FILE PHOTO: Rohingya refugees cross the Naf River with an improvised raft to reach to Bangladesh in Teknaf, Bangladesh, November 12, 2017. REUTERS/Mohammad Ponir Hossain/File Photo

আটক ও নির্যাতনের শিকার রাখাইনে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা

   ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানের মুখে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা রাখাইনে ফিরে গিয়েছিলেন, তাদের আটক ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটির এশীয় অঞ্চলের উপ পরিচালক ফিল রবার্টসনের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এই নির্যাতনই বলে দিচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে প্রত্যাবাসনের আগে সেখানে সরেজমিনে জাতিসংঘের নজরদারিসহ তাদের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা দিতে হবে।

ফিল রবার্টসন বলেন, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার, ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের নির্যাতনে তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছে।

দেশটির সরকার নিরাপদ ও মর্যাদাসহকারে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

রাখাইনে জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে ছয় রোহিঙ্গা নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে তারা বলেছেন, অর্থ উপার্জনের জন্য তারা নিজভূমি রাখাইনে ফেরত গেলে বিভিন্ন সময় দেশটির বার্ডার গার্ড পুলিশ(বিজিপি) তাদের গ্রেফতার করেছিল। পরে তারা ফের বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিচারপূর্ব আটকাবস্থায় তারা নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। বলেন, পরবর্তীতে বিচারের মুখোমুখি করে অবৈধভাবে সীমান্ত পারি দেয়ার অভিযোগে তাদের প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত।

মাসখানেক পর আরো কয়েক ডজনের সঙ্গে তাদেরও ক্ষমা করে দেয় সরকার। চলতি বছরের জুনে কর্তৃপক্ষ তাদের সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে দেখাতে চেষ্টা করে যে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে এবং ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা নিরাপদে আছেন।

ছবি: রয়টার্স

এর পরই ওই ছয় রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মংডুতে বিভিন্ন সময় আটক হওয়া তিন রোহিঙ্গা পুরুষ ও তিন বালকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। বালকদের সর্বোচ্চ বয়স ১৬।

তাদের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে দুই পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসিয়ে আরসা সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা তা জানতে লাথি-ঘুষি মারে ও লাঠি-রড দিয়ে পেটানো হয়েছিল। তথ্য আদায় করতে তাদের বৈদ্যুতিক শকও দেয়া হয়েছিল।

তারা বলেন, আটকাবস্থায় তাদের অপর্যাপ্ত খাবার ও অপরিষ্কার পানি দেয়া দেয়া হয়েছিল। এর পর মংডু শহরে বিচারের আগ পর্যন্ত একটি বন্দিশালায় তাদের স্থানান্তর করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা লাঠি দিয়ে তাদের বেদম পিটিয়েছে। লাথি ও ঘুষি মেরেছে।

ছবি: সংগৃহীত

ওই ছয় রোহিঙ্গা সদস্য বলেন, কারাগারে তাদের নির্মম অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়েছে। এ সময়ে তাদের কোনো আইনজীবী কিংবা বার্মিজ দোভাষীও দেয়া হয়নি। এর পর একটি গ্রুপের সঙ্গে তাদেরও চার বছর কারাদ- দিয়ে মংডুর বুথিডং কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে আরও কয়েক রোহিঙ্গাকে ওই কারাগারে সরানো হয়েছিল।

গত ২৩ মে মংডু জেলা প্রশাসন ঘোষণা করে যে প্রেসিডেন্ট ইউন মিন্ট কয়েক ডজন রোহিঙ্গা বন্দীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এর পর তাদের জাতীয় ভেরিফিকেশন কার্ড(এনভিসি) দিয়ে মুক্ত করে দেয়া হয়।

বহু রোহিঙ্গা এই এনভিসি কার্ড নিতে অস্বীকার করেছেন। কারণ তারা মনে করেন, এতে তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের দাবি খাটো করা হয়েছে।

গত ২৭ মে স্টেট কাউন্সিলর সুচির অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফেরত আসা ৫৮ রোহিঙ্গাকে প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে আরও চার রোহিঙ্গা যুক্ত হন।

কর্মকর্তারা এই ৬২ রোহিঙ্গাকে নাগা খু ইয়া গ্রামের বিজিপি কম্পাউন্ডে নিয়ে যান। তাদেরকে অবশ্যই এনভিসি কার্ড নিতে বলে বলে জানান। যদি তারা বিজিভি কম্পাউন্ড ত্যাগের চেষ্টা করেন, তবে ফের গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

ছবি: সংগৃহীত

এর পর তাদের হ্লা পু কুয়াং ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে বাড়িঘর নির্মাণে অর্থ দেয়া হবে বলে দেশটির সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন ইয়াট আই জানান।

ওই ছয় রোহিঙ্গা বলেন, কর্মকর্তারা তাদের যা কিছু শিখিয়েছেন, গণমাধ্যমের সামনে তা বলতে বলেছেন। গণমাধ্যমকর্মীরা চলে গেলে তাদের ফের বিজিপির পর্যবেক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়। হ্লা পু কুয়াং ত্যাগ করতে তাদের নিষেধ করা হয়। পরবর্তীতে ফের গ্রেফতার নির্যাতনের ভয়ে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।