সরকারের আচরণে নির্বাচন নিয়ে ক্রমেই শংকা বাড়ছে

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৩ মাস বাকি। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে নির্বাচনী উত্তাপ নেই বললেই চলে। নির্বাচন নিয়ে সরকার-বিরোধীপক্ষ মাঝেমধ্যে বক্তৃতা বিবৃতি দিলেও এ মুহূর্তে দেশবাসীর মাঝেও ভোটের কোনো আগ্রহ নেই। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর বড় অংশ ব্যস্ত মামলা-হামলা মোকাবেলা নিয়ে। বিরোধী জোটকে হামলা মামলায় ব্যস্ত রেখে ২০১৪ সালের ন্যায় একতরফা নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা এখনো বলছে, তাদের অধীনেই সংসদ নির্বাচন হবে। বিরোধীদের সাথে কোনো সংলাপ হবে না। কে নির্বাচনে আসলো সেটি দেখার বিষয় নয়। একইসাথে সরকারি দল আবারো ওয়ান ইলেভেনের আশঙ্কা করছেন। এটিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা কু-মতলব হিসেবে দেখছেন।  বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারি দল এটাকে অগ্রাহ্য করে বলছে ক্ষমতাসীনদের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পাশাপাশি এখন নতুন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও যোগ হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার এবং তাদের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ক্ষমতাসীনরা নির্ধারিত সময়ে সংবিধান মতে নির্বাচনের কথা বললেও আদৌ নির্বাচন হবে কি না- তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। সবার চিন্তা নির্বাচন হবে তো? কেমন নির্বাচন হবে? ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি হবে না তো?

অনেকে বলছেন, বছরখানেক আগে আওয়ামী লীগের মধ্যে নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মনোভাব ছিল। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘কথিত’ দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর পর সরকারের চিন্তায়ও পরিবর্তন আসে। কেউ কেউ বলছেন, গত বছরের শেষের দিকে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে সরকার কারো সঙ্গে আলোচনা করবে না। যার ইচ্ছা নির্বাচনে আসবে, যার ইচ্ছা হবে না আসবে না, ক্ষমতাসীন দলের এমন মনোভাব প্রকাশের পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তাই এক বছর আগের দৃশ্যপট এখন আর নেই। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নির্বাচনের চিন্তাভাবনা ক্ষমতাসীন দলের এখন আর নেই বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তারা আবারো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। এজন্য যা যা করার সবই তারা করবে।

জানা গেছে, সেপ্টম্বরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবি নিয়ে রাজপথে নামবে। তখন সুযোগ বুঝে ব্যবস্থা নেবে সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, তখন অবস্থা যদি সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়, সেটি যদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তাহলে তৃতীয় পক্ষের হাতে ক্ষমতা দিতে চাইবে আওয়ামী লীগ। যুক্তি হিসেবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে সামনে আনছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত ১৬ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আবারও বাংলাদেশে ১/১১-এর মতো ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। যারা রাজনৈতিক বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল, তাদের সহযোগী ছিল মিডিয়ার একটি অংশ। সেই মিডিয়া একটি দলের উসকানিতে শেখ হাসিনার সরকারকে হটানোর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। ১৮ আগস্ট শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত ‘গুজব সন্ত্রাস-অপপ্রচার রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা জানি আন্দোলন করার চক্রান্ত চলছে। গোপনে গোপনে দেশে-বিদেশে এ নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ঠ সতর্ক ও প্রস্তুত আছি। এর আগে গত ৭ আগস্ট ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি ও এক-এগারোর কুশীলবরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে যখন শান্তিময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন এক-এগারোর কুশীলবরা রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে। বিএনপি ওয়ান-ইলেভেনের সেই কুশীলবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন কোনও ষড়যন্ত্রের জাল বোনা যায় কিনা, সেই গোপন চক্রান্ত করে যাচ্ছে।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সেজন্য তারা বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলে সমস্যা তৈরি করে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সব বাধা অতিক্রম করে খালেদা জিয়াকে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমরা। আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আরেকটি চক্রান্ত করছে। সেই চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশে আরেকটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে গণতন্ত্র পুনরায় ফিরিয়ে আনার পথ রুদ্ধ করতে চায় তারা। আমি আগেও বলেছি, ১/১১ সরকারের সুবিধাভোগী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা ক্ষমতায় এসে ১/১১-এর কুশীলবদের ক্ষমা করে দিয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগই এ ধরনের চক্রান্ত করে। এখন তারাই আরেকটি চক্রান্ত করছে যাতে দেশে গণতন্ত্র ফিরে না আসে। তিনি আরও বলেন, ১/১১-এর মধ্যে বিএনপিকে টেনে আনা মানেই হচ্ছে এখানে আওয়ামী লীগের কোনও কু-মতলব আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বরাবরই বলছি সংলাপ ছাড়া কোনও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ মুখে এ বিষয়ে দুই-একটি কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা করেন যেন বিএনপি না আসতে পারে।

সূত্র মতে, অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনও অক্টোবরেই তফসিল দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন হলেও তাতে বিএনপি অংশ নেবে কিনা? বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে না এলে কী হবে? সেই সাথে দেশবাসীর প্রশ্ন, নির্বাচন না হলে কী হবে? এ মুহূর্তে এসব প্রশ্নের কাক্সিক্ষত উত্তর কারো জানা নেই। তাই এ নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের আচরণে নির্বাচন নিয়ে ক্রমেই শংকা তৈরী হচ্ছে। কারণ তারা বিরোধীদলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে হাস্যকর মামলায় কারাগারে আটক করে রেখেছে। উচ্চ আদালতে জামিন হলেও কথিত গাড়ি পোড়ানো মামলা, আদালত অবমাননাসহ হাস্যকর মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। জামিন নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা। বিএনপি বলছে, সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্ত হতে দিচ্ছে না। সরকারের নির্দেশেই আদালত রায় দিচ্ছে।

