতি দেশ ভারতে পাচার হতে পারে।

পানির দামে সাতক্ষীরায় চামড়া বেচা কেনা হয়েছে।ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা অার গরুর চামড়া একশ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম না পেয়ে বেশির ভাগ বৃত্তবানরা কওমিয়া মাদ্রাসা সমূহে চামড়া দান করেছে।

ঢাকাতে যে চামড়া এক হাজার থেকে বারশ টাকায় কিক্রি হচ্ছে সাতক্ষীরাতে সে চামড়া ৪শ থেকে ৫শটাকা দাম দিয়েঠে মৌসুমি ব্যবসায়িরা। সিন্ডিকেটের কবলে সাতক্ষীরা,যশোর সহ দক্ষিঞ্চালের চামড়া।

সাতক্ষীরা বাঙ্গালের মোড়ে অবস্থি কওমিয়া মাদ্রাসার কয়েক জন হুজুরের সাথে কথা হয়,তারা জানান, তারা চামড়া সংগ্রহ করছে। কেউ ফ্রি দেচ্ছে অাবার কেউ কিছু টাকার বিনিময়ে কিনে নিচ্ছি।

পাটকেলঘাটা কওমিয়া মাদ্রাসা ,খলিষখালি হাজার পাড়া কওমিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

দেশে চামড়ার দাম কম থাকায় তারা দাম নিয়ে বেশ চিন্তিতিত।

খলিষখালি মঙ্গলানন্দকাটি শত বছরের ঐতিহ্যবাহি ঈদগা।  সেখানে দুই,তিনটা গ্রামের কয়েকশ মানুষ একত্রে পশু কুরবাণি করেন। সেখানকার ঈদগা মাঠের ইমাম মাওলানা মাসুম বিল্লাহ জানান, তার ঈদগা মাঠে ১৮টি গরু ও ২৭টি ছাগল কুরবানি হয়েছে। সব চামড়া গুলা একত্রে বিক্রি হয়েছে সাত্র ৯হাজার টাকা। যা বিগত ৩০বছরের মধ্যে তুলনা মুলক কম।

জেলার চামড়া খাতে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে,ভারতে চামড়ার দাম অনেক বেশি থাকায় পাচারের সম্ভবনা খুব বেশি। তারা মনে করেন বায়ু যেমন শূন্য স্থান দখল করে তেমনি ভারতে চামড়া পাচার হবে স্বাভাবিক। লবন জাত করার পর বেশি চামড়া পাচার হয়ে থাকে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ কোরবানির পশুর চামড়া কেনায় তাড়াহুড়োর পথে হাঁটছেন না আড়তদার কিংবা পাইকাররা।

সাধারণত ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই চামড়ার পাইকাররা তৎপর হন; বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে তারা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে নেন। অনেকেই আবার ঢাকার কয়েকটি স্থানে পাইকারদের কাছেও কাঁচা চামড়া নিয়ে বিক্রি করেন।

কিন্তু এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়া নিয়ে পাইকারদের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের, যাদের একটা বড় অংশ হচ্ছে বিভিন্ন মাদ্রাসা।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের যেহেতু কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের সুযোগ থাকে না, তাই তারা যতটা দ্রুত সম্ভব তা আড়তদারদদের হাতে তুলে দিতে চান। এবার দাম কমাতেই আড়তদাররা চামড়া কেনায় ‘ধীরে চলার’ কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করেন তারা।

তবে আড়তদারদের ভাষ্য, ক্ষেত্রবিশেষে তারা বেশি দামেও চামড়া কিনছেন।

মূলত, ঢাকার বিভিন্ন আড়তদাররা কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সেই চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা।

এবছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা; ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গতবছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বুধবার ওয়ারী এলাকা থেকে ১২টি চামড়া নিয়ে রায়সাহেব বাজারের পাইকারদের কাছে যাচ্ছিলেন মোসলেম উদ্দিন।

তিনি  বলেন, “অন্য বছরের চেয়ে এবার চামড়ার বাজার মন্দা। ওয়ারী এলাকায় ঘুরে ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় তিনি একেকটি গরুর চামড়া কিনেছেন। কিন্তু পাইকাররা এক হাজার টাকার বেশি দাম বলছে না।”

