ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃসাতক্ষীরাঃ দাপটেরর সাথে জেল খাটছেন সাতক্ষীরার সদর অাসনের সংসদের কথিত জামাতা রেজাউল ইসলাম।
গরীবের চাল চুরি করে ধানের গোলার মধ্যে পালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না বহুল আলোচিত ইউপি মেম্বর জনপ্রতিনিধির কথিত জামাতা এসএম রেজাউল ইসলামের। তিনি জেলা কৃষকলীগের কথিত হেবিওয়েট নেতাও বটে। ত্রাণের চাল চুরির পর জনরোষে শিকার হয়ে তিনি একটি ধানের গোলার মধ্যে পালিয়ে গণধোলাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানায়, ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র ১৩ বস্তা চাল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক আক্তার হোসেন।
সদর উপজেলার ব্রক্ষ্মরাজপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বর ও জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম রেজাউল ইসলামের রান্না ঘরের ড্রাম এবং তার নিকট আত্মীয়ের বাড়ি থেকে এ চাল উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও এলাকার ঋষিপাড়ায় বিক্রয় করা চালও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষে এলাকার হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জোর করে ভাগ করে নিয়ে আসেন ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম। এলাকায় নিয়ে এসে চাল ৭ থেকে ৮ কেজি করে বিতরণ করে বাকি চাল নিজ বাড়ি এবং নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। কিছু চাল পাশের ঋষি পাড়ায় বিক্রয় করেন। বিষয়টি জানজানি হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার হোসেন অভিযান পরিচালনা করে ইউপি সদস্যের বাড়ির রান্না ঘরের ড্রামের মধ্য থেকে কিছু চাল এবং ঋষিপাড়ায় বিক্রয় করা চালও উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার সহকারি কমিশনার (রাজস্ব শাখা) মো. আক্তার হোসেন বলেন, সরকারি চাল আত্মসাতের অভিযোগে ইউপি সদস্য রেজাউলের বাড়িতে অভিযান চালনো হয়। এ সময় তার বাড়ি ও তার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ১৩ বস্তা ভিজিএফের চাল উদ্ধার ও রেজাউল ইসলামকে পুলিশ আটক করেছে বলে তিনি জানান। এলাকাবাসি জানান, অভিযানের খবর পেয়ে ইউপি মেম্বর রেজাউল ইসলাম স্থানীয় প্রতিবেশির ধানের গোলার মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। কিন্তু পুলিশ তার অবস্থান টের পেয়ে ওই গোলাঘরের মধ্য থেকে গ্রেপ্তার করে।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তার বাড়ি থেকে ১৩ বস্তা সরকারি ভিজিএফ’র চাল উদ্ধার করা হয়েছে। চালগুলো বিতরণ না করে আত্মসাতের জন্য রেখে দিয়েছিলেন বলে ওসি জানান। ওসি আরো জানান, ইউপি সচিব বাদী হয়ে এ ঘটনায় ওই দিনই রেজাউল ইসলামসহ তিনজনের নামে থানায় ৪০৯ এবং ৪২০ ধারায় মামলা করেছেন। যার নং ৬১।
এদিকে এলাকাবাসি আরো জানান, ইতোপূর্বে এসএম রেজাউল ইসলাম সদরের একজন জনপ্রতিনিধির জামাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও ব্যক্তির নিকট থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এছাড়া ওই জনপ্রতিনিধির বিশেষ কোটায় বরাদ্দ থেকে এলাকার শ্মশানঘাট, মন্দির, ভূয়া ক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। এসব টাকা দিয়ে সে টিন শেডের ঘরে এসি লাগিয়েছে। ঘনঘন নিজের এবং ছেলের মটরসাইকেলের মডেল পরিবর্তন করে লর্ড স্টাইলে চলাফেরা করেন। সূত্র আরো জানায়, তার স্ত্রী তহমিনা খাতুন মনি মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয় দিয়ে এলাকায় ব্যাপক দাপট দেখান। তার দাপটে এলাকাবাসির টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তার ছেলে ফজলে রাব্বি শাওন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তার দাপটেও এলাকাবাসি থরথর। একজন জনপ্রতিনিধির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসএম রেজাউল ইসলামও তার স্ত্রী-সন্তানেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চাঁদাবাজি দুর্নীতির মাধ্যমে চালায় নানা অপকর্ম। অপর এক সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বেতনার তীরে সরকারি জমি ইজারা নিয়ে পরবর্তীতে কাগজ টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন। এতে বেতনার চর গিলে খেয়েছে মেম্বর রেজাউল ইসলামসহ অন্যরা।