সূত্র মতে, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে থাকার পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাকে উন্নত চিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কারা কর্তৃপক্ষও চিঠি দিয়েছে। সরকারের উদ্যোগের অভাবে বেগম জিয়ার জীবন নিয়েই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এর মধ্যে নতুন করে আলোচনায় টেনে আনা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয়গ্রহণ, নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট ইস্যু। মূলত এর পেছনে আগামী নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দূরে রাখাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য বলে দাবি করছে বিএনপি। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ও দেয়া হবে খুব শীঘ্রই। পধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের অনেকেই বলেছেন, এই হামলার সাথে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান জড়িত। রায়ের আগে সরকারের এমন ঘোষণার প্রভাব আগামী রাজনীতিতে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির জোটভুক্ত এবং জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। দেশের সাধারণ জনগণ চাচ্ছেন, শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক এ সংকটের উত্তরণ। তবে সেটা কোন পথে হবে, আদৌ হবে কিনা- সেই অনিশ্চয়তা কোনোভাবেই দূর হচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ গত বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের বৈঠকে নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বারবার। সবাইকে নিজ যোগ্যতায় আগামী নির্বাচনে পাস হয়ে আসতে হবে। দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি কারো দায়িত্ব নেবেন না বলেও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন ওই সময়। এমনকি নির্বাচনী ইশতেহারও তৈরির আগাম প্রস্তুতি চলছিল। অথচ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও সেই তৎপরতা এখন আর নেই। নির্বাচনের বছরে তাদের প্রস্তুতিতে ভাটা পড়েছে। যদিও দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এখনো জনসভায় নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। কিন্তু দলের অন্য নেতাদের মধ্যে নির্বাচনের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমনকি শোনা যাচ্ছে, নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা ও বর্তমান এমপি-মন্ত্রী। নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থাকার পক্ষে অনেকে। তাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মতো তাদেরকে ‘যেনতেনভাবে’ ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ করে দেবেন। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে- তাও জানা নেই আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের।

সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো যেনতেন একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির বেশিরভাগ নেতাই সেটা চাচ্ছেন। তারা আশা করছেন, তাদের নির্বাচনী তরী পার করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসা এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। ‘শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, ততদিন তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে।’ দলটির সাধারণ সম্পাদক ও এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যে সেই মনোভাবই স্পষ্ট হয়েছে বলে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন।

এদিকে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও শারীরিক অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে শঙ্কা ও ক্ষোভের সঞ্চয় হয়েছে। গোটা জাতি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে দাবি করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রীর জীবন সংকটের মুখে রেখে চিকিৎসার নামে টালবাহানা কোনোভাবেই ভালো চোখে দেখছেন না দলটির নেতাকর্মীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাইরে রেখেই নির্বাচন করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে নানা ধরনের ছকও তৈরি করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে বর্তমানে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে তারেক রহমানকে মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাত বছরের ও জিয়া অরফানেজ মামলায় ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই তাদের বিরুদ্ধে চলমান আরো একাধিক মামলার রায় হতে পারে। সাজা হওয়ায় মা ও ছেলে উভয়কেই নির্বাচনে অযোগ্য করা হতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখা গেলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও দলের দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দিয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না-ও যেতে পারে। এতে আওয়ামী লীগ আগের মতো একতরফা নির্বাচনে কোনো বাধা ছাড়াই আবারো ক্ষমতায় থাকতে পারবে। অন্যদিকে বিএনপি যদি দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দিয়েই নির্বাচনে আসতে রাজি হয়, তবে ওই নির্বাচনে নেতাকর্মীদের আর তেমন কোনো আগ্রহ থাকবে না। ফলে এমনিতেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আবারো সরকার গঠন করতে পারবে বলে তাদের বিশ্বাস।

স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে না থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন  কীরকম হবে- সেটা নিয়ে সংশয় আছে। তাই আগেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জনসংযোগ ও ভোটের আশায় নানা খাতে অর্থ খরচে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তারা আরো অন্তত এক মাস দেখতে চান। অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তারা।

এদিকে নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্য নিয়ে নানা তৎপরতা আছে। ড. কামাল হোসেন এবং বি চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে। সেখানে বিএনপি থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। তবে তাদের ওই জাতীয় ঐক্যজোটের নেতৃত্ব কে দেবেন- তা এখনো অমীমাংসিত। মূলত সেই জোট ও আন্দোলন কেমন হবে সে দিকেই এখন দৃষ্টি দেশবাসীসহ আন্তর্জাতিক মিত্রদের। আবার অনেকেই বলছেন, ভোটারহীন এই দলগুলোর সাথে জোট করে বিএনপির তেমন কোনো লাভ হবেনা। হয়ত পরিচিত কিছু লোককে তাদের পক্ষে আনতে পারবে।

অপরদিকে বাম দলগুলোও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার কথা বলছে। এর বিপরিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের পরিধি আরো বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। যদিও আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে আগেই কাজ শুরু করেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নেয়? তাদের এবং তাদের শরীকদের রাজনৈতিক তৎপরতা কোন দিকে যায়? তা দেখেই আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচনের আগে সরকার দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দিতে চায় না- যা নতুন কোনো সংকটের তৈরি করে। এজন্য নানা ধরনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মনিটরিংকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।