এই দামে চামড়া বিক্রি করলে সারাদিনের পরিশ্রম মাটি তো হবেই, চামড়া পরিবহনের টাকাও পকেট থেকে দিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রায়সাহেব বাজারের চামড়ার আড়তদার সৈয়দ ইকবাল বলেন, এবছর আকার ও মানভেদে একেকটি গরুর চামড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে।

“ট্যানারি মালিকরা ৩৫ টাকা বর্গফুটে চামড়া কিনতে বলেছে। আমরা অনেক সময় ৫০ টাকাও দিয়ে দিচ্ছি।

“তবে গত বছর ১৪০০ টাকায়ও চামড়া কিনেছিলাম। এবছর ১২০০ টাকার বেশি দিচ্ছি না। কিছুক্ষণ আগে ১২০০ টাকা করে ১০টা চামড়া কিনেছি। এগুলো আকারে ২৫-২৬ ফুট হবে।”

সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে ১২০টি চামড়া সংগ্রহ করে বিকাল ৫টায়ও মনে শঙ্কা নিয়ে বসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “এই এলাকায় আরও চামড়া পড়ে আছে। কিন্তু আমি আর কিনতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো ট্যানারি মালিক কিংবা আড়তদার চামড়ার দাম জানতে আসেনি। তারা চামড়ার দাম কমাতে এবছর এমন করছে। আর ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে এই চামড়া নিয়ে রায়সাহেব বাজার, সায়েন্সল্যাব কিংবা লালবাগ এলাকায় রওয়ানা হতে হবে।”

বিকাল ৫টায় মহাখালী রেলক্রসিংয়ের কাছে বায়তুল মাহফুজ জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সংগ্রহে কয়েকশ চামড়া রয়েছে, কিন্তু কোনো ক্রেতা তখনও চামড়া কিনতে আসেনি। ফলে দাম কেমন হবে তা এখনও ধারণা করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্যাহ  বলেন, এবছর ৯০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে গরুর লবণবিহীন কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী এবছর চামড়ার দাম গতবছরের তুলনায় একটু কম।

তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় চামড়ার মান ভালো বলে জানান তিনি।

এদিকে সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্তবর্তী এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে রেড এলাট জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসানো হয়েছে টহল। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি।

কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠছে চামড়া পাচারকারী সিন্ডিকেট। সরকারিভাবে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কম নির্ধারণ হওয়ায় সিন্ডিকেটের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বুধবার (২২ আগস্ট) কোরবানির ঈদের দিন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভিন্ন পাড়া-মহল্লায় তাদের নির্ধারিত এজেন্টের মাধ্যমে চামড়া কেনাচ্ছেন।

তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চামড়ার পাচার ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরইমধ্যে সীমান্তবর্তী ৭ জেলায় কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সাতক্ষীরা ৪ উপজেলার ১২টি পয়েন্টে ঈদ পরবর্তী সময়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরার চামড়াপট্টির ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে চামড়ার অনেক দাম। প্রতিনিয়ত সেখানে নতুন নতুন ট্যানারি গড়ে উঠছে। চাহিদাও বেশি।

তারা বলেন, দেশে চামড়ার দাম কম থাকায় বরাবরের মতো এবারও চামড়া পাচার হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরায় চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য পৃথক মার্কেট বা বাজার নেই। বাড়ির মালিকরা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান ভাড়া দিতে চান না। এজন্য রাস্তার ওপরই চামড়া সংরক্ষণ করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।

চামড়া ব্যসায়ীদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মার্কেট নির্মাণের দাবি জানান তারা।

সাতক্ষীরা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা জানান, এবারও চামড়ার দাম কম হওয়ায় ৫০ ভাগ চামড়া ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা এবছরও অসাধু ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কা তারা। এই সুযোগে ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

যদিও কোরবানির আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, চামড়া পাচারের আশঙ্কা নেই।

খুলনা জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ ক্রাইমবার্তাকে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া ভারতে পাচাররোধে কড়া নজরদারি বসিয়েছেন পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পাচার বন্ধে যা যা করা দরকার পুলিশ প্রশাসন তাই করবে।

Check Also

আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।